সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে শিশু সাদমান সাকির মুক্তিপণ চাওয়া আসামী কিভাবে খালাস পায় সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন শিশুটি নিখোঁজের ১০ মাস পর কেন তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে বক্তব্য দিচ্ছেন নিখোঁজের বাবা ওমর খালেদ এপন। এমন প্রশ্ন রেখে সাংবাদিকদের প্রতি তিনি অনুরোধ রেখে বলেছেন সঠিক সংবাদ প্রকাশ করতে এবং নিখোঁজ শিশুর মুল ঘটনা উদঘাটনে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান রেখেছেন।
শিশু সাদমান সাকি নিখোঁজের বিষয়ে গত ১৬ মার্চ শনিবার এক মানববন্ধনে নিখোঁজের বাবা সৈয়দ ওমর খালেদ এপন তার বক্তব্যে কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলকে জড়িয়ে বক্তব্য রাখা ও তা পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন নাজমুল আলম সজল। তিনি দাবি করেছেন সাকির বাবার সঙ্গে তার কোন ধরনের শত্রুতা নেই। তিনি আরও প্রশ্ন রেখেছেন, নিখোঁজের পর মামলায় অভিযোগে সজলের নাম আনা হয়নি। তিনজন গ্রেপ্তার হওয়া আসামীও সজলের নাম বলেনি। তিনজন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনেও সজলের নাম আসেনি। কিন্তু ১০ মাস পর কেন সাকির বাবা এপন মানববন্ধন করে সজলের নাম বলছেন সে বিষয়েও তিনি প্রশ্ন রেখেছেন।
১৮মার্চ বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল বলেন, ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক দেড়টায় এপনের ছেলে সাকি তার বাসার সামনে তার ভাতিজা তাসিমের সাথে খেলাধুলা করছিল। ওই সময় সাকির বাবা এপন বাসায় ছিলেন। ওই সময় এপনের ভাই সৈয়দ সাদিম আহমেদ তার ছেলে তাসিমকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার সময় তার ছেলেও বাসায় দিয়ে যায়। আনুমানিক দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের সময় বাসা হতে বের হয়ে তার ছেলেকে খোজাখুজি করে। পরবর্তীতে সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
তিনি জানান, এজাহার পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। মামলায় দুজন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রস্তম আলী ও এসআই শামীম হোসেন এবং পরবর্তীতে পিবিআই এর কর্মকর্তা আশরাফুল আলম তদন্ত করেন। তদন্ত কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে উল্ল্যেখ করেন, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সন্ধিগ্ধ আসামী জিল্লুর রহমান, সোহেল আহমেদ অররা ওও আবদুর রহমান তপনকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে সাক্ষ্য প্রমান না পাওয়া উক্ত মামলায় গত বছরের ১ জুন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল বলেন, সাকির বাবা এপন তার দায়েরকৃত অভিযোদে কোথাও আমার নাম বা আমার সংশ্লিষ্টতা উল্ল্যেখ করে নাই। এমনকি সন্দিগ্ধ ৩ জন আসামী যাদেরকে আদালত হতে রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল তারাও কোথাও আমার সংশ্লিষ্টতা উল্ল্যেখ করে নাই। গ্রেপ্তারকৃত সোহেল আহমেদকে অররা রিমান্ড চাওয়ার সময় তার ফরোয়াডিংয়ে উল্লেখ করা হয় যে, উক্ত আসামী ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে অভিযোগকারী ওমর খালেদ এপনের মোবাইলে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে এবং ওইদিন আসামীর দেয়া মোবাইলে সাড়ে ৪ হাজার টাকা বিকাশেও পাঠায় এপন। কিন্তু পরবর্তীতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়ায় খালাস পায়।
নাজমুল আলম সজল বলেন, এখন আমার প্রশ্ন হলো আসামী ধরার পর টাকা চাওয়ার পরও এবং আসামীর নম্বরে টাকা বিকাশ করার পরেও কিভাবে উক্ত আসামীরা খালাস পায়? নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল হওয়ার পূর্বে মামলাটি আরো অধিক তদন্তের জন্য পিবিআই এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই এর উপ-পুলিশ পরিদর্শক আশরাফুল আলম আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং মোট ৭ জন সাক্ষীর জবানবন্ধি লিপিবদ্ধ করে এবং চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে গত বছরের ১২ জুন।
নাজমুল আলম সজল বলেন, চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিলের দীর্ঘ ৪ মাস পর নিখোঁজ শিশুর বাবা এপন আমার বিরুদ্ধে অযাচিতভাবে আমাকে হেয় করার জন্য এবং আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার অসৎ উদ্দেশ্যে একটি মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে তার ছেলে সাকির বিষয়ে আমাকে দায়ী করে। প্রথম মানববন্ধনে সাকির বাবা এপন তার বক্তব্যে বলেছিল যে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়াতে তাকে নাকি আমি হুমকি প্রদান করেছিলাম এবং নির্বাচন থেকে সড়ে না দাড়িয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তার ছেলে সাকিকে আমি অপহরণ করি।
এমন অভিযোগের বিষয়ে সজল বলেন, ১৬নং ওয়ার্ডে ৭ জন প্রতিদ্বন্ধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর। নির্বাচনে আমি ৪ হাজার ৮’শ ৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হই। যেখানে ওমর খালেদ এপন ভোট প্রাপ্ত হয় ১২০টি এবং তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। তার সাথে কিভাবে আমার শুত্রুতা হয় বোধগম্য নয়। তার সাথে যদি আমার শুত্রুতাই থাকে তাহলে তার অভিযোগের প্রথমেই তো আমার নাম থাকার কথা কিন্তু ১০ মাস পরে কেন?
সাকির বাবা এপনের ওই বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি সদর মডেল থানায় লিখিত দেন বলেও দাবি করেন সজল এবং ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর এপন প্রথম মানববন্ধন করে। মানববন্ধনের পর একজন সাংবাদিকের সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তার কথাও যার অডিও রেকর্ড তিনি সাংবাদিকদের শোনান। সংবাদ সম্মেলনে অহেতুক হয়রানির চেষ্টা ও সুনাম ক্ষুন্ন না করতে সাংবাদিকদের প্রতি সঠিক সংবাদ প্রকাশের জন্য অনুরোধ জানান জনপ্রিয় এই কাউন্সিলর।
জানাগেছে, গত ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে ঘরের বাহিরে খেলতে গিয়ে দেওভোগ কাঠের দোতলা বড় মসজিদ এলাকা থেকে শিশু সাদমান সাকি নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পর ১৩ দিন পর নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিখোঁজের বাবা সৈয়দ ওমর খালেদ এপন একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
এর আগে গত ১৬ মার্চ শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এক নিখোঁজ সাকির উদ্ধার চেয়ে এক মানববন্ধনে সৈয়দ ওমর খালেদ এপন বক্তব্য দেন তার ছেলে নিখোঁজের পিছনে শামীম ওসমানের লোকজন জড়িত। কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলের নাম উল্লেখ্য করে এপন দাবি করেন সজলরাই তার ছেলেকে অপহরণ করেছে। তারা শামীম ওসমানের লোক হওয়ায় পুুলিশ তাদের ধরছেনা।
তবে ওই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন রফিউর রাব্বী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সেক্রেটারি আবদুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবদুল কাদির সহ বেশকজন যারা মুুলত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ঘনিষ্ঠ লোকজন হিসেবে পরিচিত। আর শামীম ওসমানের সঙ্গে মেয়র আইভীর রাজনৈতিক দ্বন্ধ রয়েছে। যেখানে নাজমুল আলম সজল রাজনীতি করেন শামীম ওসমানের সঙ্গে।
নিখোঁজের বাবার ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ১৭ মার্চ রবিবার বিকেলে বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে প্রতিবাদ করেছে এসোসিয়েশন। প্রতিবাদ সভায় হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কবির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৬নং ওয়ার্ডের জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন কাউন্সিলর। কিন্তু ১৭ মার্চ রবিবার স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সাদমান সাকি নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে মানববন্ধনে নিখোঁজের বাবা এপনের যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিত।
এখানে উল্লেখ্যযে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সাফায়েত আলম সানির বড় ভাই নাজমুল আলম সজল। এর আগে নাজমুল আলম সজল শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে শেখ সাফায়েত আলম সানি সারাদেশের মধ্যে তিনিই একজন ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে কোন ধরনের বিতর্কের বাহিরে থেকে দায়িত্ব শেষ করেছেন। তাদের আরেক ভাই মাহাবুবুর রহমান চঞ্চল ছাত্রলীগে দায়িত্বশীল নেতা ছিলেন। আওয়ামীলীগের একট রাজনৈতিক পরিবার। এই তিন কৃতি রাজনীতিকের বাবাও একজন আওয়ামীলীগ নেতা ও জনসেবক ছিলেন। বিতর্কের বাহিরে থেকেই তারা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে আসছেন। যেখানে নারায়ণগঞ্জে ছাত্র সমাজের আইডল হিসেবে খ্যাতি পেযেছেন সাফায়েত আলম সানি।