সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এবং তার নির্বাচনে প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। যার ফলশ্রুতিতে বিএনপি থেকে তাদের দু’জনকেই স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বৃহত্তর এই রাজনৈতিক দলটি। এর আগে নির্বাচনের শুরুতেই বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদ থেকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক থেকে ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ থেকে তৈমুর আলম খন্দকারকে অব্যহতি দেয় বিএনপি।
১৬ই জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে হেরে যান তৈমুর আলম। নির্বাচনের পর ১৮জানুয়ারি বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য পদ সহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে তৈমুর আলম খন্দকার ও এটিএম কামালকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। নারায়ণগঞ্জের বিএনপি’র শীর্ষ দুই নেতাকে বহিষ্কার করায় নতুন করে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মহানগর বিএনপি’র নেতৃত্বে আসতে চাচ্ছেন মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন।
যদিও কেউ কেউ বলছেন- অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে সভাপতি পদে বহাল রেখে সাখাওয়াত হোসেন খানকে সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হতে পারে। আবার অনেকেই বলেছেন- বয়সের কারণে এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে মহানগর বিএনপি’র বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম নেতৃত্বে আসতে চাচ্ছেন না। তিনি চাচ্ছেন তার পুত্র মহানগর বিএনপি’র বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশাকে নেতৃত্বে নিয়ে আসতে। এক্ষেত্রে সাখাওয়াত হোসেন খানকে সভাপতি এবং আবু কাউছার আশাকে সাধারণ সম্পাদক পদে রেখেই মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি হতে পারে।
অন্যদিকে যদিও অনেকের প্রত্যাশা ছিল মহানগর বিএনপি’র পরবর্তী কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে পারেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি নাসিকের ১৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। কিন্তু তৈমুর আলম খন্দকারের আপন ছোট ভাই হওয়ার কারণে খোরশেদকে মহানগর বিএনপিকে পদায়ন করবে কিনা সেটা নিয়ে বিরাট সন্দিহান। এর আগে একটি ছোট্ট বিষয়ে খোরশেদকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তারপরেও কেউ কেউ মনে করছেন খন্দকার পরিবারকে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রাখতে শাখাওয়াত হোসেন খানকে সভাপতি ও খোরশেদকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর বিএনপি’র কমিটি হতে পারে। এটা অনেকের কাছে অবাস্তব মনে হলেও অনেকের প্রত্যাশা।
অন্যদিকে তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য মাসুকুল ইসলাম রাজিবকে নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা। নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে মাসুকুল ইসলাম রাজিবকে নেতৃত্বে আনা হলে মহানগর বিএনপির রাজনীতি আরো শক্ত অবস্থান তৈরি হতে পারে। কিন্তু মহানগরের চেয়ে জেলা এলাকায় মাসুকুল ইসলাম রাজীবের কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা বেশি। একইভাবে মহানগরীর রাজনীতিতে মাসুকুল ইসলাম রাজিবের তেমন একটা আগ্রহ নেই। যার ফলে জেলা বিএনপি’র কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও সাধারণ সম্পাদক পদে মাসুকুল ইসলাম রাজিবের অবস্থান আলোচনায়।
নেতাকর্মীরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কারণে নারায়ণগঞ্জের বিএনপিতে বিরাট ধাক্কা লেগেছে। কারন নির্বাচনের শুরুতেই জেলা বিএনপি’র আহবায়ক তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যেখানে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। মনিরুল ইসলাম রবির কর্মী-সমর্থক না থাকায় জেলা বিএনপির শীর্ষ পদে তাকে নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আলোচনায় এখন বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ গিয়াস উদ্দিন। এ ক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে কিংবা সদস্য সচিব পদে বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে এগিয়ে রাখছেন অনেকেই। যদিও কেউ কেউ বলছেন সিদ্ধিরগঞ্জে এলাকা থেকেই গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক করা হলে সদস্য সচিব পদটি হারাতে পারেন সিদ্দিনগঞ্জ এলাকারই অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। এক্ষেত্রে জোরালো সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান ও মাসুকুল ইসলাম রাজিবের।
নেতাকর্মীরা বলছেন, তৈমুর আলম খন্দকার ভুলের কারণে অধ্যাপক মামুন মাহমুদের পদ নিয়েও এখন টানাহেছড়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে জানা গেছে, অচিরেই জেলা ও মহানগর বিএনপি নতুন করে ঢেলে সাজানো হতে যাচ্ছে। যে কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে বলছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে তৈমুরের অংশগ্রহণে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি তছনছ হয়ে গেছে। আর এই সুযোগে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসছে, যেখানে মহানগরীতে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদে সাখাওয়াত হোসেন খানের সম্ভাবনা অপরিহার্য।