সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়ন কমিটি কর্মীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। কর্মীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন নেতারা। এমন নজির স্থাপন করায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসে খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বের প্রসংশা করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।
গত দেড় যুগেও নারায়ণগঞ্জ জেলার ৪২টি ইউনিয়নের মধ্যে কোনো একটি ইউনিয়ন তো দুরের কথা থানা কিংবা উপজেলা পর্যায়েও বিএনপির কমিটি গঠনে সম্মেলন ও সম্মেলনে নেতাকর্মীদের গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হয়েছে এমন নজির দেখা যায়নি। কিন্তু সেই নজির স্থাপন করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। বিএনপির শত শত নেতাকর্মীরা যখন ডজন ডজন মামলায় আসামি, বছরের পর বছর ধরে হামলা মামলা নির্যাতনে নাজেহাল, ঠিক এমন অবস্থায় সেই সময়ে সামান্য একটি ইউনিয়ন কমিটি গঠনে যে ব্যাপক আয়োজন দেখিয়েছে বিএনপি, তা দৃষ্টান্ত বলেই মনে করছেন বিএনপির নেতারা।
দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ভোট গ্রহণ, ভোট গণনা শেষে নির্বাচিত নেতাদের নাম ঘোষণা সব মিলিয়ে বিএনপিতে এক উৎসাহ উদ্দীপনা ছিলো নজিরবিহীন। সম্মেলনে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত পাঠ, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশ, শান্তির প্রতীক পাযরা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন- সবকিছুই ছিলো ব্যাপক আমেজের। এরি মাঝে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খন্ড খন্ড মিছিল যেনো চাঙ্গা ভাব দেখা গেলো বিএনপির এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও। মাঝে নেতা হওয়ার প্রত্যাশায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র ক্রয় ও জমা, নেতাকর্মীদের ভোট প্রদানে সারিবদ্ধভাবে উৎসাহ নিয়ে দাঁড়ানো, ভোট প্রদান ও ভোট গণনা এবং ফলাফল পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অপেক্ষা ও অবস্থান, যা দৃষ্টান্তই সৃষ্টি করেছেন সাখাওয়াত ও টিপু।
ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খোকন বলেছেন, থানা কিংবা উপজেলা বিএনপির সম্মেলনেও এত ব্যাপক আয়োজন ও উৎসাহ উদ্দীপনা দেখিনা। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের গোগনগর ইউনিয়নে যে নজির আপনারা স্থাপন করেছেন। যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা আওয়ামীলীগকে দেখিয়ে দিয়েছি কিভাবে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হয়।
গোগনগর ইউনিয়ন বিএনপির সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম সরদারের সভাপতিত্বে ও সহ-সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়াজী’র সঞ্চালনায় দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ছাড়াও সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও প্রধান বক্তা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
বিশেষ অতিথি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবির, মনির হোসেন খান, আনোয়ার হোসেন আনু, শাহ ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, এমএইচ মামুন।
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ, ডা. মুজিবুর রহমান, মাসুদ রানা, অ্যাডভোকেট এইচ এম আনোয়ার প্রধান, মাকিদ মোস্তাকিম শিপলু, শাখাওয়াত ইসলাম রানা, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রহিমা শরীফ মায়া, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি দিলারা মাসুদ ময়না প্রমুখ।
সম্মেলনে ১২৬ জন ভোটারের মধ্যে ১২১ জন ভোট প্রয়োগ করেন। ভোটে আক্তার হোসেন সভাপতি ও জাহাঙ্গীর আলম মিয়াজী সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হোন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন মোক্তার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন আইয়ুব আলী। বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হোন মঈনুল হাসান লিমন।
সম্মেলনে দুপুর থেকেই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হোন নেতাকর্মীরা। সম্মেলনে গোপন ভোট প্রয়োগ করেন ভোটাররা। পরে নির্বাচন কমিশন ফলাফল তৈরি করেন এবং প্রধান অতিথি ফলাফল ঘোষণা করেন।
ওই সম্মেলনে সরকারের নানা কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা করে এবং আগামী ১০ ডিসেম্বর বিভাগীয় সমাবেশের বিষয় টেনে খোকন বলেছেন, সারাদেশে গণজোয়ার শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির প্রতিটি বিভাগীয় গণসমাবেশে লোকের লোকারণ্য হয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ আগামী ১০ই ডিসেম্বরের গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। সেই সমাবেশে আমাদের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিএনপি পরিবারের সবাই চলে আসবেন। আমরা কোন আন্দোলন হানাহানিতে যেতে চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ করতে চাই। কোন বাধা ভয় ভীতি দেখিয়ে লাভ হবে না। জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে গণঅভ্যুত্থান হবেই। গণঅভ্যুত্থান হবে ৭০, ৭১ ও ৯০ এর মতো আরেকটি গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে হাসিনা সরকারকে পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব। দেশের মানুষের আইনের শাসন, ভোটের অধিকার, মানবাধিকার অধিকার, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এদেশের জনগণকে নিয়ে আন্দোলন চলছে চলবেই। চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে ঘরে ফিরে যাব না। সে পর্যন্ত দেশের জনগণ আমাদের সাথে আছে এবং থাকবে। দেশের জনগণকে নিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করব ইনশাল্লাহ।
১৯ নভেম্বর শনিবার বিকেল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন গোগনগর ইউনিয়নের সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ সংলগ্ন বালুর মাঠে কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গোগনগর ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি- বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গোগনগরে উৎসব মুখর পরিবেশে অবিরাজ করেছে। দুপুর থেকেই গোগনগর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার- ফেস্টুনে সু-সজ্জিত হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই শ্লোগানে শ্লোগানে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলন মঞ্চে হাজির হতে থাকেন। বিকেল তিনটার মধ্যেই নেতাকর্মীরা সম্মেলন মঞ্চে হাজির হয়ে সাফল্য মন্ডিত করে তোলেন।
খায়রুল কবির খোকন আরো বলেন, দেশের মানুষ আমরা কেউ ভালো নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমান দেশের বাইরে। বর্তমান এই অবৈধ তাঁবেদার সরকার কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর কিন্তু আপনারা কেউ কি ভোট দিতে পেরেছেন। সুতরাং আপনারা যেহেতু ভোট দিতে পারেননি এই সরকার জনগণের সরকার নয়। এটি একটি অবৈধ সরকার ও অগণতান্ত্রিক সরকার। নিশিরাতের ভোট ডাকাতের সরকার। আমাদের বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর অন্যায় অত্যাচার, হামলা মামলা ও নির্যাতন চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১লক্ষ এক হাজার মামলায় ৩৬ লক্ষ নেতাকর্মীদের আসামি ও ৩ হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে। এই সরকার আমলের সাধারণ মানুষ আমরা কেউ নিরাপদ নয়। আমাদের স্বাভাবিক মৃত্যুরও কোন গ্যারান্টি নেই। সুতরাং এই সরকারকে আর ক্ষমতা থাকার অধিকার নেই। শুধুমাত্র গায়ের জোরে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। যেমন দিনের ভোট রাতের মতন।
তিনিবলেন, কয়েকদিন আগে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন যে পৃথিবীতে কোথাও আমরা দেখিনি যে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। তিনি পুলিশকে বলেছেন জনগণ যাতে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন দিনের ভোট যেন রাতে না হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও একই কথা বলেছেন। কিন্তু তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায় না। তারা আবারও দিনের ভোর রাতে করার জন্য একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। বলেন তাদের অধীনেই নাকি আবারও নির্বাচন করতে হবে। সুতরাং শেখ হাসিনার পাতানো নির্বাচনে কি আপনারা যাবেন। এই সরকারের আমলে কোন নির্বাচনে সুষ্ঠু হবে না। এই সরকার আমলে জনগণ যে ভোটার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে তা আর পাবে না। সুতরাং ভোটের অধিকার যদি পেতে হয় আগামী ১০ই ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগে যে গণসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে আপনারা কি সবাই যাবেন। অবশ্যই আপনারা সবাই যাবেন। সেই গণসমাবেশ থেকে শেখ হাসিনা সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে দেওয়া হবে। সেদিন থেকে আন্দোলন শুরু হবে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পথ পাবে না। শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনদিন একদলীয় নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে নিরপক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। তা না হলে আন্দোলন করে হাসিনা সরকারকে বাধ্য করা হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে।