সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির পারিবারিক রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কিন্তু কমিটি গঠনের পর সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে রাজনৈতিকভাবে ল্যাং মারতে গিয়ে উল্টো হোঁচট খেয়েছেন কমিটির বিরোধিতাকারীরা।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ- যারা একসময় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মঞ্চে উঠে রাজনীতি করেছেন তারাই এখন সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে কমিটির বিরোধিতা করছেন। একই সঙ্গে গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগের একটি পরিবারের হয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন একজন এবং সেই প্রার্থীর পক্ষে যারা কাজ করেছিলেন তারাও এখন মহানগর বিএনপির বিরুদ্ধে নেমেছেন। তবে বিরোধিতা করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছেন উল্টো।বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কৃত অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার দলের বিরুদ্ধে গিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যখন বহিষ্কৃত হয়েছেন, তখন সেই বহিষ্কৃত নেতার হাতে পদত্যাগ পত্র তুলে দিয়েছেন মহানগর বিএনপির কমিটিতে পদ পাওয়া বেশ কয়েকজন নেতা।
ঘটনা সূত্রে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালামকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং পিঠের চামড়া তুলে নেয়ার হুমকিদাতা মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুলকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা সম্পর্কে এ ধরনের অশালীন মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা বলেও জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
গত ১৮ই সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটির প্রথম বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয় নারায়ণগঞ্জ নগরীর চাষাড়া শহীদ মিনারে। কিন্তু এই কর্মসূচিকে বানচাল করার লক্ষ্যে বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার হুট করেই একইদিন একই সময়ে তার নিজ বাসভবন মাসদাইর এলাকায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন, যেখানে বিএনপির কমিটির নেতাদের নিয়ে নানা ধরনের কটুক্তি করে বক্তব্য রাখেন বক্তারা। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি আওয়ামী লীগ পরিবারের পক্ষে নানা গুণকীর্তন ক্ষমতার লোভে দৃষ্টতা দেখিয়েছিলেন তৈমুর আলম। যে কারনে তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
ঘটনা সূত্রে আরো জানা গেছে, গত ১৩ই সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে অধিষ্ট হোন আতাউর রহমান মুকুল, যিনি একসময় বন্দর থানা বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির স্বঘোষিত সভাপতি হিসেবে দাবি করে আসছিলেন। দীর্ঘদিন যাবত বিএনপি নেতা দাবি করে তিনি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মঞ্চে উঠে রাজনীতি করেছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমান এর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনে কাজ করেছেন। এমনকি ধানের শীষের প্রতিকার প্রার্থী অভিযোগ করেছিলেন ধানের শীষের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে মারধর করে আতাউর রহমান মুকুল বের করে দিয়েছেন।
মুকুল ও তার অনুগামী সুলতানের বাধার কারনে জাতীয় নির্বাচনের সময় বন্দরের মদনগঞ্জ সিরাজউদ্দৌলা মাঠে সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে অন্যত্র মাঠে সমাবেশ করতে হয়েছিল বিএনপিকে। সেই আতাউর রহমান মুকুল এবার কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সালামকে নারায়ণগঞ্জে অবাঞ্চিত ঘোষণার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। একইসঙ্গে আব্দুস সালামের চামড়া তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতা সালামকে নিয়ে এমন বক্তব্য ও বিএনপির বহিস্কৃত নেতার হাতে পদত্যাগ পত্র তুলে দিয়ে উল্টো হোচট খেলেন সাখাওয়াত ও টিপুর বিরোধীরা। মুকুল গংদের এমন কর্মকান্ডে ক্ষেপেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।