সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
আগামী ২৮ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বিনা প্র্রতিদ্বন্ধিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও বাকি ৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা মামলা ও কেন্দ্র দখল করে ভোট জালিয়াতি করার হুমকি ধমকিতে আতংক বিরাজ করছে প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে। ভোটের দিন ব্যালটে নৌকা মার্কায় প্রকাশ্যে সিল মারার ঘোষণা দিয়েছেন নৌকা প্রার্থীর লোকজন। একইভাবে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে মেম্বার ও সংরক্ষিত মেম্বার পদের প্রার্থীরাও রয়েছেন এসব হুমকি ধমকিতে। বিশেষ করে যারা জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত তাদের নিয়মিত হুমকি ধমকি চলছে। প্রতিটা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত মেম্বার পদেও একইভাবে এসব হুমকি ধমকি দিয়ে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করছেন নৌকার লোকজন।
ইতিমধ্যে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের পক্ষ থেকে এসব হুমকি ধমকি চলছে। মেম্বার প্র্রার্থী ও চেয়ারম্যান পদে লাঙ্গলের প্র্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদেরও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে সাধারণ ভোটারদের হুমকি ধমকি চলছে। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে- নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের লোকজন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছে তারা ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করে জোর করে ব্যালটে নৌকা মার্কায় সিল মেরে জয় ছিনিয়ে নিবে।
উপজেলার জামপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া ও তার লোকজন নির্বাচনের শুরুতেই জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল ভুঁইয়া মাকসুদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছিল। ওইদিন নৌকার পক্ষে পাশ্র্ববতী আড়াইহাজার উপজেলা এলাকা থেকে আগত সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
জামপুুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে উঠান বৈঠক করতে গিয়ে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত প্রকাশ্যে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে কাজ করায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের হামলা মামলা ও নির্যাতনের ভয়ভীতি হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন প্রকাশ্যে গণসংযোগ করতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে এখানে। লাঙ্গল প্রতীকের নির্বাচনী প্র্রচারণা ও মাইকিংও একাধিকার বাধা দিয়েছে নৌকার লোকজন।
শম্ভুপুরা ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে আবারো মামলা দিয়ে লাল দালানের ভাত খাওয়ানোর হুমকি দিয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নাসির উদ্দীনের পক্ষে এক উঠান বৈঠকে প্রকাশ্যে নান্নু এমন হুমকি দিয়েছেন। তার এমন ঘোষণার পর ইতিমধ্যে ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মুগারচর এলাকায় লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর করা হয়েছে। নৌকার প্রার্থী নাসির উদ্দীন এমনিতেই এলাকায় এক আতংকের নাম। তিনি যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন হত্যা মামলার আসামিও।
সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আবুল হাসেমের নেতাকর্মীদের নিয়মিত হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রশিদ মোল্লার লোকজন। নৌকার লোকজন ঘরে ঘরে গিয়ে হামলা হামলার হুমকি দিচ্ছেন। কেউ যেনো লাঙ্গলের পোলিং এজেন্ট না হন সেইসব পোলিং এজেন্টদের হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। সাদিপুরে এবারও গত নির্বাচনের মত কারসাজি করে জোর করে জয়ী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা কেন্দ্র দখল করার ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছে এলাকাজুড়ে।
নোয়াগাঁও ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আব্দুল বাতেন মিয়া। এখানে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী না থাকলেও শক্ত প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ান ও সাবেক চেয়ারম্যান সামসুল আলম। এখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জনপ্রিয়তা তলানিতে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরাও নৌকার জয়ের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। যে কারনে এখানে জোর করে কেন্দ্র দখল করার হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। ফলে আতংকিত সাধারণ ভোটারগণ।
অন্যদিকে পিরোজপুুর ইউনিয়ন, সনমান্দি ইউনিয়ন, কাঁচপুর ইউনিয়ন ও বারদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার ও সংরক্ষিত মেম্বার পদের প্রার্থীরাও রয়েছেন বেশ আতংকে। এই ৪টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এখানেও মেম্বার ও সংরক্ষিত মেম্বার পদের প্রার্থীদের নির্বাচন নিয়ে বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। কারন এখানে নির্বাচিত বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় চেয়ারম্যানেরাও নিজ নিজ পছন্দের লোকজনদের মেম্বার ও সংরক্ষিত মেম্বার প্রার্থীদের জয়ী করতে মাঠে নেমেছেন। অনেক ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থীদের জোর করে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টাও করা হয়েছিল।
নির্বাচনে ৪টি ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং ৮টি ইউনিয়নের মেম্বার ও সংরক্ষিত মেম্বার প্রার্থীরা সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন বিপুল পরিমান র্যাব, বিজিবি, ডিবি ও পুুলিশ মোতায়েনের দাবি তুলেছেন। একই সঙ্গে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা যেনো নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি তুলেছেন।