সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে যদি কোন জুয়ারীর আসর পরিচালনাকারী, তেল চোর, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আর সেইসব অপরাধী যদি এমপিদের লোকজন হয় তাহলে আইন অনুযায়ী আদালত থেকে জামিন করিয়ে নিতে বললেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। তিনি বলেছেন, ‘আইন সবার জন্য সমান।’ এসময় তার পাশেই বসা ছিলেন এমপি সেলিম ওসমান।
পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ এমপি সেলিম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আজকে যে প্রবলেমটা হয়ে যায় আমি যখন কাউকে ধরে আনি, তখন কিছু লোক থাকে যাদের কোন কাজকর্ম নেই। তারাই বলবে, দেখছেন আপনার লোকজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। তাকে পেয়েছে একটা জায়গায় হয়তো জুয়া খেলা ছিল, অথচা তেল চুরির সঙ্গে ছিল, অথবা মাদক ব্যবসায়ে জড়িত ছিল তাকে ধরে নিয়ে আসছে। এখন সেই লোকটা যদি কারো হয়ে যায়, তাহলে সমস্যা নেই। আপনি তাকে জামিন করাইয়া নিয়া আইসা পড়েন। তাহলে সমস্যা হতোনা কেউ জানলো না। আমি মনে করি উনি (সেলিম ওসমান) যে বক্তব্যটা রেখেছেন আইন সবার জন্য সমান। আমরা আদালতে পাঠাবো আপনারা নিয়া আসবেন।
এর আগে এসপি বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমার আড়াই হাজার পুলিশ এখানে কাজ করছে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে একটা দুইটা তিনটা পুলিশ ভুল করে ফেলতে পারে। সেই ভুলটা যদি আমি জানি তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিব। ব্যবস্থা নিয়েছিও। অনেক পুলিশ সদস্যকে চাকুরীচুত্য করেছি। অনেক পুলিশ সদস্যকে আমি ক্লোজড করে রেখেছি কারন তাদের বিরুদ্ধে যখন কমপ্লেন আসছে। এটা নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির কোন অবসান নেই।
৯ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে বন্দরের লাঙ্গলবন্দ এলাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ¯œান উৎসবে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি এমপি সেলিম ওসমানের বক্তব্যের পর এমন কথা বলেন এসপি হারুন অর রশীদ। তবে সভার বেশির ভাগ বক্তব্যই ছিল নারায়ণগঞ্জে বর্তমান পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিরোধের বিষয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ নানা বক্তব্য। তবে সেলিম ওসমানও কম যাননি। তিনিও বলেছেন, ‘আজকে আমার চেয়ার আছে, কালকে নাও থাকতে পারে। এই চেয়ার কারো পৌত্রিক সম্পত্তি নয়। আগামী মিটিংয়ে হয়তো আমাকে এই চেয়ারে নাও দেখতে পারেন। হয়তো নাও থাকতে পারে ডিসি কিংবা এসপি। হয়তো আমরা এই এসপিকে বিদায় সংবর্ধনা দিব।’
পুলিশ সুপার আরও বলেন, উনি (সেলিম ওসমান) ব্যবসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে বলেছেন। আমি আরেকটা উনার সঙ্গে করতে চাই সেটা হলো মাদকটা নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্মূল করতে হবে। এটার সঙ্গে যদি আপনি থাকেন তাহলে এখন যেভাবে মাদকের বিরুদ্ধে পুুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে আগামীতে আরও দিগুণভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। এখন মাদক ব্যবসায়ীদের পাওয়া যায়না,ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পাওয়া যায়না, আমরা খুজছি। তেল চোরদের এখন আর পাওয়া যায়না। কারন ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধি দিয়ে পালিয়েছে।
তিনি এমপি সেলিম ওসমানকে আরও বলেন, আপনার সংসদীয় এলাকা সদর থানার কালিরবাজারে আমরা এক দিনে ৪১ জন জুয়ারীকে গ্রেপ্তার করেছি। অনেকেই এঁটার সাথে জড়িত। আমরা চাই নারায়ণগঞ্জে একটা সুস্থ্য পরিবেশ বিরাজ করুক। আপনারা যারা আইন প্রেণতা রয়েছেন আমাদের কোন ভুল হলে বলবেন। আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই, কোন দ্বন্ধ নেই, কোন কথা কাটাকাটি হয় নাই।
এর আগে সেলিম ওসমান বলেছেন, আজকের পর থেকে বরফ গলে যাবে। সাংবাদিক ভাইয়েরা আর খোচাখুচি কইরেন না।
সেলিম ওসমানের এমন বরফ গলার বিষয়ে এসপি বলেন, আমাদের মাঝে কোন বরফই নেই। বরফ গলার কোন প্রশ্নই আসেনা। আমরা উনারকে সম্মান করি উনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সেই হিসেবে উনার প্রতি আমাদের অনেক ভক্তি শ্রদ্ধা থাকবে। উনার এলাকায় আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে কাউকে গ্রেপ্তারের পর উনি যদি বলেন তাহলে অবশ্যই সেটা ভেরিফাই করব এবং ব্যবস্থা নিব।
এসপি বলেন, আমি কাজ করতে চাই। আমরা কাজের সুযোগ চাই। আশা করি নারায়ণগঞ্জ যে একটা প্রাচ্যের ডান্ডি, যে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছে, যে নারায়ণগঞ্জে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এসেছেন। সারা পৃথিবীর মানুষ নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা বানিজ্য করেছেন, সেই নারায়ণগঞ্জকে যদি সুন্দর শহর গড়তে চাই তাহলে অবশ্যই মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। সেই কাজটিই আমরা করছি। এখানে অনেক চাঁদাবাজ আছে, অনেক মাদক ব্যবসায়ী আছে, অনেক ভূমিদস্যূ আছে, সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। আমরা শুধু সেগুলো দেখতে চাই। আপনি শুধু আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন কারা ভুমিদস্যূতায় জড়িত, কারা তেল চুরির সাথে জড়িত, আপনি যেহেতু বলেছেন এগুলোর বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা নিতে, আমরা পুলিশ বাহিনী আরও দিগুণ উৎসাহিত হয়ে এগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করব। তবে অবশ্যই কোন নিরীহ মানুষ যেনো হয়রানি না হয়। কোন পুলিশ কর্মকর্তার দ্বারা সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসপি আরও বলেন, এখন আমাদের পুলিশকে কোন দিকে ফেলানোর কেউ যেনো চেষ্টা না করে। আমরা আমাদের ওয়ে থেকে আমরা সঠিক পথে থেকে কাজ করতে চাই।’
সেলিম ওসমানকে ধন্যবাদ জানিয়ে এসপি বলেন, উনি পবিত্র মক্কা থেকে উনি আমাকে রিং দিয়েছেন যে, আমার সঙ্গে এক কাপ চা খাবেন। উনি আমাকে ¯েœহ করেন আদর করেন। এ কারনেই করেন উনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এসপি বলেন, আজকে যে লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশটি স্বাধীন করেছি। মানুষ যেনো কোনভাবে কথা বলার সুযোগ না পায়, সেটা যেমন আমাদের দেখার দায়িত্ব তেমনি সাংবাদিক ভাইদেরও দায়িত্ব। আপনারা কোন বিষয়ে খোচা দিয়ে আমাদের মাঝে কারো সাথে কারো বৈরিতা সৃষ্টি করবেন না। তাহলে আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে একটা সুন্দর নারায়ণগঞ্জ যেটা বলা যায় তাতে পুলিশ বাহিনীকে যেমন উৎসাহিত করবেন ্এবং যারা খারাপ লোক, সবচেয়ে খারাপ লোক মাদক ব্যবসায়ী, ভুমিদস্যূ, সন্তাসী চাঁদাবাজ তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে পুলিশকে উৎসাহিত করবেন।
এসময় হিন্দু নেতৃবৃন্দ সহ জেলা পুলিশের অন্যান্য উর্ধ্বতম কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এখানে উল্লেখ্যযে, গত ২৯ মার্চ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ কর্মী মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহনিজামের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করেছিলেন ওই থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের। জিডির একদিন পর ভারতে চলে গেছেন শাহনিজাম। এছাড়াও এর দুইদিন পর ফতুল্লায় ভাসমান মেরী আন্ডারসন জাহাজের বার থেকে বিয়ার ও মদ উদ্ধার করে পুলিশ ও ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় মামলায় শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুকে মাদক বিক্রয়ে সহযোগীতাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। তিনিও ভারতে চলে গেছেন। এছাড়াও শিশু সাকি অপহরণের অভিযোগ করা হয় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলের বিরুদ্ধে। তিনিও পরবর্তীতে ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে চলে গেছেন। এর আগে শামীম ওসমানের আরেক কর্মী মীর হোসেন মীরুকে দুইবার মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়। শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের শ্যালক বিকির বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়। নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি জুয়ার আসন থেকে ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মহানগর শ্রমিকলীগের সেক্রেটারি কামরুল হাসান মুন্না ও বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কবির হোসেন সহ ২২জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়।
এসব ঘটনায় ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে প্রতিবাদ সভা করেছেন গত বুধবার। ওই দিন নারায়ণগঞ্জ শহরে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে মহড়া দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। ওইদিন শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে জলকামান, সাজোয়া যান, পুলিশ আর্ম কার দেখা যায়। এর আগে গত ২ মার্চ শামীম ওসমানের সমাবেশের সামনেও পুলিশের এমন প্রস্তুতি দেখা যায়। বুধবার পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেছেন, অপরাধী কাউকে ছাড় দিব না, সে যত বড় ক্ষমতাশালী লোক হোক।’
এদিকে গত শনিবার ফতুল্লার বাংলা ভবনে জরুরী কর্মী সভা করেছেন শামীম ওসমান। যেখানে তিনি নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আইভী, এসপি হারুন অর রশীদ ও কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশকে ইঙ্গিত করে বেশ কিছু বক্তব্য রাখেন। ওই কর্মী সভায় পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে শ্লোগানও দিয়েছিল নেতাকর্মীরা। পুুলিশের কঠোর অবস্থান নিয়ে বক্তারা সেদিন কঠোর সমালোচনাও করেন। এর আগে ৩ এপ্রিল ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করেন। গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার সিদ্ধান্ত জানালো পরবর্তীতে আর ব্যবসায়ীরা স্মারকলিপি দেননি।