সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২০১১ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র দলীয় সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। নির্বাচনের মাত্র ৭ ঘন্টা পূর্বে দল থেকে তার উপর সমর্থন তুলে নেওয়া হলে তিনি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ওই নির্বাচনে তিনি সরে দাঁড়ানোর সময় বলেছিলেন, কুরবানির গরুকেও গোসল করিয়ে জবাই করা হয়, কিন্তু আমাকে গোসল ছাড়াই কুরবানী দেওয়া হল। যদিও একই সময়ে কুমিল্লা সিটিকে বিএনপি নেতা সাক্কু নির্বাচন করেছিলেন দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে। জয়ী হওয়ার পর তাকে বিএনপি বরণ করে নেয়।
ওই নির্বাচনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র নেতাকর্মীরা মনে করেন- ওই নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকার সরে না দাঁড়ালে তিনি তখনই মেয়র নির্বাচিত হতেন। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সেই ক্ষত এখনো পূরণ করতে পারেনি বিএনপি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে নিয়ে বিএনপি’র বারংবার জবাই এবং গোসল ছাড়াই কুরবানী দেওয়ার বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থক ও ভোটারদের মাঝে তৈমুর আলমের প্রতি আরও সহানুভূতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তার প্রতি রীতিমত জুলুম করা হচ্ছে বলে নেতাকর্মীদের দাবি।
এর কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা মনে করছেন- নারায়ণগঞ্জে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের যেসব নেতাকর্মী রয়েছেন তাদের মাঝে রাজপথের নেতা হিসেবে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকেই সর্ব প্রথম মনে করা হয়। কিন্তু সেই তৈমুর আলম খন্দকারকে নিয়ে যখন এভাবে নানা ধরনের খেলা এবং খেলার মাঝে ষড়যন্ত্র দেখছেন নেতাকর্মীরা, তখন তার প্রতি নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদেরও একটা সহানুভূতি তৈরি হয়েছে।
এখানকার নেতাকর্মীদের দাবি- প্রায় দেড় বছর পূর্বে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, এই সরকারের অধীনে এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্থানীয় কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। কিন্তু সেই নির্দেশনার বাইরে গিয়েই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক এমপি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, মহানগর বিএনপির সদস্য সুলতান মাহমুদ এবং সর্বশেষ অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।
একইসঙ্গে বিএনপি’র ২০ দলীয় জোটের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির যুগ্ন মহাসচিব রাশেদ ফেরদৌস সোহেলও মনোনয়পত্র জমা দিয়ে বর্তমানে তিনি নির্বাচনে রয়েছেন। যদিও নির্বাচনে সাখাওয়াত হোসেন খান, এটিএম কামাল, সুলতান ও গিয়াসউদ্দিন মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। কিন্তু নির্বাচনের কয়েকদিন পূর্বে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু বিএনপি’র কোন নেতা যদি ব্যক্তিগতভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন এক্ষেত্রে বিএনপি কাউকে বাধা দেবে না। মূলত সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার মেয়র প্রার্থী হন।
কিন্তু সর্বশেষ দেখা গেল তৈমুর আলম খন্দকারকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদটি স্থগিত করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে তার কিছুদিন পরেই বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদ থেকেও তাকে প্রত্যাহার করা হয়। বিএনপির পেশাগত সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ থেকেও তৈমুর আলম খন্দকারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এখন নেতাকর্মীদের প্রশ্ন হল- যদি তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দোষী হয়ে থাকে তাহলে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও কেন বিএনপি কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করছে না? আর যদি তৈমুর আলম খন্দকার সহ বাকিরা এই নির্বাচনে বিএনপির নির্দেশনার বাহিরে গিয়ে মনোনয়ন পত্র নিয়ে থাকেন তাহলে নির্বাচনের শুরু থেকেই কেন তাদেরকে শোকজ করা হলো না? নির্বাচনে নমিনেশনপত্র সংগ্রহ করার পর থেকে তাদেরকে শোকজ করে নির্বাচনে দাঁড়ানোর বিষয়ে জবাব দাখিলের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল কিনা? কিন্তু বিএনপি সেটাও করেনি।
নেতাকর্মীদের আরো প্রশ্ন- এখন তৈমুর আলম খন্দকার প্রার্থী হয়ে যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে যারা নমিনেশনপত্র ক্রয় করেছিলেন তারাও তো দোষী? একইভাবে যারা বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ পদ বহন করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নির্বাচন করছেন তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না? সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের দাবি- তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচন করার দায়ে যে দোষে দোষী সাব্যস্ত, যারা নির্বাচন করছেন তারাও একই দোষে দোষী কিনা? যদি দোষী হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকেও দোষী সাব্যস্ত করে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত কিনা?
এভাবে তৈমুর আলম খন্দকারকে যখন বারবার জবাই করা হচ্ছে তখন নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী সহ সাধারণ কর্মী সমর্থক এবং ভোটারদের মাঝে তৈমুর আলম খন্দকারের প্রতি এক প্রকার সহানুভূতি বর্তমানে আরো বেড়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে বলছেন- বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে রুখে দাঁড়ানোর মত, পুলিশের বন্দুকের নলের সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়ানোর মত নেতা কেবল অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারই। তৈমুর আলম খন্দকার ছাড়া নারায়ণগঞ্জের নগরীতে রাজপথে মিছিল করার মত সাহসী নেতা নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে খুবই কমই রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিকে শক্ত হাতে ধরে রাখতে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এর ভূমিকাও কম নয়। যিনি রাজপথে লাঞ্ছিত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, পুলিশের লাঠির আঘাত তার পিঠে নিয়েছেন, পুলিশের হাতে গলায় আঘাত পেয়েছেন, রাজপথে গুলি খেয়েছেন।
নেতাকর্মীরা আরো বলছেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাওসার আশা নাসিকের ২৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী, মহানগর বিএনপি’র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন শকু ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুল ইসলাম ছক্কু ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী। মহানগর যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক সাগর প্রধান ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী। মহানগর বিএনপির প্রচার সম্পাদক হান্নান সরকার ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী, মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক আয়শা আক্তার দিনা সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সহ প্রায় প্রতিটা ওয়ার্ডে বিএনপির নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। এক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের প্রশ্ন-তৈমুর আলম খন্দকারকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? যারা বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে করছেন- বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা তৈমুর আলম খন্দকার এর পাশে না থাকলেও তারা তৈমুর আলম খন্দকার এর বিরুদ্ধে নেই। এক্ষেত্রে বিএনপি’র যেসব নেতাকর্মী রয়েছেন তাদের ভোট তৈমুর আলম খন্দকারের হাতি মার্কায় পড়বে, এছাড়াও যারা আইভীবিরোধী তাদের ভোটও যাবে হাতি মার্কায়, যেসব বাড়িওয়ালারা অতিরিক্ত ট্যাক্স এর কারণে আইভীর প্রতি ক্ষুব্ধ তাদের ভোটও যাবে হাতির বাক্সে। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থক এবং বিএনপি’র ভোটব্যাঙ্কের ভোটাররা ঠিকই কেন্দ্রে যাবে। এর কারণ হলো স্থানীয় কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরাই সেইসব ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবে। ফলে তারা তো মেয়র পদে কাউকে না কাউকে ভোট প্রদান করবেই। এর ফলে সেইসব ভোটগুলো তৈমুরের বাক্সে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং তৈমুরের জয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।