সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জুয়া খেলে সেই টাকা হারায়। পরে অক্টো রিক্সা ছিনতাই করতে গিয়ে শাহাবুদ্দিন শেখকে হত্যা করা হয়। সেই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী রাকিবকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। ৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তথ্য জানান র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
তিনি জানান, গত ২৭ মে ২০২০ মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী থানাধীন আড়িয়ল ইউনিয়নের উত্তর কুড়মিরা নামক এলাকায় একটি পরিত্যক্ত বাড়ীর জঙ্গলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। উক্ত ঘটনার খবর পাওয়ার পর গত ২৭ মে ২০২০ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মোঃ আবুল শেখ নামক এক ব্যক্তি গলাকাটা অর্ধগলিত লাশটি দেখে লাশটি তার ছেলে শাহাবুদ্দিন শেখ বলে সনাক্ত করে।
উক্ত ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরূদ্ধে নিহতের বাবা মোঃ আবুল শেখ বাদী হয়ে টংগিবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-১৪, তারিখ-২৭/০৫/২০২০। এই ঘটনার পর সারা মুন্সীগঞ্জের জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা এই হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করে। নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবাসী হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে জেলার বিভিন্ন স্থানে মানব বন্ধন করে। এই ঘটনা স্থানীয় সকল গণমাধ্যমে সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয় ও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
উল্লেখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে র্যাব-১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল উক্ত ক্লু-লেস ও লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সহযোগী ও অন্যতম আসামী মোঃ ইলিয়াস শেখ (৩২), পিতা- মৃত সায়েদ শেখ, গ্রাম- মধ্যনেত্রাবতি, থানা- টংগিবাড়ি, জেলা- মুন্সীগঞ্জকে সনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
উক্ত আসামী কর্তৃক ১৬৪ ধারায় প্রদেয় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী উক্ত হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মোঃ রাকিব (২৬), পিতা- মীর হোসেন মুন্সী, গ্রাম- পয়সা বেজগাঁও, থানা- লৌহজং, জেলা- মুন্সীগঞ্জ ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল। পরবর্তীতে ছায়া তদন্ত ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার দীর্ঘ ১ বছর ৪ মাস পর র্যাব-১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল কর্তৃক ৭ অক্টোবর ২০২১ তারিখ রাতে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানাধীন দূর্গম এলাকার শালবনে অভিযান চালিয়ে উক্ত ক্লু-লেস ও লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামী মোঃ রাকিব’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
রাকিবের মামা ইলিয়াস শেখ ব্যবসার জন্য কোন একটি এনজিও থেকে ২৫ হাজার টাকা লোন নেয় এবং লোভে পড়ে জুয়া খেলে উক্ত টাকা হারায়। অতঃপর রাকিব ও ইলিয়াস উক্ত লোন পরিশোধ করার জন্য ইজিবাইক ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ মে ২০২০ তারিখ সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাল শাস ক্রয় করার কথা বলে একটি ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক ভাড়া করে। অতঃপর রাকিব ও ইলিয়াস পরস্পর যোগসাজশে ছিনতাই ও হত্যা করার উদ্দেশ্যে ইজিবাইক চালক শাহাবুদ্দিন শেখ’কে কৌশলে মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী থানাধীন আড়িয়াল ইউনিয়নের উত্তর কুড়মিরা নামক এলাকায় জনৈক হাজী হাসেম হালদার এর পরিত্যক্ত বাড়ীর জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে রাকিব ও তার সহাযোগী ইলিয়াস শেখ গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে দুই দিক থেকে দুইজনে টেনে শ¡াসরুদ্ধ করে ইজিবাইক চালক শাহাবুদ্দিন শেখ’কে হত্যা করে এবং পরবর্তীতে তালের শাস কাটার ধারালো দা দিয়ে গলা কেঁটে হত্যা নিশ্চিত করে। গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মোঃ ইলিয়াস শেখ’কে গ্রেফতার করার পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী র্যাব-১১ উক্ত হত্যায় ব্যবহৃত দা, ভিকটিমের মোবাইল ফোন ও ইজিবাইক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
হত্যাকান্ডের পর হত্যাকারী রাকিব গ্রেফতার এড়ানোর জন্য গাজীপুরে আত্তগোপন করে। এই সময়ে সে ইজিবাইক চালক, রাজমিস্ত্রি, ট্রাক হেলপার সহ বিভিন্ন ধরনের পেশা বদল করে ও গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ি, এনায়েতপুর, কাপাসিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় স্থান পরিবর্তন করে। সে ১৪ জুলাই ২০২১ তারিখে আরিফা আক্তার (১৮) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং সর্বশেষ সে স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার সূর্যনারায়ণপুরে শালবনের দুর্গম এলাকায় একটি ঘরে বসবাস করছিল।