সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএইচ মামুন বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান বলেছেন ’বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’। তারেক রহমান একটি কথাই বলছেন টেক ব্যাক বাংলাদেশ। দেশ আজ দুর্নীতিগ্রস্ত। এখান থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। দেশের জনগণ আওয়ামীলীগ সরকারকে প্রত্যাখান করেছে। আওয়ামীলীগ দিশেহারা, জনগণ বিএনপির পক্ষে। জনগণের ভোটে বিএনপি জয়ী হবে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো ও তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলন আয়োজনে কয়েক দফা বাধা দিয়েছে পুলিশ। তবে এই বাধা পেরিয়ে সফলভাবে কর্মী সম্মেলন সম্পন্ন করেছে বিএনপি। ১৮ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টায় ধামগড় ইউনিয়নে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সম্মেলনের আয়োজন করলেও পুলিশ ও স্থানীয় কিছু চক্রান্তকারীরা বাধা দেয়।
পরে একই এলাকার অন্যত্র স্থানে ব্যাপক আয়োজনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বিএনপির শতশত নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন চলাকালীন সময়েও সম্মেলনস্থলে অবস্থান নেয় পুলিশ। কিন্তু পুলিশ আসার পরেও বিএনপি নেতাকর্মীরা কর্মী সম্মেলন সম্পন্ন হওয়ার আগে একজন কর্মীও চেয়ার থেকে ওঠেননি। সম্মেলন শেষ করেই আবার নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধা টপকিয়ে ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণও করেছেন।
ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলনের সমন্বয়ক জাহিদ খন্দকারের সভাপতিত্বে ও সহ-সমন্বয়ক মোহসীন মিয়ার পরিচালনায় এবং মহানগর বিএনপির সদস্য শাহিন আহমেদের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও প্রধান বক্তা ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
কর্মী সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, এ দলের মালিক হলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি আমাকে আহ্বায়ক ও আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দিয়েছিলেন। এই কমিটিতে বন্দরেরও অনেককে রাখা হয়েছিল। অনেকেও এখানে উপস্থিত আছেন। এবং যারা আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে নৌকা ও লাঙ্গল মার্কার পক্ষে ছিল তাদের অনেককেও পদ দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা সঠিক পথে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু তারাই বিএনপির কর্মীসম্মেলনে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করেছিল। তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছিল কিন্তু তারা পদত্যাগ করেছেন। তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিল তারপরও আমরা চেয়েছিলাম তাদের নিয়ে বিএনপি করতে চাই। কারন আমরা চাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র একটি শক্তিশালী ইউনিট কমিটি গঠন করতে। কিন্তু তারা সেটা চায় না। তারা চায় সরকার দলের সাথে আঁতাত করে কাজ করতে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের করাকরি নির্দেশ এই ধরনের লোকদেরকে বিএনপিতে আর প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। যারা এই বিএনপির সাথে রয়েছেন এবং বিএনপি করতে গিয়ে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকেই আমরা এই কমিটিতে প্রশ্রয় দিব এবং স্থান দিব। তারাই জিয়াউর রহমানের দলের সম্পদ তারেক রহমান তাদেরকেই চিনবে। কোন দালালকে আর চিনবে না ইনশাল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, আজকের ধামগড়ে বিএনপির কর্মী সম্মেলনকে করতে গিয়ে আমাদের কত ধরনের বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের বাধা সত্যিই কল্পনা করা যায় না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়নি। আমরা জানি এটার পিছনে কারা। যারা লাঙ্গল মার্কা ও নৌকা মার্কা বিএনপি করে এবং দিনে বিএনপি রাতে নৌকা ও লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করে তারাই প্রশাসনের সরকারি দলের লোকদের দিয়ে এ সকল করিয়াছেন। যাতে করে আমরা আজকে ধামগড়ে এই কর্মী সম্মেলন না করতে পারি। এটা কি কোন গণতান্ত্রিক আচরণ করেছেন। আজকে যারা এগুলো করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে রাখুন।
সাখাওয়াত বলেন, আমরা কেউ কিন্তু ভালো নেই। হঠাৎ করে গতকাল চিনি এবং তেল ও চালের দাম বৃদ্ধি করে দিয়েছে সরকার। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকায় সময় কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের এত মূল্য ছিল না। বর্তমানে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেছিলেন যে এদেশে একটি দুর্ভিক্ষের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই দুর্ভিক্ষে কিন্তু জনগণের জন্য না। এই দুর্ভিক্ষ হল আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি ও নেতাদের জন্য। তারা কি করেছে তারা এদেশের মানুষের সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে। এর কারণে এদেশে ডলারের সংকট খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা বলতে চাই এদেশের কোটি কোটি লক্ষ লক্ষ টাকা যে পাচার হয়েছে তা ফিরিয়ে আনা হোক। আপনাদের দুর্নীতি বন্ধ করুন তাহলে এদেশের অর্থনীতি সংকট ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের মূল্য কমে আসবে। আসলে আওয়ামী লীগ জনগণের শান্তি চায় না। যতবারই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষদেরকে দুর্ভিক্ষ উপহার দিয়েছেন। এদেশের জনগণ আর আওয়ামী লীগের সরকারকে দেখতে চায় না। তাই বিএনপি গণতান্ত্রিক আনন্দনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আগামী ১০ই ডিসেম্বর ঢাকা গণসমাবেশে আপনারা যোগদান করবেন এবং এই সরকারকে বিতাড়িত করবেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, আমরা দেশের মানুষ ভালো নাই। সে কারনেই আমার মা আমার নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশের ৮ হাজার মাইল থেকে দুরে দেশ নায়ক তারেক রহমান নেতাকর্মীদের খবর নেয়ার জন্য আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। ধামগড় ইউনিয়নে কর্মী সম্মেলন করে কাউন্সিলের মাধ্যমে ধামগড় ইউনিয়নে বিএনপির শক্তিশালী কমিটি উপহার দিতে চাই। যাতে শক্তিশালী বিএনপি নিয়ে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারি এবং আগামী দিনের দেশ নায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারি।
তিনি বন্দরে বিএনপি নামধারী আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টিঘেষা নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের কর্মীসম্মেলনে কোনো বাধা দিয়েই ঠেকাতে পারবে না। বন্দরে কিছু বিপদগামী আছে, ওই বিপদগামী লাঙ্গল মার্কা বিএনপি, নৌকা মার্কা বিএনপি, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই- যদি বন্দরে কোনো বিএনপির কর্মীর গায়ে আচর পড়ে তাহলে হাত ভেঙ্গে দেয়া হবে। যদি যত বড় দালাল হওনা কেনো তোমাকে ছাড় দেয়া হবে না। তোমার দালালি সম্পর্কে আমরা জানি। আল্লাহর দুশমন ল্যাং লুলা কানা, ওই দুশমনকে বলতে চাই, তোমরা বিএনপি নেতাকর্মীদের মিছিল মিটিংয়ে বাধা সৃষ্টি করবে না। তারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে চিনে, তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিনে, তারা আগামী দিনের ভবিষৎ দেশনায়ক তারেক রহমানকে চিনে।
কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এইচ মামুন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ, ডা. মুজিবুর রহমান, মাসুদ রানা, হাবিবুর রহমান দুলাল, শাহিন আহমেদ, ফারুক হোসেন। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন- মহানগর বিএনপি নাজমুল হক রানা, বন্দর থানা যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব শাহাদুল্লাহ মুকুল, যুবদল নেতা সিবলি সাদিক সহ ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।