সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে বিরল ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র তিনদিন পুর্বে দায়েরকৃত মামলার আসামিরা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পুলিশের আগে, যেখানে স্থানীয় সোনারগাঁও থানা পুলিশ শ্রদ্ধা নিবেদনে ছিলেন পেছনের সিরিয়ালে। সদ্য দায়েরকৃত মামলার আসামিরা পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরছেন বীরদর্পে। যেখানে পুলিশের ভুমিকা অসহায়ত্বের। আসামিদের গ্রেপ্তার তো দুরের কথা, উল্টো আসামিদের দাপটে টটস্থ দেখা গেলো পুলিশকে। শ্রদ্ধা নিবেদনে আসামিদের পেছনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান ছিলো পুলিশ। একুশের প্রথম প্রহরে সোনারগাঁও উপজেলা চত্বরে নির্মিত শহীদ মিনারের সামনে এমনটাই দেখা গেলো।
ঘটনা সুত্রে জানাগেল’ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত কাইকারটেক হাটের ইজারা নিয়ে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম সহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ছাত্রলীগের এক নেতা। সংঘর্ষের ঘটনায় ইতিমধ্যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলায় চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, রফিকুল ইসলাম নান্নু ও মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম সহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর মামলাটি করেছেন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম সজল। মামলায় রবিউল হোসাইন, রোমান, হৃদয়, অনিক, আলামিন ও শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলায় মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুম বাবু, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম হলেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই জানান, তারা তিনজনই উপজেলা আওয়ামীলীগের মুল কমিটিতে রয়েছেন। তারা আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। চেয়ারম্যান বাবু কায়সার হাসনাতের আত্মীয়। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের ছোট ভাই মাসুম।
একুশের প্রথম প্রহরে উপজেলা চত্বরে শহীদ মিনার বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে উপজেলা আওয়ামীলীগ। উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু নেতাকর্মীদের নিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। সেখানে তাদের সঙ্গে শ্রদ্ধা নিবেদনে যান উপরোক্ত শীর্ষ তিন আসামিও। উপজেলা আওয়ামীলীগের পেছনেই শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান ছিলেন সোনারগাঁও থানা পুলিশ। আসামিদের গ্রেপ্তার তো দুরের কথা উল্টো আসামিদের যেনো পুলিশ অগ্রাধিকার দিলো। তারা শ্রদ্ধাঞ্জালি নিবেদনের পর পুলিশ শহীদ মিনার বেদীতে শ্রদ্ধা জানান।
উপরোক্ত আসামি ছাড়াও আসামি করা হয়েছে-মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শিপন মেম্বার, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এস.কে সজিব, সুমন, নূরে আলম, শফিকুল ইসলাম সাগর, হৃদয় প্রধান, অনিক প্রধান, আল আমিন, রোমান বাদশা, রবিউল, মলিন, শান্ত , পায়েল, রানা, রক্সি ও মামুনকে।
লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ঐতিহ্যবাহী কাইকারটেক হাটটি ইজারা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর সমর্থক রোমান বাদশা হাট পরিচালনা করে আসছিল। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি অনুগামী মামলার বাদী সিরাজুল ইসলাম সজল তার লোকজন নিয়ে ওই হাটের দরপত্র জমা দিতে যান। এতে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নান্নুর অনুগামী মোগরাপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সজিব, যুবলীগ কর্মী সাগর, হৃদয়, অনিক, পলাশ, পায়েল সহ ২০/২৫ জনের একদল যুবলীগের নেতাকর্মীরা এসে বাধা দেন এবং ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
আরো অভিযোগ করা হয়- চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে নান্নুসহ অন্যান্য আসামীদের হুমকি দিয়ে হামলা চালায়।হামলায় শেখ মেহেদী হাসান, সজল, জাবেদ মিয়া, পারভেজ মিয়া, রানা, মিরাজ হোসেন, আব্দুল আলী ও বাবু সহ ১৩ জন আহত হন। ৩জনকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ পাসপাতালে পাঠানো হয়।