সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের বাড়ির প্রধান ফটকের দেয়াল ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে। জয়নাল আবেদীন তার লোকজন দিয়ে দেয়াল ভেঙ্গে দেয়। শুধু তাতেই তিনি খ্যান্ত হননি সেই দেয়াল মেরামত করতে গেলে দেয়ালের কাজে বাধা দেয় জয়নাল আবেদীন।
১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকায় অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের বাড়ির প্রধান ফটকের দেয়াল মেরামতের সময় লোকজন নিয়ে সেখানে বাধা দেয় জয়নাল আবেদীন। তবে বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, যেখানে দেয়ালে কাজ করা হচ্ছে সেই জায়গাটি আমার। এমনকি হাসান ফেরদৌস জুয়েল যে জায়গাটি ৪ শতাংশ নিজের দাবি করে দখলে রেখেছেন সেই জায়গাটিও আমার। জমিটি নিয়ে মামলা চলছে। আমি দেয়াল ভাঙ্গিনি। আমার জায়গায় দেয়াল তৈরি করা হলে আমি সেখানে বাধা দিয়েছি কিন্তু ভাংচুর করিনি।
তিনি আরও বলেন, ৪ শতাংশ জমিটি যদি জুয়েল মালিকানা পায় তাহলে আমি ছেড়ে দিব। যদি এ বিষয়ে আইনজীবীদের নিয়ে বসতে চায় তাহলে আমি বসতে রাজি আছি। এমনকি বসার আগে আমি প্রয়োজনে হলফনামা দিয়ে বসবো যে, যদি আমি কাগজ পত্রে না পাই তাহলে জায়গাটি ছেড়ে দিব। আর যদি সে পায় তাহলে সে ছেড়ে দিবে।’
তবে জয়নাল আবেদীন এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, যদি জুয়েল বলে থাকে আমি দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছি তাহলে দিয়েছি। কারন জায়গাটি আমার। এবং ৪শতাংশ জমিটিও আমার। এটা নিয়ে মামলা চলমান আছে। আমি বসতে রাজি আছি যদি জায়গা না পাই তাহলে ছেড়ে দিব।’
যদি জায়গাটি আপানার হয় তাহলে আপনি দেয়াল না ভেঙ্গে কিংবা আপনার জায়গায় দেয়াল নির্মাণ করা হলে সেখানে আইনের আশ্রয় না দিয়ে আপনি নিজে কেন কাজে বাধা দিতে গেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আজকে আমার জায়গায় গিয়েছি। গিয়ে দেখি তারা দেয়াল নির্মাণ করছে তাই বাধা দিয়েছি।’
আপনি জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের নাম উল্ল্যেখ করে নির্মাণ কাজে থাকা শ্রমিকদের বলেছেন এসপি সাহেবের নির্দেশ আছে এখানে কাজ করা যাবেনা। এমন বিষয়টি সত্য কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সত্য না। এসপি সাহেব আমাকে নির্দেশ দিবে কেন? আমি তো পুলিশ না।
এ বিষয়ে আদালতপাড়ায় আইন পেশায় কর্মরত অবস্থায় অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল বলেন, আমার ৪ শতাংশ জমিটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে জয়নাল। প্রবেশের গেটের দেয়ালটি জয়নাল লোকজন দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। সেখানে আবারো মেরামত করতে গেলে বৃহস্পতিবার জয়নাল নিজে লোকজন নিয়ে গিয়ে কাজে বাধা দিয়েছে।’
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে নারায়ণগঞ্জ সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলের বাবা তার জীবনের শেষ আয়ের টাকা দিয়ে ৪শতাংশ জমিটি কিনেন। কিন্তু আল জয়নাল সেই জমির চার দিকের জমিগুলো ক্রয় করে জুয়েলের এ জমি দখলের চেষ্টা করেন। প্রভাব খাটিয়ে জুয়েলের কাছ থেকে জমি ক্রয় করারও প্রস্তাব দেয় জয়নাল। জমিটি বিক্রি করতে সম্মত না হওয়ার কারণে জোর করে জয়নাল দেয়াল নির্মাণ করেন। ওই সময় জয়নালের লোকজন জুয়েলের আপন ভাইকে মারধর করে চোখ উপড়ে ফেলেছিলেন বলেও থানায় মামলা হয়।
এই জমিয়ে নিয়ে এর আগে জুয়েলের একটি মামলায় জয়নালের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরে একই দিন জয়নাল মীমাংসার প্রস্তাবের শর্তে জুয়েলের জিম্মায় জয়নালকে জামিন দেন আদালত।
জানাগেছে, ২০১৫ সালের এপ্রিলে মামলায় জয়নালকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। মামলার বাদী ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল। নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম শফিকুল ইসলামের আদালতে স্বশরীরে জয়নাল আবেদীন হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তবে বিকালে সমঝোতায় তিনি ছাড়া পেয়েছেন। বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জের আদালত জয়নালকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিলেও কোর্ট পুলিশ তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে সমঝোতার জন্য আদালতের গারদে রেখে দেয় বিকাল ৪টা পর্যন্ত। অবশেষে বিকালে বাদীর সঙ্গে আপস ও সমঝোতার ভিত্তিতে বাদী অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলের জিম্মায় জামিন পান জয়নাল আবেদীন।
জমিসংক্রান্ত মামলাটি ছাড়াও ফেরদৌসের ছোট ভাইয়ের ওপর হামলা ও চোখে উপরে ফেলে হত্যাচেষ্টার অভিযোগেও দায়ের করা মামলায় জয়নালকে সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ওই মামলায় জয়নাল হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন।