সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত ৬ এপ্রিল ফতুল্লার বাংলা ভবনে আওয়ামীলীগের জরুরী কর্মী সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে ইঙ্গিত করে উত্তেজিত নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান বলেছিলেন, প্লিজ ডোন্ট প্লে এই নারায়ণগঞ্জে। কারো ফাঁদে পাড়া দিয়ে খেইলেন না। তবে খেলা হবেনা। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যেই টের পাইবেন।’ শামীম ওসমানের এমন ঘোষণার পর নেতাকর্মীরা ধরে নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের এসপি অন্যত্র বদলি বা পদোন্নতি হলে এখানে তিনি থাকবেন না। ওইদিন নেতাকর্মীরা এসপির বিরুদ্ধে নানা ধরনের শ্লোগানও দিয়েছিল। তবে শামীম ওসমানের ঘোষিত ১০/১২ দিনের মধ্যে ইতিমধ্যে ৬ দিন শেষ হয়ে গেছে। এখনও বাকি রয়েছে আরও ৬ দিন। যদিও শামীম ওসমান নেতাকর্মীদের কাছে স্পষ্ট বলেননি আসলে তিনি নেতাকর্মীদের কি টের পাওয়াবেন। তবুও জরুরী সভা শেষে নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা ছিল নারায়ণগঞ্জের বর্তমান এসপি নারায়ণগঞ্জে আর থাকছেন না। কার্যত সে রকম লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছেনা।
গত ৬ এপ্রিল বাংলা ভবনে ফতুল্লা আওয়ামীলীগের জরুরী কর্মী সভায় জেলা পুলিশ সুপারকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেছিলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের যদি কেউ খেলাতে চান, প্লিজ ডোন্ট প্লে, নারায়ণগঞ্জে খেইলেন না। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করবে। আর প্রশ্ন করার আগে তাকে জুয়ার মামলার আসামী করে দিবেন, কইরেন না। আমার আত্মীয়স্বজনকে মদের সাপ্লাইয়ার বানাবেন। মনে করবেন আমি ভয় পেয়ে যাবো। এগুলো করে আমাকে কাবু করা মছিমত। আমাকে কাবু করা যাবে না।’
শামীম ওসমান আরও বলেছিলেন, তবে আমাদের মাঝে যদি কেউ খারাপ হয তাকে আমরা ছাড় দিবনা। কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে যদি কাউকে ইচ্ছা করে জামেলায় ফেলার চেষ্টা করা তাহলে কথা দিচ্ছি নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চাড়া নাচাই দিব। এক সেকেন্ড ছাড় দিবনা, এক সেকেন্ডও না। একটা সেকেন্ড কোন নেতাকর্মীকে বিনা কারনে জামেলায় ফেলতে কেউ চেষ্টা করলে ছাড় দিবনা। কোন ব্যবসায়ী মাথা নত করে ব্যবসা করবেনা। কারন এই দেশ শেখ হাসিনার। এই নারায়ণগঞ্জও শেখ হাসিনার।
নেতাকর্মীদের আশ^স্থ করে বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কি খালেদা জিয়া? না। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। উনি নারায়ণগঞ্জের খোজ রাখেন কখন কি হচ্ছে। জাস্ট আগামী ১০/১২ দিনেই টের পাইবেন। আপনারা শান্ত থাকুন। তবে বাহিরের মানুষকে দোষ দিতে নাই। ভুল পদক্ষেপ নেওয়ায়ে বাহিরের মানুষকে ব্যবহার করতে চায়। সরকার আমাদের, প্রশাসন আমাদের, সিভিল প্রশাসন আমাদের, পুলিশ বাহিনী আমাদের, দায়িত্বও আমাদের। তাই নেত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে এমন কাজ আমরা করব না। আমাদের মৃত্যু হয়ে যাবে তাও নেত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে দিবনা।’
এসপিকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান আরও বলেছিলেন, তবে এই নারায়ণগঞ্জকে কেউ যদি এসে মনে করে ওই কাউন্সিলরকে ফাঁসাবো, ওই চেয়ারম্যানকে ঢুকাবো, কারো সাথে কন্ট্রাকে যাবো, ওইদিক থেকে চাঁদাবাজি করব, এখান থেকে চাঁদাবাজি করব, ব্যবসায়ীদেরকে ফোন করব, শ্রমিক নামধারী শ্রমিকরা আইসা নীট গার্মেন্টস মালিকদের ভয় দেখাবেন, বাস মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলবেন, অটো রিক্সা থেকে পয়সা খাবেন, নাহ ওইটা হবেনা। এই নারায়ণগঞ্জে হবেনা।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যের পর দেশে ফিরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান ৯ এপ্রিল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, হয়তো আজকের পর বরফ গলবে।’ ওই অনুষ্ঠানে এসপি হারুন বলেছেন, আমাদের মাঝে কোন বরফই নাই, বরফ গলার প্রশ্নই আসেনা।’ এসপি সেলিম ওসমানকে বলেন, ‘যদি কোন জুয়ারী, মাদক বিক্রেতা, ভূমিদস্যূ, সন্ত্রাসী, তেল চোরকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর দেখেন আপনাদের লোক হয় তাহলে সমস্যা নাই, অ্যাস পার ‘ল’ আদালত থেকে জামিন করিয়ে নিবেন।’ এসপি এও বলেছিলেন, যদি কোন পুুলিশ সদস্য ভুল করে তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন নিরীহ লোকজন যেনো হয়রানির শিকার না হন।’
তবে এই পরিস্থিতির অবসান হয়েছে কিনা তা দেখতে আরও বেশকদিন অপেক্ষা করতে হবে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে। তবে এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি আলোচনা অপরাধীদের সঙ্গে পুুলিশ সুপার কি মিউয়ে গেলেন নাকি অপরাধী দমনে তিনি অঁটল থাকবেন এবং আছেন। যদিও এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ সুপার আরও দিগুণ পরিমানে জুয়ারী, তেল চোর, সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা, ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা বলছেন। নারায়ণগঞ্জে এই পুুলিশ সুুপার যোগদানের পর কয়েকশ মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেক অপকর্মের হোতাদের নারায়ণগঞ্জ ছাড়া করেছেন। শহরে এখন চুরি ছিনতাই পকেটমার মাদক বিক্রি, জমি দখল, নিরীহ মানুষকে হুমকি ধমকি খুন খারাপি অনেকটাই কমে আসছে। যে কারনে পুলিশ সুুপারের কঠোর অবস্থানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষ স্বপ্ন দেখতেও শুরু করেছেন। তবে প্রভাবশালীরাও চেষ্টা করছেন পুলিশ সুপারকে কোনঠাসা করতে। অনেকেই বলছেন ম্যানেজ করারও চেষ্টা চলছে। হুমকি ধমকি আকার ইঙ্গিতে চলছে। শেষ পর্যন্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুুলিশ সুুপার তার অবস্থানে টিকে থাকবেন কিনা তা দেখার অপেক্ষায় এখন নারায়ণগঞ্জের শান্তিকামী মানুষ। শামীম ওসমানের বক্তব্য অনুযায়ী আরও দেখতে হবে আরও ৬ দিন।
গত ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে বন্দরের লাঙ্গলবন্দে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব পূণ্যাস্নান উদযাপন উপলক্ষ্যে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমান। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ।
প্রধান অতিথি এমপি সেলিম ওসমান বলেছিলেন, আমাদের চলে যেতে হবে। আমরা প্রশাসনে অনেক দেখেছি প্রয়োজনে তিন দিনেও চলে যেতে হয়েছে। প্রয়োজনে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার এমনও দেখেছি তিন বছর পার হয়ে গেছে আমরা যেতে দেইনি। আমরা জনপ্রতিনিধিরা আছি, ডিসি আছেন, এসপি আছেন, আমাদের আইনের মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে হবে। আইনের মাঝে কোন রকম ঝগড়া বিবাদ হতে পারেনা। আমি যতক্ষণ চেয়ারে থাকবো সেই চেয়ারকে সম্মান করতেই হবে। আজকে সাংবাদিকদের মাধ্যমেই হয়তো সাংবাদিকদের কলমেই বরফ হয়তো গলে যাবে। নয় হয়তো দেখবেন আগামীতে কোন মিটিং এ হয়তো আমি নাই, হয়তো ডিসি নাই, হয়তো এসপি নাই। যে কোন ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কালকে ক্রু হয়ে যেতে পারে।’
ওইদিন এসপি হারুন অর রশীদ এমপি সেলিম ওসমানকে বলেছিলেন, আপনার সংসদীয় এলাকা সদর থানার কালিরবাজারে আমরা এক দিনে ৪১ জন জুয়ারীকে গ্রেপ্তার করেছি। অনেকেই এঁটার সাথে জড়িত। আমরা চাই নারায়ণগঞ্জে একটা সুস্থ্য পরিবেশ বিরাজ করুক। আপনারা যারা আইন প্রেণতা রয়েছেন আমাদের কোন ভুল হলে বলবেন। আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই, কোন দ্বন্ধ নেই, কোন কথা কাটাকাটি হয় নাই।’
