সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ধারণা করা হচ্ছে এই নির্বাচনে পূর্ণ শক্তি নিয়ে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির মাঝে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে তেমন একটা আলোচনা নেই। সামনের কঠোর আন্দোলনকে সামনে রেখে দলকে গুছানোর কাজ করছেন বিএনপি নেতারা। তবে রাজপথের রাজনীতি ও দলীয় সাংগঠনিক তৎপরতার পাশাপাশি নিজ নিজ প্রত্যাশিত এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। জেলার মধ্যে ৫টি আসনে বিএনপির ৮জন শীর্ষ নেতা তাদের নিজ নিজ আসনে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। পূর্বের চেয়ে নেতাকর্মী ও জনগণের মাঝে গ্রহণযোগ্যতাও বাড়িয়েছেন এসব নেতারা।
নেতাকর্মীদের সূত্রে, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। ওই বছর নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি হোন গাজী গোলাম দস্তগীর। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পান কাজী মনিরুজ্জামান মনির, অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া। চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন পান কাজী মনির। সেখানে নির্বাচিত হোন গাজী। তৈমূর আলম খন্দকার বহিস্কার ও কাজী মনির রাজনীতি থেকে দুরে রয়েছেন। তবে উপজেলা বিএনপির সিংহভাগ নেতাকর্মীকে পেছন থেকে কাজী মনির নিয়ন্ত্রণ করছেন। দিপু ভুঁইয়া রাজপথের রাজনীতি না করলেও তিনিও বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ফলে এই আসনে দুজনেরই শক্ত অবস্থান রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনে টানা তিনবার আওয়ামীলীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। গত নির্বাচনে এখানে প্রাথমিকভাবে বিএনপির মনোনয়ন পান সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মাহামুদুর রহমান সুমন। তবে চুড়ান্তভাবে মনোনয়ন পান নজরুল ইসলাম আজাদ। নির্বাচনের পর রাজপথের সক্রিয় রাজনীতি থেকে দুরে রয়েছেন সুমন। বরাবরের মতই রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় আঙ্গুর। আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর পকেট কমিটির মাধ্যমে আজাদ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। যদিও বিএনপির অপর অংশের নেতাকর্মীরা সুমনের বলয়ে রাজনীতি করছেন। ফলে এখানে আজাদ ও সুমনেরও শক্ত অবস্থান রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের দুই মেয়াদে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টি থেকে এমপি রয়েছেন লিয়াকত হোসেন খোকা। গত নির্বাচনে এখানে মনোনয় পান সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। এখানে যদিও মান্নানের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পান তৎকালীন সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। তিনি মনোনয়নপত্রই জমা দেননি। এখানকার এক সময়কার দাপটশালী নেতা রেজাউর করিম রাজনীতিতে নেই বহু বছর ধরে। জাফর সভাপতির পদ হারানোর পর রাজনীতি থেকে পিছিয়ে গেছেন। ফলে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক নিযন্ত্রক মান্নান। রাজপথের নেতৃত্বও দিচ্ছেন মান্নান। সামনের নির্বাচনেও এখানে একক প্রার্থী থাকছে মান্নান, সেটা প্রায় নিশ্চিত। অনেকেই এখানে নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে জাহির করলেও রাজপথের রাজনীতিতেও নেই এবং সোনারগাঁয়ে সে রকম গ্রহণযোগ্য আর কাউকে মনে করছেনা নেতাকর্মীরা।
নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের এমপি হয়েছেন একেএম শামীম ওসমান। গত নির্বাচনে জোটগত কারনে এখানে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। নির্বাচনে পর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ফতুলা থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান শিল্পপতি শাহআলম। তবে তিনি স্থানীয় নেতৃত্বে না থাকলেও ফতুল্লা থানা বিএনপির বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রক তিনিই। একইভাবে বিএনপির অপর অংশের নিয়ন্ত্রক সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। এই আসনে এই দুজন নেতার শক্ত অবস্থান রয়েছে। এর বাহিরে এই আসনে নির্বাচন করার মত বিএনপির শক্ত প্রার্থী নেই।
নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনেও গত নির্বাচনে জোটগত কারনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনযন পান নাগরিক ঐক্যের নেতা এসএম আকরাম। এই আসনের সাবেক এমপি আবুল কালাম বার্ধক্যজনিত কারনে শারীরিকভাবে অসুস্থ্য। যে কারনে মহানগর বিএনপির সভাপতির পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সাখাওয়াত হোসেন খানকে। ২০১৪ সালের পূর্বে এখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তৈমূর আলম। তিনি বর্তমানে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত। কালাম ও তৈমূর আলমের বাহিরে বর্তমানে মহানগরীতে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সাখাওয়াত হোসেন খান। গত নির্বাচনের সময় রাজপথ থেকে সাখাওয়াত হোসেন খানকে যে কারনে গ্রেপ্তার করেছিলো পুলিশ। নির্বাচনের সময় তিনি কারাগারে ছিলেন। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান। কালাম, তৈমূর ও গিয়াস সহ তাদের অনুগতরা নির্বাচনে বিরোধীতা করার পরেও সাখাওয়াত ৯৬ হাজার ভোট পান। এই আসনে একক শক্ত প্রার্থী হিসেবে এখন সাখাওয়াত হোসেন খান।