সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
আগামী ৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সম্মেলনে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর এই সম্মেলনের নামে আইওয়াশ করে এক কর্মীসভার মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতকে সাধারণ সম্পাদক করে মূলত নাম ঘোষণার লক্ষ্যেই এই সম্মেলনের আয়োজন। যেখানে অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে নিয়ে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা রয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে সরানো হলেই ৩রা সেপ্টেম্বর হবে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের জন্য ‘ঈদ আনন্দ’। তাদের দাবি- কর্মীশূন্য ওয়ানম্যান খ্যাত এই সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আর দেখতে চায় না সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু তার রাজনৈতিক গোড়া খুব শক্ত। নারায়ণগঞ্জ জেলার একজন প্রভাবশালী এমপির ছত্রছায়ায় বারবার এই সামসুল ইসলামকে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার নিজ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তার বাড়ির কেন্দ্রে নৌকা ভোট পায়নি দুইশো!
জানাগেছে, এর আগে অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একই সঙ্গে কয়েক বছর যাবত তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে তিনি নৌকা প্রতীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। ৩রা সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে তাকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাহলে তিনিই হবেন সোনায় সোহাগা, এমন একজন নেতা। যার ঢাল নেই, তেলোয়ার নেই নিধিরাম সরদার।
অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বপ্ন দেখছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতকে সভাপতি করা হোক। কিন্তু সেই সম্ভাবনা হয়েও ওঠছেনা সামসুল ইসলাম ভূঁইয়ার উপর কালো শক্তি কাজ করায়। যদিও সামসুল ইসলাম ভূঁইয়ার পক্ষে অনেকে নেতাকর্মীর দাবি- তিনি দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করেছেন। একজন স্বচ্ছ রাজনীতিক। তার নেতাকর্মী যেমন নেই, তেমনি তার কোনো বাহিনী নেই, তিনি মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, সন্ত্রাস, এসব অপরাধীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেন না। ধান্দাবাজির রাজনীতি করেন না। তার আইন পেশা দিয়েই জীবিকা নির্বাহ হয়। এসব কারনে সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকেই নেতৃত্বে যোগ্য মনে করেন কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা।
এদিকে অনেকে স্বপ্ন দেখছেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতকে সভাপতি ও ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি ঘোষিত হলে শক্তিশালী একটি সংগঠনের পরিণত হবে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ। এরি মাঝে যদিও বিশাল কর্মীসমর্থকদের নেতা, এক সময় সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহফুজুর রহমান কালাম। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দলীয় শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাকে। যদিও আওয়ামী লীগ তাকে সেই দায় থেকে মুক্তি দিয়ে ক্ষমা করে দিলেও দায়মুক্তি দিতে চাচ্ছেনা নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। যে কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসা কালামের জন্য অনিশ্চিত ও খুব কঠিন সমীকরণ।
এদিকে আবার নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন কায়সার হাসনাতকে সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আবু জাফর চৌধুরী বিরুকে সাধারণ সম্পাদক করা হলে সোনারগাঁও উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মাঝে ব্যাপক সমন্বয়ের মাধ্যমে শক্তিশালী একটি সংগঠনে পরিণত হবে উপজেলা আওয়ামী লীগ। তারা দুইজন পৃথকভাবে রাজনীতি করলেও দু’দিক থেকেই নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ভাব সৃষ্টি হবে। যার ফলে শক্তি ফিরে পাবে সোনারগাঁও আওয়ামী লীগ। যদিও বিরুকে নেতৃত্ব নিয়ে আগ্রহী দেখা যাচ্ছেনা।
কিন্তু নেতাকর্মীদের এসব দাবি ও বিশ্লেষণ উড়িয়ে দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াই অনেকটা নিশ্চিত। এক্ষেত্রে হয়তো সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে কিছুটা সন্ধিহান থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে কায়সার হাসনাতেরই সম্ভাবনা বেশি। এর কারণ হিসেবে আবার অনেকেই বলেছেন সম্মেলনে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদটি ঘোষণা করা হবে। সেখানে মাসুমকে সিনিয়র সহ-সভাপতি কিংবা সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে পরবর্তীতে তাকে অধিষ্ট করা হবে। তবে সেই ঘোষণাটি তাকে ঝুলিয়ে রাখা হবে, যাতে করে মাসুমের মাধ্যমে অনেক নেতার পকেট ভারি হতে পারে। আবার কোনো পদ ঘোষণা না করেই সম্মেলন কর্মীসভার মাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে শেষ করা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। সামসুকে বাদ দিয়ে কায়সার ও মাসুমের নাম ঘোষণা করা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।
স্থানীয়দের সূত্রে, বর্তমানে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগ পরিচালিত হলেও সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯৭ সালে। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে ১৩ জন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
১৯৯৭ সালের সম্মেলনে আবুল হাসনাতকে সভাপতি ও আবদুল হাই ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৪ সালে আবুল হাসনাত এবং ২০১৪ সালে আবদুল হাই ভূঁইয়া মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান মাহফুজুর রহমান কালাম। পরে ওই কমিটির আরও ২০ জনের মৃত্যু হয়। পরে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে ১৭ বছর চলার পর ২০১৯ সালে কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে বাদ পড়েন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও আগের কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। পরে কায়সারপন্থীরা এ আহ্বয়াক কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করলে ২০২১ সালে আব্দুল্লাহ আল কায়সারকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে ২য় যুগ্ম আহ্বায়ক করে নতুন করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।