এর আগে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, ‘শামীম ওসমান আমার ছোট ভাই। কিন্তু আমি যখন কোন অনুষ্ঠানে যাই তখন আমি মাননীয় সংসদ সদস্য, নারায়ণগঞ্জ-৪ বলেই অবহিত করি। টেবিলে এক, আর আমার বাসার ড্রয়িং রুমে আরেক। তাকে আমার সম্মানটা দিতেই হবে। সে করে আওয়ামীলীগ, আমি করি জাতীয়পার্টি। বাহিরে গেলে হয়তো দুজনে বিতর্কে অবস্থান নিতে পারি। আমি বলতে চাই যত বড় সমস্যাই হোক না কেন এক টেবিলে বসে সমাধান করা সম্ভব।’
এমপি সেলিম ওসমান আরও বলেছিলেন, আমাদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক অনেক কিছুই হতে পারে। এমনও হতে পারে এখন পাশাপাশি বসে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলছি, উনি আমার রাজনৈতিক দলের নেতাকে ধরে নিয়ে গেল। উনার সাথে অবশ্যই আমার কথাবার্তা হতে পারে। হতেই পারে। মিথ্যা ভুল তথ্যে ধরে ফেললেন তাতে উনার সাথে আমার ঝগড়াঝাটি হতেই পারে। এটা আমাদের কাজ। এসপি সাহেবের ভুল হলে আমার সঙ্গে ঝগড়া হতেই পারে। ঘরের ভাই বোনের যেমন ঝগড়া হয় সেভাবে হবে। এটাকে যেনো পুুজি করে নারায়ণগঞ্জকে যেনো ক্ষতিগ্রস্থ না করা হয়। আমরা কেউ চিরজীবনের জন্য আসি না। উনি (এসপি) হয়তো নারায়ণগঞ্জে ভাল করেছেন উনাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। জাতীয় নির্বাচনে জরুরীভাবে উনাকে এখানে আনা হয়েছিল। আরেকজন এ রকম স্ট্রং এসপির প্রয়োজন আছে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। উনার ট্রান্সফার হতেই পারে। আমরা হয়তো ব্যবসায়ী রাজনীতিক সবাই মিলে উনাকে হয়তো সেদিন বিদায় সংবর্ধনা দিব। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ঝগড়াও হতে পারে আবার আমরা বিদায় সংবর্ধনাও দিতে পারি।’
সভায় পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ এমপি সেলিম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, আজকে যে প্রবলেমটা হয়ে যায় আমি যখন কাউকে ধরে আনি, তখন কিছু লোক থাকে যাদের কোন কাজকর্ম নেই। তারাই বলবে, দেখছেন আপনার লোকজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। তাকে পেয়েছে একটা জায়গায় হয়তো জুয়া খেলা ছিল, অথচা তেল চুরির সঙ্গে ছিল, অথবা মাদক ব্যবসায়ে জড়িত ছিল তাকে ধরে নিয়ে আসছে। এখন সেই লোকটা যদি কারো হয়ে যায়, তাহলে সমস্যা নেই। আপনি তাকে জামিন করাইয়া নিয়া আইসা পড়েন। তাহলে সমস্যা হতোনা কেউ জানলো না। আমি মনে করি উনি (সেলিম ওসমান) যে বক্তব্যটা রেখেছেন আইন সবার জন্য সমান। আমরা আদালতে পাঠাবো আপনারা নিয়া আসবেন।’
পুলিশ সুপার তার বক্তব্যে সেলিম ওসমানকে বলেন, উনি (সেলিম ওসমান) ব্যবসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে বলেছেন। আমি আরেকটা উনার সঙ্গে করতে চাই সেটা হলো মাদকটা নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্মূল করতে হবে। এটার সঙ্গে যদি আপনি থাকেন তাহলে এখন যেভাবে মাদকের বিরুদ্ধে পুুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে আগামীতে আরও দিগুণভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। এখন মাদক ব্যবসায়ীদের পাওয়া যায়না,ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পাওয়া যায়না, আমরা খুজছি। তেল চোরদের এখন আর পাওয়া যায়না। কারন ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধি দিয়ে পালিয়েছে।’
এসপি বলেছিলেন, আমি কাজ করতে চাই। আমরা কাজের সুযোগ চাই। আশা করি নারায়ণগঞ্জ যে একটা প্রাচ্যের ডান্ডি, যে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছে, যে নারায়ণগঞ্জে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এসেছেন। সারা পৃথিবীর মানুষ নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা বানিজ্য করেছেন, সেই নারায়ণগঞ্জকে যদি সুন্দর শহর গড়তে চাই তাহলে অবশ্যই মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। সেই কাজটিই আমরা করছি। এখানে অনেক চাঁদাবাজ আছে, অনেক মাদক ব্যবসায়ী আছে, অনেক ভূমিদস্যূ আছে, সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। আমরা শুধু সেগুলো দেখতে