ছাত্রদল নেতা নয়ন নিহত: নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বিক্ষোভে উত্তাল নগরী

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নয়ন মিয়া পুলিশের গুলিতে হত্যার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে নারায়ণগঞ্জ নগরী জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি। বিক্ষোভ মিছিলে নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী নানা শ্লোগানে উত্তাপ ছড়িয়ে দেয় এবং হত্যার বিচার দাবিতে নানা শ্লোগান দেন। এ সময় পুরো নগরী উত্তাল হয়ে ওঠে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের অগ্নিঝরা শ্লোগানে।

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আইনজীবী নেতা নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভেকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে মহানগর যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিকদল, মহিলা দল, তাঁতীদল, মৎস্যজীবীদল, কৃষকদল সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ গ্রহণ করেন।

২২ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর বিএনপি। বিক্ষোভ মিছিলটি মিশনপাড়া থেকে শুরু করে চাষাঢ়া চত্বর হয়ে হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। 

এসময়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়ন হত্যার প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবি বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। সেই সাথে গৃহবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতেও শ্লোগান দেয়। একই সঙ্গে সম্প্রতি বন্দর থানায় ও ফতুল্লা থানায় নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে বলে দাবি করে মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়।

 

বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, এ সরকার হত্যায় মেতে উঠেছে। তারা নারায়ণগঞ্জের যুবদল নেতা শাওন প্রধানকে হত্যা করেছে। মুন্সীগঞ্জের শাওনকেও হত্যা করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রদল নেতা নয়নকে পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই। তাদেরকে বিচার করতেই হবে। নতুবা এদেশের মানুষ তাদের একদিন বিচার করবে। নয়নকে হত্যার প্রতিবাদে আজকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ। এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। যতই হত্যা গুম খুন করা হবে এদেশের মানুষ আপনাদের বিরুদ্ধে ততই জ্বলে উঠবে এবং জ্বলে উঠেই আপনাদের পতন ত্বরান্বিত করবে। 

তিনি আরো বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে এই স্বৈরাচারী সরকার আবারও বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করছে। সোনারগাঁয়ে করেছে, বন্দরে করেছে, এবার ফতুল্লা থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মিথ্যা গায়েবি মামলায় নিরাপরাধ বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্দরে বিএনপি নেতা নূর মোহাম্মদ পনেছ সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে গণবিস্ফোরণ ঠেকাতে এই মিথ্যা সাঁজানো নাটকের মামলা হচ্ছে। ফতুল্লা থানার মামলায় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন খানসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে বিনা দোষে আসামি করা হয়েছে। আমরা এ সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার দাবি করছি। সেই সাথে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সারা দেশে কারাবন্দী সকল বিএনপি নেতা কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। অন্যথায় বাংলার জনগণকে সাথে নিয়ে যে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সেই আন্দোলনের স্রোতে এই অবৈধ সরকার খড়কুটোর মত ভেসে যাবে।

সাখাওয়াত বলেন, বর্তমানের সরকার শক্তি প্রয়োগ করে প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। ‌সুতরাং সরকারকে ক্ষমতা থেকে ঘটনার জন্য এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আগামীতে যেই আন্দোলনের ডাক আসবে সেই আন্দোলনে সকলকে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

 

সমাবেশ পরিচালনা করতে গিয়ে বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ কান টিপু বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের শাওন সহ ৫জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এবার ভ্রাক্ষণবাড়িয়ায় ছাত্রদল নেতা নয়নের শরীরে অস্ত্র ঠেকিয়ে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি এর তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাই এবং হত্যাকারীকে আইনের আওতায় এনে বিচারের জন্য জানাই।

তিনি আরো বলেন, আমরা শেখ হাসিনাকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, আমরা বিএনপি ছাত্রদল যুবদল মহিলা দল সহ সকল নেতাকর্মীরা শপথ গ্রহণ করছি যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা পর্যন্ত, তারেক জিয়াকে বীরের বেশে বাংলাদেশে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত, আমরা ঘরে ফিরে যাবো না, যাবো না। প্রয়োজনে আমরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও প্রমান করবো বাংলাদেশে শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিকেরা পরাজয় মানে না, পরাজিত হতে জানে না। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিভাগীয় সমাবেশে সকল নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানাই।

বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুমন মিয়া, মহানগর বিএনপির সদস্য ডা. মুজিবুর রহমান, মাসুদ রানা, মাহামুদ হোসেন, বরকত উল্লাহ, সাখাওয়াত ইসলাম রানা, ফারুক হোসেন, কামরুল হাসান চুন্নু সাউদ, মাকিদ মোস্তাকিম শিপলু, শাহিন আহমেদ, নাজমুল ইসলাম রানা, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মমতাজ উদ্দীন মন্তু, সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম সজল, যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি, মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবু, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুর রহমান সাগর, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি দিলারা মাসুদ ময়না, মহানগর তাঁতীদলের সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন, জেলা ওলামা দলের সেক্রেটারি হাফেজ মামুন, মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন, সদর থানা যুবদল নেতা সাইফুল ইসলাম পাপন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদল নেতা শহিদুল ইসলাম, আরমান হোসেন, শাহজালাল কালু, বন্দর উপজেলা বিএনপি নেতা জাহিদ খন্দকার, গোগনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন, মহানগর ছাত্রদল নেতা রাহিদ ইসতিয়াক সিকদার, রাজীবুল ইসলাম রাজীব, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা দুলাল হোসেন, আবদুল রশিদ, মহানগর যুবদল নেতা সিবলি সাদিক, সুমন মিয়া সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।