সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নিজ সন্তান সফিউল্লাহ মল্লিকের করা মিথ্যা চেক জালিয়াতির মামলায় স্বাক্ষ্য দিতে পঙ্গু বাবা সাইফুদ্দিন মল্লিক তার স্থায়ী নিবাস সিরাজগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে এসেছেন ও হুইল চেয়ারে বসে আদালতে স্বাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
হৃদয় বিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছে ২৪ ফেব্রুয়ারি বৃহম্পতিবার নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিসুর রহমান সাইফুদ্দিন মল্লিকের স্বাক্ষ্য শুনেন এবং চেকের লেখাটি হস্তলেখা বিশারদের কছে প্রেরনের নির্দেশ দেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ নিবাসী সাইফুদ্দিন মল্লিকের ৬ ছেলে ও এক মেয়ে। তার বড় ছেলে সফিউল্লাহ মল্লিকের সাথে অপর দুই ছেলে সোহেল মল্লিক ও তারেক মল্লিক তাদের পৈত্রিক রং সুতার ব্যবসা পরিচালনা করতো। সফিউল্লাহ মল্লিক নারায়ণগঞ্জ থেকে ব্যবসার কাজ পরিচালনা করতো আর তার অপর ভাইয়েরা ও পিতা তাদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে বসবাস করতো। ব্যবসার সবিধার্থে সোহেল মল্লিক ও তারেক মল্লিক চেক বইয়ের পাতায় স্বাক্ষর করে বড় ভাই সফিউল্লাহ মল্লিকের কাছে রাখতো। এভাবেই তাদের ব্যবসার কাজ অনেকদিন যাবত চলে আসছিলো।
এ সময় সফিউল্লাহ মল্লিকের নজর পরে নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর পাবনা পট্রিতে অবস্থিত তাদের পৈত্রিক বাড়িটির দিকে। এ বাড়িটি তার নামে লিখে দিতে বাকি ভাইদের চাপ দিতে থাকে সফিউল্লাহ মল্লিক। কিন্তু তার ভাইয়েরা এতে রাজি না হওয়ায় তার কাছে রক্ষিত স্বাক্ষর করা চেক দিয়ে তার অপর দুই ভাই সোহেল মল্লিক ও তারেক মল্লিকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের অর্থঋণ আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেন। মামলায় চার্জ গঠন হলে বিবাদী পক্ষ চেক বইয়ের স্বাক্ষর তাদের হলেও লেখা তাদের নয় বলে দাবি করে হস্তলেখা বিশারদের কাছে প্রেরণের আবেদন করেন আদালতে।
সেইসাথে তাদের পিতা সাইফুদ্দিন মল্লিক তার বড় ছেলে সফিউল্লাহ মল্লিকের বিরুদ্ধে আদালতে লিখিত হলফনামা দাখিল করেন। আদালত সাইফুদ্দিন মল্লিককে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে স্বাক্ষ্য প্রদানের নির্দেশ দিলে বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জে আসেন পঙ্গু পিতা সাইফুদ্দিন মল্লিক এবং হুইল চেয়ারে বসে আদালতে স্বাক্ষ্য দেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিসুর রহমান সাইফুদ্দিন মল্লিকের স্বাক্ষ্য শুনেন এবং চেকের লেখাটি হস্তলেখা বিশারদের কছে প্রেরনের নির্দেশ দেন।
এদিকে আদালতের নির্দেশনা শুনে পিতার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন সফিউল্লাহ মল্লিক এবং পিতাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে মারতে উদ্যত হন বলে জানান তার অপর সন্তানেরা। সেইসাথে আর আদালতে এলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও প্রদান করেন বলে অভিযোগ করেন বিবাদী সোহেল মল্লিক ও তারেক মল্লিক। এ বিষয়ে সফিউদ্দিন মল্লিক তার ছেলে সফিউল্লাহ মল্লিকের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুুল্লা মডেল থানার এএসআই রাসেল বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। খুব শীঘ্রই তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে মাসদাইর এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাইফুদ্দিন মল্লিকের বড় ছেলে সফিউল্লাহ মল্লিক খুবই ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। তার বিরুদ্ধে একাধীক মামলা রয়েছে। ইতিপূর্বে সে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অনেক মানুষের সম্পদ আত্মসাত করেছে। এমনকি ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। সর্বশেষ সে তার নিজ ভাইদের সম্পদ আত্মসাতের লক্ষ্যে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন এবং বৃদ্ধ পঙ্গু পিতাকে আদালতে দাড়াতে বাধ্য করেন। সফিউল্লাহ মল্লিকের মতো ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে এলাকাবাসী।