সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
অবশেষে আড়াইহাজারের আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে রাজনৈতিকভাবে বিজয়ী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ। এই রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে পরাজিত হয়েছেন স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে তুমুল লড়াইয়ে ছিলেন ইকবাল পারভেজ ও নজরুল ইসলাম বাবু। তবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এসে রাজনৈতিকভাবে নিজের প্রভাব জানানি দিলেন ইকবাল পারভেজ।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর আপন ভাগনে ইকবাল হোসেন মোল্লা। এখানে চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। নির্বাচনে কোন রকম লড়াই করতে পারেনি এমপি বাবুর ভাগনে ইকবাল হোসেন মোল্লা। নির্বাচনে ৮০ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন হেলো সরকার। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধি এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ভাগনে ইকবাল হোসেন মোল্লা পেয়েছেন মাত্র ৭ হাজার ৮শ ৮৯ ভোট।
৩১ মার্চ রবিবার আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে ভোট গ্রহণ শেষে বিকেলে ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়। সন্ধায় ভোট গণনায় প্রায় বেশির ভাগ ভোটের ফলাফল বেসরকারিভাবে ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং অফিসার।
এদিকে আরও জানাগেছে, আড়াইহাজারে আওয়ামীলীগ দুই ভাগে বিভক্ত। একটি পক্ষের নিয়ন্ত্রনে বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম বাব। অপর পক্ষের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ। ইকবাল পারভেজের বলয়ে রাজনীতি করেন হেলো সরকার। এই নির্বাচনে এমপি বাবু চেয়েছিলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজালাল মিয়া নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেতো। এমপি এককভাবে কেন্দ্রে শাহজালাল মিয়ার নাম পাঠানোর প্রস্তাবও করেছিলেন। কিন্তু নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ ভূঁইয়া ও মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার সহ আরও বেশকজন।
শেষবধি এখানে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান হেলো সরকার। যেখানে পিছন থেকে কাজ করেছিলেন ইকবাল পারভেজ। তিনিই মুলত জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সেক্রেটারি আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের সুপারিশ নিয়ে হেলো সরকারের পক্ষে কাজ করেন এবং নৌকা প্রতীক পান হেলো সরকার।
নৌকা প্রতীক পেলেও আড়াইহাজারে এমপি বাবুর ইন্দনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন শাহজালাল মিয়া। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের চাপে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। এর পিছনেও কাজ করেন ইকবাল পারভেজ।
এদিকে শাহজালাল মিয়া নির্বাচনে সরে দাড়ালেও নির্বাচন থেকে সরে যায়নি এমপি বাবুর ভাগনে ইকবাল হোসেন মোল্লা। যার পিছনে উস্কানী ছিল এমপি বাবুুর। নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্ধের দিন ইকবাল হোসেন মোল্লা মিডিয়াতে এক বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়। তিনি বলেছিলেন, আড়াইহাজারে কেউ কিছু করতে চাইলে মাইরা ফালামু সব।’ ওই বক্তব্যে পর আতংকিত হয়ে ওঠেন আড়াইহাজারের জনগণ। শেষ পর্যন্ত নীরব ভোটে নৌকার প্রার্থী হেলো সরকারকেই বিজয়ী করেছেন আড়াইহাজারের মানুষ।
অন্যদিকে নেতাকর্মীদের দাবি- গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসন থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন ইকবাল পারভেজ। নির্বাচনের কয়েক বছর আগে থেকেই আড়াইহাজারের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের তিনি গুছিয়ে এনেছিলেন। আওয়ামীলীগের বিশাল অংশের নেতারাও চলে যান ইকবাল পারভেজের দিকে। কিন্তু নির্বাচনে শুধুমাত্র এমপিত্ব থাকার কারনেই আবারো এমপি বাবুকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামীলীগ। কারন এমপি হিসেবে নির্বাচনে অতিরিক্ত কিছু সুযোগ সুবিধা পাবেন নির্বাচনে। সেই হিসেবেই এমপি মনোনয়ন পান। নতুবা নির্বাচনের আগেই ইকবাল পারভেজের পক্ষে পরিরবর্তনের শ্লোগান তুলেছিল আড়াইহাজারের মানুষ। কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইকবাল পারভেজ ঠিকই দেখালেন তার ঝলক। হেলো সরকারের নৌকার প্রার্থী ও তাকে বিজয়ের সকল পথেই কাজ করেছেন ইকবাল পারভেজ।