সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও সোনারগাঁ পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিল মাসের মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছে জেলা নির্বাচন কমিশন। তার আগে সীমানা সংক্রান্ত আইনি জটিলতা যেনো নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি না করতে পারে সে বিষয়ে কাজ করছে জেলা নির্বাচন কমিশন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও পৌরসভা ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নে সীমানা নির্ধারণ দেখিয়ে নতুন করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবর প্রতিবেদন জমা দিবে। এ বিষয়ে তার আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবে জেলা নির্বাচন কমিশন।
তবে বর্তমান প্রধাণ নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে এই নির্বাচন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা নির্বাচন কমিশন সুত্র বলছে, আগামী ২০২২ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে সোনারগাঁ পৌরসভা ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে ওই সূত্রটি আরো বলছে, সোনারগাঁ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের সঙ্গে সীমানা সংক্রান্ত বিষয়ে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের যে সমস্যা ছিল সেটা সমাধান হওয়ার কারণে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী ২৬ শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের সঙ্গে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সীমানা সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়ে জেলা নির্বাচন কমিশন অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক শেষে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশন অফিস বরাবর জমা দিবে।
ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ হিসেবে সূত্রটি বলছে, পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড এবং মোগরাপাড়ায় যে সীমানা নিয়ে বিরোধ সেই এলাকার ভোটারদের কোন পরিবর্তনের সুযোগ নেই। কারন ঐ সীমানায় কোন ভোটারদের ভোটার সংখ্যা পরিবর্তন হবে না। সেখানে ভোটার নেই। যদি ভোটার সংখ্যা পরিবর্তন করতে হয় সেটাও নতুন করে হালনাগাদ করে প্রতিবেদন জমা দিবে। মোটকথা জেলা নির্বাচন কমিশন চাচ্ছে এখানে নির্বাচন হোক। সেই লক্ষেই কাজ করছেন তারা।
সূত্রটি আরো বলছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষে সোনারগাঁ পৌরসভা ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে জেলা নির্বাচন কমিশন যাবতীয় কার্যক্রম শুরু করবে। তার আগে আইনি জটিলতা অবসানের জন্য যাবতীয় কার্যক্রম তারা সম্পন্ন করবে। তারপর নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করবে।
অন্যদিকে স্থানীয়রা জানান, সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা মামলা থাকায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভা ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। যেখানে মোগরাপাড়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পরিষদের একজন মেম্বারের দায়েরকৃত মামলা খারিজ করালেও পুণরায় আপিল করেছিল বাদীপক্ষ। ফলে আবারো ঝুঁলে যায় নির্বাচন প্রক্রিয়া। পৌরসভা ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নের সীমানা সংক্রান্ত মামলার কারনে এখানে ডজন খানিক নেতা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়ার লক্ষে যে স্বপ্ন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছিলেন সেই স্বপ্ন এখন ঝুঁলে আছে। পৌরসভা ও মোগরাপাড়ার বর্তমান পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই।
এখানে ব্যবসায়ীদের শিল্পকারখানার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মামলার কারনে নতুন করে জনপ্রতিনিধি পাচ্ছেনা জনগণ। একই সঙ্গে যারা জনসেবার ব্রত নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের সেই স্বপ্নও পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মামলা। নির্বাচনের দাবিতে যেভাবে মাঠে নেমেছিলেন সেই নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় ভাটা পড়েছে এখন। মোগরাপাড়া ইউনিয়নবাসীর ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি লড়াই করে গেলেও পৌরসভার বিষয়ে সেভাবে মামলা জটিলতা সারানোর বিষয়ে আগ্রহী নন কেউ।
স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, সোনারগাঁও পৌরসভার সঙ্গে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের সীমানা সংক্রান্ত নিরসনের লক্ষ্যে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার কারনে পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। একইভাবে একই কারনে মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের একজন মেম্বার মামলা ঠুকে দেয়। ফলে দুটি এলাকার নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। মোগরাপাড়া মামলাটি খারিজ করালেও আবারো বাদী মামলার বিষয়ে আপিল করেছে।
নির্বাচনের লক্ষ্যে সোনারগাঁও পৌরসভা থেকে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি প্রার্থীদের তালিকাও প্রস্তুত করেছিলো উপজেলা আওয়ামীলীগ। বিএনপি স্থানীয় কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিলেও এর আগে পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনায় ছিলেন গত নির্বাচনের পরাজিত মেয়র প্রার্থী মোশারফ হোসেন। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণাতেও ছিলেন পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন শফিকুল ইসলাম নয়ন।
আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহমেদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী, নাসরিন সুলতানা ঝরা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ হোসাইন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওসমান গনি।
নাগরিক কমিটির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ছিলেন উপজেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ডালিয়া লিয়াকত। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনী। পৌরসভার বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান ভুঁইয়া ডালিয়া লিয়াকতকে নির্বাচনী নামান। একই সঙ্গে ডালিয়া লিয়াকতকে নিজের বোন জানিয়ে ডালিয়া লিয়াকতের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে উঠান বৈঠক ও নির্বাচনী গণসংযোগও করেছিলেন সাদেকুর রহমান।
এদিকে মোগরাপাড়ায় তরুণ চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে বেশ আলোচিত হয়ে ওঠেন। কয়েক বছর ধরে তিনি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ও জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে আসছেন। ফলে জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন সোহাগ রনি। মামলা খারিজ করতে আইনি লড়াইও চালিয়ে আসছেন তিনি। এখানে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছিলেন জেলা যুব সংহতির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী নাজমুল ইসলাম লিটু। প্রতিনিয়ত সোহাগ রনি ও কাজী লিটু নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। তবে প্রচারণায় না থাকলেও পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবুও যে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি সেটা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই। একইভাবে নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনায় ছিলেন মোহাম্মদ আলী।