সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আগামী ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের এই সম্মেলনকে ঘিরে চাঙা হয়ে ওঠেছে কাউয়া, হাইব্রিড ও সুবিধাবাদীরাও। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর উপজেলায় আওয়ামীলীগের ৪ শ্রেণির নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। যে কারনে যারা ২০০১ সাল থেকে বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যারা রাজপথে রক্ত ও ঘাম ছড়িয়েছেন তাদের মধ্যে বেশিভাগ নেতাকর্মী কোণঠাসা। এখানে কাউয়া হাইব্রিডের সঙ্গে যোগ হয়েছে হটাত গজিয়ে ওঠা নেতারাও। একইসঙ্গে বিভিন্ন দলছুট নেতাদের ভীড় জমেছে আওয়ামীলীগে। এ ছাড়াও ঢাকাস্থ যেসব নেতারা রাজনীতি করেছেন তারাও এখন পাড়ি জমিয়েছে সোনারগাঁয়ে। রাজধানীর রাজনীতিতে যারা পেছন সারির কর্মী তারাও এখন সোনারগাঁওয়ে বড় মাপের নেতায় পরিনত হচ্ছেন।
এখানে আওয়ামীলীগ দাবি করা নেতা কিংবা বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে যাদেরকে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে দেখা যায়নি, দলের পাশে দাঁড়ায়নি, বিএনপি জামাতের সঙ্গে আতাত।করে চলেছেন, তারাই এখন সোনারগাঁয়ে বড় মাপের আওয়ামীলীগ নেতা। কেউ কেউ পারিবারিক সূত্রে, কেউ কেউ ভাইসূত্রে, পিতাসূত্রে, কেউ কেউ বোনজামাতা সূত্রে এখন আওয়ামীলীগের বড় নেতা। কেউ কেউ দেশের বাহিরে থেকেও নৌকা প্রত্যাশি ঘোষণা দেন, কেউ কেউ বিদেশে বসেও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের বড় পদ ভাগিয়ে নেয়ার হুংকার দেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিএনপি জামাত শিবিরের রাজনীতি করার, তারাই এখন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের নীতিনির্ধারক শীর্ষ নেতা।
এ যেনো উপজেলা আওয়ামীলীগ এক হরিলুটের মালখানা। কিন্তু এই সম্মেলনে কাউয়া, হটাত গজিয়ে ওঠা হাইব্রিড, দলছুট সুবিধাবাদী ও ভূইফোড় নেতাদের নিপাত চায় সো উপজেলা আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে যারা বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যারা তৃণমূল থেকে ওঠে এসেছেন, যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে ছিলেন এদের মাধ্যমেই পুরো উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির গঠন দেখতে চায় তৃণমূল।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সোনারগাঁও উপজেলা এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকা নিয়ে ছিল নারায়ণগঞ্জ-৩। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সেটা বিভক্ত হয়ে আবারো সোনারগাঁও এলাকা নিয়ে গঠিত হয় এই আসনটি। জেলার ৫টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে রাজনৈতিক আলোচনা সমালোচনা সোনারগাঁয়ের রাজনীতি নিয়ে।
বিশেষ করে এখানে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে চেয়ার দখল-বেদখলের যে লড়াই, তাতে নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। এই ক্ষমতা দখলের কামড়াকামড়িতে এ আসনটি আওয়ামীলীগ নেতাদের হাতছাড়া হয়েছে অনেক আগেই। এরি মাঝে গজিয়েছে বহু কাউয়া হাইব্রিড, কিংবা বিদেশী প্রবাসী বিনদেশী আওয়ামীলীগারের। রাজধানীর রাজনীতি থেকে সোনারগাঁয়ে এসে ঘাটি বসিয়েছেন অনেক আওয়ামীলীগার, কেউ কেউ ঘাটি বসানোর চেষ্টায়। তাহলে সোনারগাঁয়ের রাজপথের ত্যাগীদের কি হবে?
সোনারগাঁয়ের অলিগলি নিয়ন্ত্রণের লড়াই থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান সহ আগামীতে এমপি হওয়ার লড়াই শুরু হয় প্রতিটি নির্বাচন নাগাদ সময়ে। এমন লড়াইয়ের সুযোগে নিজেদের পাল্লা ভারি করতে কেউ কেউ ঠাঁই দিয়েছেন কাউয়া হাইব্রিডদের। বর্তমান পরিস্থিতিটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কাউয়া হাইব্রিডের চাপাচাপিতে বিএনপি-জামাত জোট সরকার আমলে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হওয়া ত্যাগী নেতাকর্মীরা যেনো পালিয়ে বাঁচে। কেউ কেউ লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখেন।
এখানকার আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে কাউয়া হাইব্রিড কিংবা যারা বিএনপি-জামাত শিবিরের সঙ্গে রাজনীতি করতেন, কিংবা ওই সময়কার বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সমর্থক কিংবা সুবিধাঘেষা ছিলেন তারাও আজকে আওয়ামীলীগের কথিত ত্যাগী নেতাকর্মী হিসেবে সোনারগাঁয়ে আভির্ভূত হয়েছেন। যারা ঢাকার রাজনীতিতে সুযোগ বুঝে দলে নাম লিখিয়েছেন তারাও এখন সোনারগাঁয়ে। একইভাবে যারা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন তারাও এখন সোনারগাঁয়ে ভীড় জমিয়েছেন। কোনো কোনো নির্বাচন আসলে সেই ভীড় আরো বেড়ে যায়। এখানে অর্থনীতিবিদ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার প্রবাসি বিনদেশীরাও আওয়ামীলীগের নেতা কিংবা নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি হয়ে যান।
এমন পরিস্থিতিতে আবার নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরীর নেতারাও সোনারগাঁয়ে এসে কিংবা জেলা মহানগরীতে বসেও ছড়ি ঘুরাতে পারেন। জেলার শীর্ষ নেতাদের পদচারণাই সবচেয়ে বেশি সোনারগাঁয়ের অলিগলি। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকে জানান জাতীয় নির্বাচনে এমন সব ব্যক্তিরা সোনারগাঁও থেকে নৌকার মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন যারা সোনারগাঁয়ের মাটির সন্তানও নয়, আবার সোনারগাঁয়ে কখনও রাজনীতিও করেননি। যে কারনে গত নির্বাচনে জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘সোনারগাঁও আসনটি গরীবের বউ, সকলের ভাবি।’ এখন আবার কেউ কেউ বলছেন, সোনারগাঁও মধুকুঞ্জ।
তবে জোট সরকার আমলে রক্ত ও ঘাম ঝড়ানো শরীর নিয়ে আওয়ামীলীগে টিকে থাকার লড়াইয়ে এবার স্বপ্ন দেখছেন ত্যাগীরা। কারন ৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে যাচ্ছেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। শীর্ষ পদে থাকছেন ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম। আওয়ামীলীগের পরিক্ষিত এই তিন নেতার উপর ভরসা পাচ্ছেন জোট সরকার আমলের ত্যাগীরা। এদের নেতৃত্বেই নিপাত যাবে কাউয়া হাইব্রিড, হটাত গজিয়ে ওঠা আগাছা ও সুবিধাবাদীরা। কারন জোট সরকার আমলে এই তিন নেতা শরীরের রক্ত ঘাম রাজপথে জড়িয়েছেন, তাই ত্যাগীদের মুল্যায়ন তারাই করবেন। জোট সরকার আমলে কায়সার হাসনাতের শরীরের রক্তে সাদা পাঞ্জাবি লাল হওয়ার দৃশ্য যেনো ত্যাগীদের বড় ভরসা।