সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত ১৫ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাজী শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি এক হাজারাধিক ভোটের ব্যবধানে বিদ্রোহী প্রার্থী আরিফ মাসুদ বাবুর কাছে পরাজিত হোন। নির্বাচনে উপজেলার শীর্ষ বেশকজন নেতার ভুমিকা নৌকার পক্ষে ছিলো না।
ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ও রফিকুল ইসলাম নান্নু নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন সোহাগ রনি।
সোহাগ রনির এমন অভিযোগেই নাস্তানাবুদ উপজেলা আওয়ামীলীগ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের তদন্ত ছাড়াই সোহাগ রনির অভিযোগের বিরোধীতা করলো উপজেলা আওয়ামীলীগ। উল্টো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত না করেই তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টায় নেমেছেন আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা। যারা দুদিন আগেও বিবাদে বিরোধে ছিলেন সেইসব নেতারাও একজোট হয়েছেন সোহাগ রনির বিরুদ্ধে। ৪ জুন সোমবার উপজেলা আওয়ামীলীগের জরুরী সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটাই দেখা গেলো। বিরু, কায়সার কালাম সামসুর হটাত এমন একতার সূরে কথার বলায় রহস্য দেখছেন স্থানীয়রা।
জানাগেছে, সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির জরুরী বর্ধিত সভা শেষে আওয়ামীলীগের আহবায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়ার পক্ষে লিখিত বক্তব্য শোনান উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম।
লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, গত ১৫ জুনের মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরাজিত প্রার্থী সোহাগ রনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সোনারগাঁও তথা বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে আসছে। যা খুবই দুঃখজনক। আমরা গত ১১ জুন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির বর্ধিত সভার মাধ্যমে নৌকার প্রার্থী সোহাগ রনির পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মোগরাপাড়া ইউনিয়নে নৌকাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করেছি।
উপজেলা আওয়ামীলীগ উল্টো দাবি করে- প্রার্থীর নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতার কারণে দ্বারপ্রান্তে গিয়েও নৌকাকে জিতাতে পারিনি। যার ফলে প্রার্থী তার নিজের দায় এড়াতে বিভ্রান্ত হয়ে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়সার, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, আহবায়ক কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, রফিকুল ইসলাম নান্নু সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন লাইভে ও বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ও এমন একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। যাহা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে তিনি জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক সামসুল ইসলাম ভুইয়া, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কায়সার হাসনাত, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান মাসুম, সদস্য আবু জাফর চৌধুরী বিরু, রফিকুল ইসলাম নান্নু। সোহাগ রনির অভিযুক্ত ৪জনকে নৌকার পক্ষে কেন প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যাযনা- স্থানীয় এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার হাসনাত দাবি করেন- জেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে লিফলেট বিতরণে নান্নু ছিলেন। নামকাওয়াস্তে নান্নুকে এমনটা দেখা গেলেও বাকি ৩জনের বিষয়ে কোনো সদুত্তোর দিতে পারেনি কায়সার হাসনাত।
অন্যদিকে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ গত ১৫ জুন সম্পন্ন হয়েছে। এই নির্বাচনে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও পরাজিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাজী শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি। নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা কৌশলে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন আরিফ মাসুদ বাবু। তিনি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান হোন। কিন্তু সোনারগাঁও উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীর্ষ নেতার ইউনিয়ন মোগরাপাড়ায় আওয়ামীলীগের নৌকা ডুবার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেনা তৃণমুল।
নির্বাচনের শুরুতেই আওয়ামীলীগের বিরাট অংশের নেতারা নৌকার পক্ষে মাঠে নামেননি। নির্বাচনের পরাজয়ের জন্য উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ ৪ নেতাকে দায়ী করেছেন সোহাগ রনি। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সোহাগ রনি।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক ড. দিপু মনি, বিপ্লব বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম বরাবর অনুলিপি প্রদান করা হয়।
লিখিত অভিযোগে যাবতীয় প্রমাণাদিসহ আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ও রফিকুল ইসলাম নান্নুকে অভিযুক্ত করেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ মদদে যারা আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগের পরিবারে হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন তাদের নামও সম্পৃক্ত করেছেন।
হাজী সোহাগ রনি অভিযোগপত্রে ২০০১ সালের ঘটনা টেনে ও কায়সার হাসনাতের পরিবারের অতীত ভুমিকা টেনে অভিযোগ করেন যে, ২০০১ সালে এই পরিবারটি নৌকার বিরোধীতা করে নৌকার পুড়িয়ে নৌকার প্রার্থী আবু নূর মোহাম্মদ বাহাউল হককে পরাজিত করেছিলো। ২০১৮ সালে মহাজোটের প্রার্থীর বিরোধীতা করে কায়সার হাসনাত সিংহ মার্কায় নির্বাচন করেছিলেন।
একইভাবে ২০১৪ সালে ও ২০১৯ সালে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী প্রয়াত মোশারফ হোসেনের বিরোধীতা করে বিদ্রাহী হয়েছিলেন মাহফুজুর রহমান কালাম। তার আপন ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম সহ তারাও মোগরাপাড়া নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করেছেন। ২০১৮ সালে সিংহের পক্ষে নির্বাচন করা রফিকুল ইসলাম নান্নুও মোগরাপাড়ায় নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। সোহাগ রনি অভিযোগ করেন- তাা ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতি করে অতীতে অনেকবার নৌকা ডুবিয়েছেন। তারা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ করে না। অতীতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা বারবার নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করে চলেছেন।