সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর, ক্লুলেস ও নৃশংস সাব্বির আহমেদ হত্যাকান্ডের অভিযুক্ত ৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচল ১৩ নম্বর সেক্টর হতে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে তাদের। ২৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য জানান র্যাব-১১ এর কোম্পানী কমান্ডার উপ-পরিচালক একেএম মুনিরুল আলম।
তিনি জানান, গত ২১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচল ১৩ নম্বর সেক্টরে নির্মানাধীন পুলিশ টাওয়ার এর ৭ম তলায় নির্মাণ শ্রমিক মোঃ সাব্বির আহমেদের হাত ও চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় লাশ পাওয়া যায়। সে কুড়িগ্রাম জেলার কচাকাটা থানাধীন অষ্টআশিচর এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে। উক্ত ঘটনায় একই স্থানে নির্মাণ শ্রমিক ও নিহতের মামা মোঃ মহেমুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-৪৪, তারিখ-২২ নভেম্বর ২০২১ইং। এই ঘটনা জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয়। যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে ও জনমনে আতংক সৃষ্টি হয়।
র্যাব এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উৎঘাটন ও ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতারের জন্য র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখে র্যাব-১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচল ১৩ নম্বর সেক্টর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মামলা রুজু হওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নির্মাণ শ্রমিক মোঃ সাব্বির আহমেদের নৃশংস ৩ হত্যাকান্ডে জড়িত মোঃ আশরাফুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, মিজানুর রহমানকে সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
র্যাব আরো জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ৩ জন আসামী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিম মোঃ সাব্বির আহমেদকে হত্যা করে। গ্রেপ্তারকৃত ৩ জন হত্যাকারী ও ভিকটিম মোঃ সাব্বির আহমেদ সহ কুড়িগ্রাম জেলার মোট ১৫ জনের একটি দল দীর্ঘদিন যাবত নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে আসছিল। গত ২০ নভেম্বর ২০২১ইং তারিখে চুক্তি অনুযায়ী উল্লেখিত নির্মাণাধীন ভবনে তাদের কাজ শেষ হয় এবং ২১ নভেম্বর ২০২১ইং তারিখে মজুরী গ্রহণ পূর্বক তাদের যার যার মত বাড়ীতে যাওয়ার কথা ছিল। উল্লেখ্য ভিকটিম সাব্বির একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের দেয়া ভাষ্যমতে উক্ত মোবাইল ফোনটি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে গত ২০ নভেম্বর ২০২১ইং তারিখ তাদের নির্মাণ কাজ শেষে সন্ধ্যার পর আশরাফুল, আনিস ও মিজান ৩ জনে মিলে ভিকটিম সাব্বিরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। অতঃপর পারস্পারিক যোগসাজসে তারা হত্যায় ব্যবহৃত লোহার ছোট রড ও জিআই তার জোগাড় করে ফাঁস বানায়। এরপর আনুমানিক রাত ৮ ঘটিকার দিকে হত্যাকারী আশরাফুল ভিকটিম সাব্বিরকে মোবাইল ফোনে কল করে ডেকে ৭ম তলায় নিয়ে যায় এবং অপর দুই হত্যাকারী আনিস ও মিজান তাদের পিছুপিছু ৭ম তলায় যায়। অতঃপর কথোপকথনের এক পর্যায়ে অতর্কিত ভাবে তারা ভিকটিম সাব্বিরকে হামলা করে এবং একজন ভিকটিম এর গলায় থাকা গাঁমছা দিয়ে ভিকটিম এর মুখ, নাক ও চোখ বেঁধে ফেলে, একজন ভিকটিমের পরিধেয় শার্ট দিয়ে হাত বেঁধে ফেলে এবং অপর জন লোহার রড ও জিআই তার দিয়ে বানানো ফাঁস ভিকটিম এর গলায় পেঁছিয়ে ভিকটিম এর শ্বাস রোধ করে পারস্পারিক সহযোগিতায় ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে। অতঃপর তারা লাশটি টেনে একই তলার অন্য একটি কক্ষে নিয়ে প্লেইন শীট দিয়ে ঢেঁকে রাখে। ঘটনার পরের দিন ভিকটিম সাব্বিরকে তার সহনির্মাণ শ্রমিকরা দেখতে না পেয়ে সবাই মিলে খোঁজাখোজি শুরু করে এবং দুপুর আনুমানিক ০১:৩০ ঘটিকায় উল্লেখিত নির্মাণাধীন ভবনের ৭ম তলায় সাব্বির এর লাশ খুঁজে পায়।
পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত ৩ আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী র্যাব-১১ এর আভিযানিক দলটি অত্র হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত হত্যায় ব্যবহৃত রডের সাথে পেঁচানো জিআই তার ও ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।