সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
হটাত করেই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের হাট-বাজার ও অলিগলির চায়ের দোকানগুলো ‘সিঁধকাটা চোর’ এর গল্প বেশ জমেছে। জনে জনে আলোচনায় এখন সিঁধকাটা চোরের গল্প। এক সময় পিতা-মা তাদের সন্তানদের পৌরাণিক গল্প কাহিনী শুনিয়ে ঘুম পারাতো। যেখানে ডাকাত ও চোরের গল্পই ছিল বেশি। কিন্তু যুগের সাথে সাথে এখন আর সেই চোর ডাকাতের গল্প শুনিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পারানো যায় না তেমনভাবে। যে কারনে কালের বিবর্তনের ফলে সেইসব গল্পগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের চরাঞ্চল আলীরটেক ইউনিয়নের হাট-বাজার ও অলিগলির মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানগুলোতে জমে ওঠেছে সিঁধকাটা চোরের গল্প। কিন্তু কি কারনে এই গল্পের শুরু হয়েছে সেটা কেউ বলছেন না।
ওই সিঁধকাটা চোরের গল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, ঘরের সিঁধ কেটে চুরি করাকে গ্রাম্যভাষায় হীন কেটে চুরি করা বলে। অর্থাৎ হীন কাটা চোর যা সিঁধেল চোর।এক এলাকায় তেমনি ছিল এক সিঁধকাটা চোর। যাকে ১৯৭৮ সালে এমনই হীন কেটে চুরি করার কারণে গণধোলাই দিয়ে একটি ইউনিয়নের এলাকা ছাড়া করেছিল গ্রামবাসী। এমনকি সিঁধ কেটে চুরি করতে গিয়ে চোরের এক ভাইও মারা গিয়েছিল। এলাকা থেকে বের করে দেয়ার পর ওই চোর জেলা সদরে পালিয়ে চলে যায়। জেলা সদরের পাশের ইউনিয়নে এসে এক ব্যবসায়ীর কারখানায় চাকুরী নেয় এই সিঁধকাটা চোর। সেখানে সে বস্তা ধোলাইয়ের কাজ করতো।
গল্পের চোর চুরি করা তার মজ্জাগত অভ্যাস। আর যার ফলে এ বস্তার কারখানাতেও সে স্থির হতে পারেনি। ১৯৮৯ সালের ছালার বস্তা চুরির দায়ে মালিকের কাছে ধরা পড়ে যায়। পরে চোরকে একটি লবণের মাঠে দুই হাত পেছনে দিয়ে তারের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। একই সাথে তাকে ধবলধোলাইও দেয়া হয়। একটি লোকও তখন তাকে ছুটিয়ে নিতে আসেনি। ঘন্টার পর ঘন্টা তারের খুঁটির সাথে বেধে থাকার পর তাকে ছুটিয়ে নিতে রাতের বেলা পূর্বের ইউনিয়নের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বস্তার কারখানার মালিকের কাছে আসেন। ওই সময়ে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে চোরকে খুঁটিতে বাঁধা অবস্থা থেকে মুক্ত করেন। তবে ওই সময় মালিক চোরের কাছ থেকে জীবনে আর কখনো চুরি করবে না মর্মে মুচলেকা নেন।
এরকিছুদিন পর্যন্ত চোর ছিলেন নীরব। পরে সদরের একটি এলাকায় রয়নার গোটা থেকে ভেজাল ঘি তৈরি করে বিক্রি শুরু করে সে। মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এই ভেজাল ঘি খেয়ে তখন অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়তেন। চারদিক থেকে একটার পর একটা বিচার আসলে সদরের বিশিষ্টজনেরা মিলে এলাকাবাসীসহ গণধোলাই দিয়ে এলাকা থেকে উচ্ছেদ করে তাকে। এরপর চোরের ভেজাল ঘি তৈরির ব্যবসা কিছুদিন বন্ধ ছিল।
তখনকার সদরের শীর্ষ সন্ত্রাসীর সম্পর্কে উকিল শ্বশুর হয়ে যান সিঁধেল চোর। সেই সুবাধে আবারো ভেজাল ঘি উৎপাদন শুরু করে বিক্রি করা শুরু করে সে। ২০০১ সালে দেশের বিশেষ বাহিনীর বিশেষ অভিযানের সময় ওই চোরের ভেজালকারখানায় গিয়ে অভিযান চালায়।
এমনি সিঁধকাটা চোরের গল্প এখন আলীরটেক ইউনিয়নবাসীর আনন্দের খোরাক। যা হটাত করে মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু অনেকেই বলছেন- কাকতালীয়ভাবে কারো কারো সঙ্গে মিললেও মিলে যেতে পারে। এই গল্পের কোনো বাস্তবতা আছে কিনা জানায়নি এলাকাবাসী। শুধু হাট-বাজার ও অলিগলির চায়ের দোকানগুলোতে বসে আড্ডা জমিয়ে তোলা মানুষগুলোর মুখে সিঁধেল চোর গল্পের কাহিনী।