সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের বৃহত্তর অংশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখনো নৌকার পক্ষে পুরোদস্তুর নির্বাচনী মাঠে নামেনি। অন্যদিকে বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের হাতি মার্কার পক্ষে প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনী মাঠে নেমে গেছেন। মূলত আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দীর্ঘদিনের বিরোধকে কাজে লাগিয়ে তৈমুর আলমের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, মেয়র প্রার্থী আইভী মূলত নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতি করেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের মূলধারার ঝান্ডা ধরে আছেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা নারায়ণগঞ্জ-৪(সিদ্ধিরগঞ্জ- ফতুল্লা) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। ফলে এখানে শামীম ওসমানের এক ইশারাতেই নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হতে পারে। ইতিমধ্যে মেয়র আইভীও এক অনুষ্ঠানে দাবি করেছেন তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েও কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন নৌকার পক্ষে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কোন প্রমাণ না পাওয়া গেলেও আওয়ামী লীগের মূল ধারার নেতাকর্মীরা এখনো মাঠে না নামায় আওয়ামী লীগের নৌকা অনেকটা যে হেলছে দুলছে সেটা পরিস্কার।
স্থানীয়দের আরো মতামত- আইভী মূলত সাধারণ মানুষের ভোট সংগ্রহের রাজনীতি করলেও সেই ভোট সংগ্রহে যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রয়োজন সেটাই এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে। আইভীর উন্নয়ন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন, সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রতিটা ঘরে ঘরে যাওয়ার মত যেই কর্মীবাহিনী প্রয়োজন সেটা মেয়র আইভীর নেই। আইভীর চারপাশে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত স্থানীয়দের মাঝে সেরকম তাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে এমপি শামীম ওসমানের ইশারা ছাড়া শামীম ওসমানের সবুজ সংকেত না পেলে আওয়ামী লীগের বৃহত্তর অংশের নেতাকর্মীরা যে নৌকার পক্ষে নামবে না, সেটা এখন পরিষ্কার।
যদিও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যে আওয়ামী লীগের এইসব মাঠের রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীরা অনেক মান অভিমান হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে হলেও নৌকার পক্ষে থাকবেন সেটা প্রায় নিশ্চিত। কারন তারা আইভীর বিরোধীতা করলেও তারা শেখ হাসিনার নৌকার বিরুদ্ধে যাবেন না। এক্ষেত্রে হয়তোবা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে অনেকেই বলেছেন শেখ হাসিনার নির্দেশ পেলেই শামীম ওসমানের লাখো কর্মী বাহিনী নৌকার পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়লে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের হাতি মার্কার বর্তমান পরিস্থিতি সেটা আর থাকবে না- এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে একটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার পক্ষে বিশাল অংশের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠে নামার বিষয়ে আগামী পহেলা জানুয়ারি পর থেকেই বোঝা যাবে। তবে খুব সম্ভবত পহেলা জানুয়ারি পর থেকেই পুরোদস্তুর নির্বাচনী মাঠে নামবেন শামীম ওসমানের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনী আচরণবিধি থাকায় একজন জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে শামীম ওসমান নির্বাচনী মাঠে নামতে পারবেন না। তবে তার নির্দেশনা ছাড়া তার নেতাকর্মীরা মেয়র আইভীর পক্ষে যে নামবেন না সেটাও পরিষ্কার।
এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বৃহত্তর অংশের সঙ্গে মেয়র আইভীর দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের ফলে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে। একাধিক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী মেয়র আইভীর মামলায় আসামি হয়েছেন। উল্টোদিকে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছে। এসব ঘটনায এখনও নিরসন হয়নি। আগামী ১৬ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। কিন্তু আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের উপরোক্ত ঘটনা নিরসন না হওয়ার কারণে অনেকটা নীরব অবস্থানে রয়েছেন বিশাল অংশের নেতাকর্মীরা। ফলে হেলছে দুলছে আইভীর নৌকা।
এদিকে আওয়ামী লীগের এই বিরোধের সুযোগে তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিটি এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে তার নির্বাচনী বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই বলছেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আইভীর পক্ষে শামীম ওসমানের লোকজন নির্বাচনী মাঠে নামলেই কেবল নৌকার বিজয় নিশ্চিত। কিন্তু মেয়র আইভী যদি সেই বিরোধ নিরসনের বিষয়ে কোন প্রচেষ্টা কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ করাতে না পারেন তাহলে তার বিজয় নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
রাজনীতিকদের মতে, তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার পক্ষেই থাকবেন সেটা প্রায় বলা যায় এবং এখানে নৌকাকে বিজয়ী করতে আবারো একেএম শামীম ওসমান তার শক্তির অবস্থান জানানি দিবেন। মূলত তিনি নীরব থাকার একটি কারণই হলো তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন শামীম ওসমান ছাড়া আইভী কতটুকু এগুতে পারেন সেটাই হয়তো যাচাই-বাছাই করছেন। তবে ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে হলে শামীম ওসমানের নির্দেশনা ছাড়া তার নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে না এবং নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা নিয়ে আছে বেশ শঙ্কা।