চাই। আপনি শুধু আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন কারা ভুমিদস্যূতায় জড়িত, কারা তেল চুরির সাথে জড়িত, আপনি যেহেতু বলেছেন এগুলোর বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা নিতে, আমরা পুলিশ বাহিনী আরও দিগুণ উৎসাহিত হয়ে এগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করব। তবে অবশ্যই কোন নিরীহ মানুষ যেনো হয়রানি না হয়। কোন পুলিশ কর্মকর্তার দ্বারা সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসপি আরও বলেন, এখন আমাদের পুলিশকে কোন দিকে ফেলানোর কেউ যেনো চেষ্টা না করে। আমরা আমাদের ওয়ে থেকে আমরা সঠিক পথে থেকে কাজ করতে চাই।’
এখানে উল্লেখ্যযে, গত ২৯ মার্চ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ কর্মী মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহনিজামের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করেছিলেন ওই থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের। জিডির একদিন পর ভারতে চলে গেছেন শাহনিজাম। পরে ঢাকায় বদলী হন মঞ্জুর কাদেরও। এছাড়াও এর দুইদিন পর ফতুল্লায় ভাসমান মেরী আন্ডারসন জাহাজের বার থেকে বিয়ার ও মদ উদ্ধার করে পুলিশ ও ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় মামলায় শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুকে মাদক বিক্রয়ে সহযোগীতাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। তিনিও ভারতে চলে গেছেন। এছাড়াও শিশু সাকি অপহরণের অভিযোগ করা হয় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলের বিরুদ্ধে। তিনিও পরবর্তীতে ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যান। এর আগে শামীম ওসমানের আরেক কর্মী মীর হোসেন মীরুকে দুইবার মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়। শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের শ্যালক বিকির বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়। নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি জুয়ার আসন থেকে ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মহানগর শ্রমিকলীগের সেক্রেটারি কামরুল হাসান মুন্না ও বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কবির হোসেন সহ ২২জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়।
এসব ঘটনার মধ্যে দুটি ঘটনার বিষয়ে চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের উদ্যোগে ৯টি জাতীয় ও ৩৩টি স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা প্রতিবাদ সভা করেছেন গত ৩ এপ্রিল বুধবার। ওই দিন নারায়ণগঞ্জ শহরে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে মহড়া দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। ওইদিন শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে জলকামান, সাজোয়া যান, পুলিশ আর্ম কার দেখা যায়। এর আগে গত ২ মার্চ শামীম ওসমানের সমাবেশের সামনেও পুলিশের এমন প্রস্তুতি দেখা যায়। ৩ এপ্রিল বুধবার পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেছিলেন, অপরাধী কাউকে ছাড় দিব না, সে যত বড় ক্ষমতাশালী লোক হোক।’
এদিকে গত ৬ এপ্রিল শনিবার ফতুল্লার বাংলা ভবনে জরুরী কর্মী সভা করেছেন শামীম ওসমান। যেখানে তিনি নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আইভী, এসপি হারুন অর রশীদ ও কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশকে ইঙ্গিত করে বেশ কিছু বক্তব্য রাখেন। ওই কর্মী সভায় পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে শ্লোগানও দিয়েছিল নেতাকর্মীরা। পুুলিশের কঠোর অবস্থান নিয়ে বক্তারা সেদিন কঠোর সমালোচনাও করেন। এর আগে ৩ এপ্রিল ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ সভা করে গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে আর ব্যবসায়ীরা স্মারকলিপি দেননি।