সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম
আর মাত্র একদিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এই নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী সহ ভাইস ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ১২জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীকে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন মোশারফ হোসেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধি হিসেবে ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তবে নির্বাচনের আগেই দুজনের শক্তিমত্তা দেখেছে সাধারণ ভোটাররা। যেখানে মোশারফ হোসেনের আগের সেই জৌলুশ নির্বাচনে দেখা যায়নি। ভোটের শক্তিতেও এগিয়ে কালাম আবার কর্মীর শক্তিতেও এগিয়ে কালাম। যেখানে মোশারফ হোসেনের একমাত্র শক্তি সরকারি দলের দলীয় প্রতীক নৌকাটিই।
জানাগেছে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা মোশারফ হোসেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের আপন চাচাও তিনি। নৌকাকে বিজয়ী করতে পুরোদমে মাঠে নেমেছেন চাচা ও ভাতিজা। কিন্তু গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী কায়সার হাসনাত নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে সরে দাড়ান। নেতাকর্মীরা হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হলেও তিনি তাদের কোন খোজ খবর রাখেননি। যে কারনে ওইসব নেতাকর্মীরা এবার তীর ভীড়িয়েছেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী কালামের দিকে। কায়সার হাসনাত এবার চাচার পক্ষে মাঠে নেমেও মাঠ গরম করতে পারেননি।
নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের শক্তি দুদিকেই। তিনি ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে রয়েছেন। তার পক্ষে রয়েছেন স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। ইতিমধ্যে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে খোকাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
যদিও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের পক্ষে মাঠে কাজ করছেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ—সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া।
যদিও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আহমেদ মোল্লা বাদশা কাজ করছেন বিদ্রোহী প্রার্থী কালামের পক্ষে। কালামের পক্ষে কাজ করছেন উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান জহিরুল হক, ইউসুফ দেওয়ান, আব্দুর রউফ মোল্লা, আব্দুর রব, হা-মীম শিকদার শিপলু, মোশারফ ওমর, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, সোনারগাঁও পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান ভূঁইয়া এবং পৌরসভায় নির্বাচিত কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ডে নির্বাচিত অন্তত ৯০ জন মেম্বারগণ। এসব চেয়ারম্যানদের অনেকেই নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তারা কাজ করছেন নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে। এসব কারনে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী কালামেরই কর্মীদের শক্তি বেশি দেখা যাচ্ছে। আবার ভোটের হিসেবেও তিনিও এগিয়ে রয়েছেন।
এদিকে শুক্রবার নির্বাচনী প্রচারণার শেষে দিনে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন দুই প্রার্থী। দীর্ঘ প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে দিন রাত সোনারগাঁয়ের অলিগলি ঘুরেছেন দুই প্রার্থী। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহুর্তে চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী নির্ঘুম প্রচারণা চালিয়েছেন। নৌকার প্রার্থী নৌকায় চড়ে ভেসে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে নদীপথেও। আরেকজন স্থলপথে ঘোড়া প্রতীকে দৌড়াচ্ছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে। তবে তাদের এমন প্রতিযোগীতায় কে হবেন ফার্স্ট তা দেখার অপেক্ষায় সোনারগাঁয়ের মানুষ। তা দেখতে হলে আগামী ৩১ মার্চ রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে সোনারগাঁয়ের মানুষকে। এরি মধ্যে উভয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরাই করছেন জয়ের আশা।
এখানে উল্লেখ্যযে, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন পান বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সঙ্গে বিদ্রোহী করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও মোশারফ হোসেন। মনোনয়ন বাছাইয়ে মোশারফ হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেলে সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে লড়াইয়ে নামেন কায়সার হাসনাত। কিন্তু নির্বাচনের ৭২ ঘন্টা পূর্বে কায়সার হাসনাতের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তারপর নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান তিনি। ওই নির্বাচনে খোকার পক্ষে কাজ করেছিলেন কালাম এবং মোশারফ হোসেন কাজ করেছিলেন কায়সার হাসনাতের পক্ষে।