সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির দলীয় ভিতরগত বা বহির্গত কোনো প্রকার সমর্থন নাই- জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। ১৫ ডিসেম্বর বুধবার দুপুর নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া সংলগ্ন তার নিচ চেম্বারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে শত বাধাবিপত্তি আর হুমকি উপেক্ষা করে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলাম আপনাদের পূর্ণসমর্থন ও সহযোগিতার কারনে। এরপর থেকে আপনাদের এই সহযোগিতা আজকে পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ রয়েছে যা আমাকে পথ চলতে অনুপ্রাণিত করে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা অবগত আছেন বিগত ২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আমি বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। অথচ সে নির্বাচনের ৭দিন আগেও এ বিষয় আমি নিশ্চিত ছিলাম না। ২০১৬সালের ১৭ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের স্হায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরের দিন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাদের গুলশানের কার্যালয়ে ডাকেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া একে একে চেয়ারপার্সন এর উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, নির্বাহী কমিটির সদস্য মোঃ গিয়াসউদ্দিন ও অ্যাডভোকেট আবুল কালাম সাহেবকে নির্বাচনে অংশ নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তারা তিনজনই নির্বাচনে অংশ নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তখন চেয়ারপার্সনের নির্দেশে আমি মেয়র পদে নির্বাচন করতে সম্মত হই এবং নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, কালের পরিক্রমায় আবারো একটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অংশগ্রহণের লক্ষে আমি ইতোমধ্যেই মনোনয়ন সংগ্রহ করেছি এবং আপনারা জানেন আজকে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর আমি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরামের সাথে যোগাযোগ করি। দলের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয় বর্তমান অবৈধ সরকার এবং আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি কোন প্রকার নির্বচনে অংশগ্রহন করবে না এবং এখন পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে না এবং কাউকে সমর্থন প্রদান করবে না বলে আমাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। কোন বিএনপি নেতা যদি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তবে তা তার ব্যক্তিগত নির্বাচন হিসেবে গণ্য হবে। এতে দলের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা থাকবে না। কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষেও দলীয় ভিতরগত বা বহির্গত কোনো প্রকার সমর্থন থাকবে না।
সাখাওয়াত বলেন, আপনারা জানেন আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক। এখন পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোন প্রকার কাজে অংশগ্রহণ করি নাই। আমাদের দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মা। আমাদের মায়ের নির্দেশনা হচ্ছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা। আমাদের মা যখন সুস্থ ছিলেন তখন তিনি আমাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, আমি সে নির্দেশ পালন করেছি। আজ আমাদের মা মৃত্যুশয্যায় থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি একজন জিয়ার সৈনিক হিসেবে সে নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। তাই দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমথর্ন আর শ্রদ্ধা রেখে আমি এই ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার ও তার অজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বচন বর্জনের ঘোষণা দিলাম।
আমি আশা করবো আমার মতো নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সকল সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এই নির্বাচন থেকে সরে আসবে। কারন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্বে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠ অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের যে আন্দোলন চলছে, সেই সাথে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাড়ানো বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরনণর আন্দোলন যখন একটি চুড়ান্ত পর্যায় উপনীত, তখন এই অবৈধ সরকারের ফাদে পা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়াটা সেই আন্দোলনের সাথে পরিহাসের সামিল বলে আমি মনে করি। তাই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করতে সকল জিয়ার সৈনিককে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা আর তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।