সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রাজনীতি আবারো এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে দেখালেন তার রাজনৈতিক কারিশমা। কাউকে অপরাজনীতির মাধ্যমে প্রতিহত করে নয়, রাজনৈতিক কৌশলে তিনি সোনারগাঁয়ে শক্ত অবস্থানে ফিরে আসলেন। অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া আওয়ামীলীগের রাজনীতি করলেও স্থানীয় জাতীয়পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সঙ্গে বেশ সখ্যতা রয়েছে। দুই রাজনীতিকের শিখরও একই স্থানে। বিগত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দূরত্ব থাকায় অতীতে এমপি খোকার উন্নয়নমুলক কাজগুলোতে অনেক ব্যাঘাত সৃষ্টি হতো। কিন্তু এবার এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান একই ঘরনার হওয়ার কারনে সোনারগাঁয়ের উন্নয়নমুলক কাজগুলো হবে দ্রুত গতিতে। স্থানীদের দাবি এমনটাই।
স্থানীয়রা জানান, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে কেন্দ্রীয় হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনায় হামলা ভাংচুরের ৭টি মামলা হয়। ওই সব মামলায় নিজ দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলায় কৌশলে আসামি করা হয় বলে দাবি ওঠে। করোনাকালে কোর্ট বন্ধ থাকায় জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা জামিন নিয়ে এলাকায় আসতে পারেনি। এমনকি করোনাকালে লাশ দাফন কাফনে স্বেচ্ছাসেবী টিমের সদস্যরাও আসামি হয়ে আত্মগোপনে ছিলেন।
সম্প্রতি দুই দফায় অর্ধশতাধিক জাতীয়পার্টির নেতাকর্মী উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। জামিন পেয়ে আবারো এমপি খোকার সঙ্গে উন্নয়নমুলক কাজগুলোতে সক্রিয় হচ্ছেন। উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে সমর্থন জানিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদের সামনে শোডাউনও করেছে জাতীয়পার্টির হাজার হাজার নেতাকর্মী। এর আগে নেতাকর্মীরা আসামি হয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। দুু‘একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। ভীত হয়ে ওঠেছিল জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা। কিন্তু জাতীয়পার্টি কৌশলে শান্ত থেকে আইনগতভাবে মামলাগুলো মোকাবেলা করে আসছে।
সেই পরিস্থিতির অবসান হয়েছে এবার। সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া। ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া বাদে আর কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। ফলে এখন চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়াটা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমানও গিয়েছেন সোনারগাঁয়ে।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম। একই সঙ্গে ছিলেন যারা নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন তারাও। কায়সার-কালামের বিরোধী বলয়ের নেতা জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু উপস্থিত ছিলেন।
গোপন সূত্রে জানাগেছে, জেলার দুজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে নিয়ে মাঠে নামেন। সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার দীর্ঘ ৫৭ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস ও দলের প্রতি তার অবদান, ত্যাগ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরার ব্যবস্থা করেছেন দুই এমপি। একজন সৎ যোগ্য ও ত্যাগী নেতার বিশাল রাজনৈতিক ইতিহাসের চিত্র প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌছে দেয়া হয়। ফলে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকেই নৌকা প্রতীকে মনোনিত করেন প্রধানমন্ত্রী। সামসুল ইসলামের মত সৎ যোগ্য ও ত্যাগী নেতা নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর এই নির্বাচনে প্রার্থী না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা ও পৌর জাতীয়পার্টি। একই সঙ্গে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন ঘোষণা দিয়েছে জাতীয়পার্টি। ফলে আবারো সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে ঘটলো ইউটার্ণ।