সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে এমপি একেএম সেলিম ওসমানের সহধর্মিনী নাসরিন ওসমানের নামে একটি বিদ্যালয়ের একটি ভবন উদ্বোধন করেছেন এমপি সেলিম ওসমান।
নাসরিন ওসমান নামক ভবনটি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এবং তাঁর পারিবারিক অর্থায়নে বন্দরে নবীগঞ্জ গালর্স স্কুলে নবনির্মিত মিসেস নাসরিন ওসমান ভবনের উদ্বোধন করা হয়েছে।
জড়াজীর্ন ও ঝুকিপূর্ণ অবস্থা থাকা স্কুলটি রক্ষার্থে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ দেওয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অন্যত্র স্থানান্তর করতে জমি ক্রয় থেকে শুরু নতুন ভবনটি নির্মাণ এবং যাবতীয় আসবাবপত্র প্রদানের জন্য তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মোট ৫ কোটি ২লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছেন।
২৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার উক্ত ভবনটির উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। এ সময় তিনি আগামী নভেম্বর মাস থেকে শিক্ষার্থীরা নতুন ভবনে ক্লাস শুরু করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
এ সময়ের আগেই স্কুলের নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর দেয়াল নির্মাণ সম্পন্ন করতে তিনি স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন।
উদ্বোধন হওয়া মিসেস নাসরিন ওসমান ভবনটি ৫ হাজার ৩০০ স্কয়ার ফিট জমির উপর ৬ তলা ফাউন্ডেশনের ৩ তলা পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে। ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৮টি শ্রেণীকক্ষ সহ আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। উক্ত ভবনটির পাশেই এমপি সেলিম ওসমানের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারী অর্থায়নে ৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে আরো একটি ৬ তলা ভবন নির্মানাধীন রয়েছে। যা আগামী জুন মাসের মধ্যে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এমপি সেলিম ওসমান। উক্ত স্কুলটি ভবিষ্যতে স্কুল এন্ড কলেজে রূপান্তরিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে এমপি সেলিম ওসমান সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে ইঙ্গিত করে বলেন, কোনো একজন মহিলা আঙ্গুল উচিয়ে বলেছেন মিস্টার সেলিম ওসমান আপনি নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের টাকা ঢাকা নিয়ে যান। আমি বলবো আমি যে স্কুলগুলো নির্মাণ করেছি আমার ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। সেই স্কুলগুলোতে কোন ব্যবসায়ী টাকা দিয়েছেন? যদি কোন ব্যবসায়ী স্কুলগুলোতে টাকা দিয়ে থাকেন তবে বলবেন। আমার এতো হুঙ্কার দরকার নাই। আমার দরকার এই ভবিষ্যত প্রজন্মের মানুষ গুলোর ভালবাসা। উনি বলেছেন উনি কারো কাছে মাফ চাইবেন নাই। আল্লাহ উনাকে হেদায়েত দেক।
ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সামনেই এস.এস.সি পরীক্ষা আপনারা যারা নির্বাচন করছেন তারা একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন আপনার মাইকিং, মিছিল মিটিংয়ের কারনে শিক্ষার্থীদের কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয়। আপনার একটু মিছিল মিটিংয়ের সময় গুলো সমন্বয় করে নিবেন।
বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমার সাথে বন্দরে তিনজন মানুষ কাজ করতো। একজন হচ্ছে আমার ছোট ভাই মুকুল যে আজকে এখানে উপস্থিত আছে। একজন ছিলেন আমার বন্ধু আবুল জাহের যিনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আরেক হচ্ছেন আমাদের রশিদ ভাই। উনারা সবাই এই স্কুলটি নির্মাণের জন্য অবদান রেখেছেন। অথচ এই স্কুলটি উদ্বোধনের দিনে আজকে আমরা তিনজন এক সাথে হতে পারলাম না। এই স্কুলে ১২’শ অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে ভবিষ্যতে এদের মধ্য থেকে তৈরি হবে উজ্জল নক্ষত্র।
তিনি নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেণ, কাউকে চেয়ারম্যান বানালে নিদিষ্ট সময় শেষে সে চলে যাবে। কিন্তু এই স্কুলটি সারাজীবন থাকবে। অথচ রশিদ ভাই এখানে আসলেন না। উনি গেছেন কলাগাছিয়া গাঞ্জার নৌকা তাল গাছে তুলতে। নির্বাচন আসলে কেনো যেন আমরা এক জায়গায় বসতে পারি না। এক জায়গা বসতে পারলে কোন সমস্যাই সৃষ্টি হতো না। রশিদ ভাই আপনি নিজেও আলোচনায় বসে বিনা প্রতিদ্বন্দ্ধীতায় উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এখন আপনি যাচ্ছেন নির্বাচন করাতে।
ইউনিয়ন পরিষদগুলোর নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, সাতটি ইউনিয়ন এলাকায় আমি ৭জন প্রার্থী দিয়েছি। এই ৭জন মানুষ নির্বাচিত হলে আমি এদেরকে নিয়েই আপনার ভবিষ্যত উন্নয়নের কাজ গুলো সম্পন্ন করবো। আমি কোন দল দেখিনি মার্কা দেখিনি। আমার সাথে নৌকা লাঙ্গল সবাই আছে। কলাগাছিয়ায় আমি একজন লোকের কথা বলছি সে হচ্ছে দেলোয়ার হোসেন যার মার্কা লাঙ্গল। আমি কলাগাছিয়ার ভবিষ্যত উন্নয়ন কাজ গুলো দেলোয়ারের মাধ্যমেই করতে চাই। আপনারা দেলোয়ারকে বিজয়ী করবেন। কোন লুটেরাকে বিজয়ী করবেন না। যে কিনা শ্রমিক নেতা, তিতাস গ্যাসের নেতা। বন্দরে প্রতিটি ঘরে ঘরে অবৈধ গ্যাস লাইন দিয়ে বন্দরের ১২টা বাজিয়ে ফেলছে। হারাম কামাই বেরামে খরচ হয়। উনি নির্বাচন করে সেই হারামের টাকা খরচ করছেন। কিন্তু আল্লাহর রহমতে দেলোয়ার হোসেনের কোন টাকা খরচ করতে হবেনা। গোগনগরে আমি জসিম উদ্দিনকে দিয়েছি। উনার মার্কা নৌকা। সেখানে উনার সাথে একজন কুখ্যাত ব্যক্তি নির্বাচন করছেন। আমার বিশ্বাস আল্লাহ জসিম উদ্দিনকে বিজয়ী করবেন। বন্দরে এহসান উদ্দিন, মুছাপুরে মাকসুদ হোসেন, মদনপুরে এম.এ গাজী সালাম, ধামগড়ে মাসুম আহম্মেদ, আলীরটেকে জাকির হোসেন এই ৭জন মানুষকে আমি পেলে আপনার উন্নয়ন কাজ গুলো সম্পন্ন করতে পারবো। আপনারা এদের সবাইকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।
এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মঞ্চে তুলে এনে তাদের কাছ থেকে স্কুলটির জন্য আর কি উন্নয়ন প্রয়োজন সে সকল উন্নয়নের কথা জানতে চান। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলের মধ্যে একটি শহীদ মিনার, একটি মান সম্পন্ন লাইব্রেরী, একটি সাইন্সল্যাব ও একটি আধুনিক কম্পিউটার নির্মাণ করে দেওয়ার দাবী রাখেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে এমপি সেলিম ওসমান শহীদ মিনারটি নির্মাণের জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলকে দায়িত্ব নিতে বলেন এবং আসন্ন এস.এস.সি পরীক্ষায় স্কুল থেকে শতভাগ উন্নীত হলে সাইন্স ল্যাব এবং কম্পিউটার ল্যাব নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সায়মা খাতুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা বিএম কুদরত-এ-খোদা।
আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল। বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানা উল্লাহ সানু, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা ইসলাম শান্তা, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিপক কুমার সাহা, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ গাজী সালাম প্রমূখ।