সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাইকারটেক হাটের ইজারাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর এবার কাউন্টার একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলা নিয়ে অপরাজনীতি চলছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। যেখানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনিকে প্রধান আসামি করে উল্টো কাউন্টার মামলা দায়ের করা হলো।
এই মামলায় ছাত্রলীগ যুবলীগের যেসব নেতাকর্মীরা আহত ও রক্তাক্ত জখম হয়েছেন তাদেরকেও আসামি করা হয়েছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হল সোহাগ রনির অসুস্থ বৃদ্ধ পিতা শাহজামাল তোতাকেও ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন রাজনীতিতে গ্রুপিং বিরোধ দ্বন্দ্ব কিংবা প্রতিযোগীতা থাকতে পারে। সেই হিসাবে রাজনৈতিকভাবে কিংবা অপরাজনৈতিকভাবে সোহাগ রনিকে আসামি করাটা অনেকটা স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেওয়া হলেও তার অসুস্থ বৃদ্ধ পিতাকে মামলার আসামি করার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে। স্থানীয়দের দাবি যেখানে রাজনীতি করে সোহাগ রনি অথচ মামলায় আসামি করা হলো তার বৃদ্ধ পিতাকে। যে ঘটনায় তার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই। অভিযোগ শুধু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে নয়, স্থানীয়রা পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন তারা। তাদের অভিযোগ মামলাটির নেওয়ার আগে কোনরকম যাচাই-বাছাই কিংবা তদন্ত না করেই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে এই মামলাটি পুলিশ গ্রহণ করেছেন।
জানাগেল, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত কাইকারটেক হাটের দরপত্র জমা দিয়ে উপজেলা চত্বরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ১৩ জন আহতের ঘটনায় আহত সিরাজুল ইসলাম সজল ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাদী হয়ে জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ্য করে ৬২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ইতিমধ্যে ৬জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। এই মামলার বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনিকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন রফিকুল ইসলাম নান্নু। যা তাদের অডিও ফাঁসে জানা যায়।
এদিকে ২০ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনিকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪০ জনকে মামলা দায়ের করা হয়। রফিকুল ইসলাম নান্নুর কর্মী ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি কল্পকাহিনি সাঁজিয়ে লিখিত আকারে অভিযোগ দায়ের করেন। মামলায় সোহাগ রনি ছাড়া যাদের নামে মামলা হয়েছে তারা হলেন, সোহেল (৩৬) শাহ আলম, শাহজামাল তোতা (৫৩), সিরাজুল ইসলাম সজল (৩২), আলমগীর (৪৩), মিন্টু (৪২), পারভেজ (৩৫), লিজন (২৮), আলাউদ্দিন (৫৬), মিঠু (৪২), জসিম (৩২), গাজী জাবেদ (৩৫), গাজী খলিল মেম্বার (৬২), সেলিম (৩৫), আব্দুল আলী (৩৮), মোঃ রানা (৩৩), গাজী সামসুদ্দিন (৪৮), নাছির ওরফে নাছিম (৩৪), মেহেদি (৩৫), শাহজালাল (৩৫), অর্ণী আলম (২৮), সঞ্জল চন্দ্র ঘোষ (২৬) , রিটু (৩১), শেখ আমান, ওয়ালিদ (২৮), ইয়াছিন আরাফাত (২৩) ও আদনান (২৩)।
মামলার বাদী ফারুক আহমেদ অভিযোগে উল্লেখ করেন, ফারুকসহ আরো কয়েকজন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেন্ডার দাখিলের উদ্দেশ্যে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ অভিমুখে যাচ্ছিলেন। এসময় আসামীগণ পূর্ব শত্রুার জের ধরে কাইকারটেক ও সোনারগাঁ চৌরাস্তা বাজার নামক স্থানে তাদের গতিরোধ করে পাচলক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আসামীদের হাতে ধারালো চাকু, চাপাতি, লোহার রড, হকিস্টিক, লোহার রড ছিল। বাদী চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আসামীদের তাদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন। তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে কাইকারটেক হাটের ইজারার দরপত্র জমা দিতে পারবো না বলে হুমকি প্রদান করে। আমি তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করিলে, তাহারা আমাকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালিজ করে। এ সময় আমি প্রতিবাদ করিলে ১নং ও ২নং বিবাদীর নেতৃত্বে সকল বিবাদী মিলে একযোগে আমাকে কিলঘুষি লাথি মেরে লীলাফুলা জখম করে। ১০ নং বিবাদীর হাতে থাকা লোহার ধারালো চাপাতিটি ১ নং বিবাদীর হাতে আগাইয়া দেয়। এ সময় ১ নং বিবাদী উক্ত লোহার ধারালো চাপাতি দিয়ে আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে আমার মাথায় কোপ মারে। এতে আমার মাথায় কোপালের উপর ডান পাশে কেটে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জম হই। এক পর্যায়ে আমি মাটিতে লুটিয়ে পরিলে, ২ নং বিবাদীর হাতে থাকা ধারালো রামদা দিয়ে খুন করার উদ্দেশ্যে আমার মাথার বাম পাশে কোপালের উপর কোপ মারিয়া মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম করে এবং অন্যান্য বিবাদীরা তাদের হাতে থাকা লোহার রড, হকি ঠিক, হাতুড়ি ও লাঠিসোটা দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারিভাবে পিটাইয়া রক্তাক্ত জখম করে আহত করে। এসময় ৫ নং বিবাদী আমার গলায় তাহার পা দিয়ে চাপা দিয়ে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। ৬ নং বিবাদী আমার হাতে থাকা ব্যাগের ভেতরে রক্ষিত তিন লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় আমি ডাক চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসতে থাকে । পরে আমার সাথে থাকা আমার ছেলে রোবায়েত, আমার ভাই ডাঃ আক্তার হোসেন ও চাচাতো ভাই রাজিব প্রধান আমাকে বাঁচাইতে এগিয়ে গিয়ে বিবাদীদের বাঁধা দিলে সকল বিবাদীগণ তাদেরকেও লোহার রড, হকি ষ্টিক ও লাঠিসোটা দিয়ে পিটাইয়া লীলাফুলা জখম করে। পরে আমার চাচাতো ভাই রাজিব প্রধান আমাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করিয়া স্থানীয় সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে।