সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
আগামী ৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের ৭জন নেতা দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। যেখানে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন প্রবীণ রাজনীতিক সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা যাকে এক নামে ‘সামসু ভাই’ হিসেবে সম্বোধন করেন। একজন সহজ সরল ও সাদাসিদে মানুষ তিনি।
দীর্ঘ কয়েক যুগের রাজনীতিতে তার বিরুদ্ধে কোনো ধরণের বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ ওঠেনি। সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ী ভুমিদস্যূ, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, বখাটে, ইভটিজার এমন ধরণের কোনো ব্যক্তিকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ারও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ওঠেনি। দীর্ঘ ১২ বছর নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার একমাত্র আয়ের উৎস আইন পেশা। সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক হওয়ার আগেও তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ধরণের অভিযোগের অঙ্গুলী ওঠেনি।
স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের দাবি- যে ৭জন দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার ব্যক্তিগতযোগ্যতা ও রাজনৈতিক অবদান সবার চেয়ে বেশি। কিন্তু সেক্ষেত্রে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া একজন স্বচ্ছ রাজনীতিক। এবার প্রবীণ এই নেতার মুল্যায়ন চায় সোনারগাঁবাসী। উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার বিষয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করছেন। তারাও চায় সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া যদি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন তাহলে সোনারগাঁবাসী কাঙ্খিত সেবা পাবে। কিন্তু যারা অতীতে বালু মহাল দখল, মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়, সন্ত্রাসী টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটিয়েছেন এমন কেউ চেয়ারমান হলে সোনারগাঁবাসীর কপাল পুড়বে।
অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার ব্যক্তি জীবন ও রাজনৈতিক সম্পর্কে জানাগেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ১৯৪৯ সালের ৩ এপ্রিল সোনারগায়ের নিজ পৈত্রিক বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৪সালে ঐতিহ্যবাহী বারদি হাইস্কুল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৬৬ সালে তোলারাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে তোলারাম কলেজ বিজ্ঞান পরিষদের জিএস নির্বাচিত হন।
এরপর তিনি ১৯৬৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঐতিহাসিক ১১ দফা ছাত্র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সমগ্র ঢাকা জেলায় তৎকালীন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীর জয়লাভের পক্ষে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধু কর্তক ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে ভাষণের এলাকায় বঙ্গবন্ধুর নৈকট্যে থেকে ছাত্রলিগের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঢাকাসহ দেশের অভ্যন্তরে ছাত্র ও যুব সমাজকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকা গ্রাম-গঞ্জে পৌঁছে দেয়া ও বিভিন্নস্থানে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে তথায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হিসাবে যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু কত্রিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষে এপ্রিলের শেষদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আগরতলা মুক্তিযোদ্ধা প্রশক্ষণ কেন্দ্র ‘‘গোকুল নগর ইয়থ ক্যাম্প’’ এ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে প্রায় ৮০ হাজার যুবকের মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং প্রদান করেন।
তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত ছাত্রলীগের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৭ সালে সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সোনারগাঁ সমিতি, সোনারগাঁ আইনজীবী সমিতি ও সোনারগাঁ প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের প্রাক্তন প্রচার সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, এডহক কমিটির সদস্য ও বর্তমানে কার্যকরী সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন করার সময় তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালীন সময় কারাবরণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে শাহাদাৎ বরণ করার সংবাদ প্রাপ্তির পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন বাংলাদেশে প্রথম জেলার ছাত্র সমাজকে নিয়ে উক্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় সর্বপ্রথম তৎকালীন সেনাবাহিনী কর্তক গ্রেপ্তার এবং দীর্ঘদিন শারীরিক নির্যাতনের শিকার, স্ত্রী ও পরিবারের সকল সদস্যকে অমানবিক হয়রানি ও নির্যাতন ভোগ করতে হয়।
একান্ত নিরুপায় হয়ে ভূঁইয়াকে স্ত্রী সহ অন্যান্য সদস্যদের অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছিল। সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া নারায়ণগঞ্জ টাউন কো-অপারেটিভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান, রেডক্রিসেন্টের আজীবন সদস্য।
১৯৫০ সালে নিজপিতা কর্তক প্রতিষ্ঠিত পরমেশ্বরদি সিনিয়র মাদ্রাসার তিনি নির্বাচিত সভাপতি। নারায়ণগঞ্জ উত্তর চাষারা বড় মসজিদ ও মাদ্রাসা মসজিদ কমিতিরও তিনি নির্বাচিত সভাপতি। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু কত্রিক প্রতিষ্ঠিত ‘’বাংলার বানি’’ পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে বন্ধের পূর্ব পর্যন্ত উক্ত পত্রিকার সাংবাদিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ঐ সময় প্র্য়াত নেতা শেখ ফজলুল হক মনি ও জনাব শেখ ফজলুল হক মনির ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন।
এ ছাড়া তিনি দৈনিক আজকের জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদকন্ডলির সদস্য, দৈনিক প্রভাত পত্রিকার স্টাফ রিপোরটার, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও বজ্রকন্ঠ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ১৯৭২ সন থেকে ১৯৭৫ সন পর্যন্ত আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম শামসুজ্জোহার একান্ত সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও স্নেহের কর্মী হিসাবে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সান্নিধ্যে আসা একত্রে খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা এবং ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুর নিকট সু-পরিচিত ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু কত্রিক বিশেষ প্রশিক্ষণের জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে রাশিয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হন।
তিনি নারায়ণগঞ্জের সাবেক সরকারী ও ভিপি কৌসুলি এবং অগ্রণী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের লিগ্যাল এডভাইজার। ২০০৩ সালে তিনি স্ব-পরিবারে পবিত্র হজব্রত পালন করার সময় (তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রি) বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌভাগ্যক্রমে মদিনার কাছাকাছি একটি হোটেলে গিয়ে সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ হয়। সেখানে সদ্য প্রয়াত ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
একই সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাথে লিফটে নেমে পায়ে হেঁটে তাঁকে মসজিদ-এ-নববিতে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন। সাংবাদিক হিসাবে তিনি শ্রীলংকা, সিংগাপুর, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সফর করেন। সামসুল ইসলাম ভূঁইয়ার পিতার নাম আলহাজ তোরাব আলী ভূঁইয়া সোনারগাঁ উপজেলাধীন নোয়াগাও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসাবে প্রায় ১২ বছর অতি সুনামের দাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার সহ-ধর্মীণি অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ শিরিন বেগম বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের নির্বাচিত সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য। তাছাড়া তার প্রতিষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্বরত আছেন।