বরফ যখন গরম, অটল এসপি হারুন, এবার পাকড়াও ডিস বাবু

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমানকে গত ৯ এপ্রিল জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ তার কার্যালয়ে এক বৈঠকে বলে দিয়েছিলেন, আইন সবার জন্য সমান। পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তারের পর যদি দেখেন তারা আপনাদের লোক তাহলে কোন সমস্যা নাই, অ্যাস পার ‘ল’ আদালত থেকে জামিন করিয়ে নিবেন।’ এর আগে ৬ এপ্রিল শামীম ওসমান পুলিশ সুপারকে ইঙ্গিত করে এবং নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, আপনারা শান্ত থাকুন। নারায়ণগঞ্জে খেলা হবে না। কারো ফাঁদে পাড়া দিয়ে খেইলেন না। প্লিজ ডোন্ট প্লে এই নারায়ণগঞ্জে। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যেই টের পাইবেন।’ এর আগে গত ৩ এপ্রিল পুুলিশ তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, অপরাধী কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা, যদি সে যত বড় ক্ষমতাশালী লোক হোক।’ এমন পরিস্থিতিতে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নববর্ষ পালন উৎসবে যান শামীম ওসমান। সেখানে শামীম ওসমান ও এসপির সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক দেখা যায়। নেতাকর্মীদের মাঝে কিছুটা স্বস্থিও দেখা যায়। কিন্তু ১৮ এপ্রিল চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার হলেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্টজন কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু।

এখানে উল্লেখ্যযে, গত ২৯মার্চ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ কর্মী মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহনিজামের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করেছিলেন ওই থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের। জিডির একদিন পর ভারতে চলে যান শাহনিজাম। এছাড়াও এর দুইদিন পর ফতুল্লায় ভাসমান মেরী আন্ডারসন জাহাজের বার থেকে বিয়ার ও মদ উদ্ধার করে পুলিশ ও ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় মামলায় শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুকে মাদক বিক্রয়ে সহযোগীতাকারী হিসেবে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। তিনিও ভারতে চলে গেছেন। এছাড়াও শিশু সাকি অপহরণের অভিযোগ করা হয় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলের বিরুদ্ধে। তিনিও পরবর্তীতে ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে চলে গেছেন। এর আগে শামীম ওসমানের আরেক কর্মী মীর হোসেন মীরুকে দুইবার মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়। শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের শ্যালক বিকির বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়। নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি জুয়ার আসন থেকে ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মহানগর শ্রমিকলীগের সেক্রেটারি কামরুল হাসান মুন্না ও বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কবির হোসেন সহ ২২জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়।

এসব ঘটনার মধ্যে তিনটি ঘটনায় ব্যবসায়ীরা গত ৩ এপ্রিল প্রতিবাদ সভা করেছেন। ওই দিন নারায়ণগঞ্জ শহরে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে মহড়া দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। ওইদিন শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে জলকামান, সাজোয়া যান, পুলিশ আর্ম কার দেখা যায়। এর আগে গত ২ মার্চ শামীম ওসমানের সমাবেশের সামনেও পুলিশের এমন প্রস্তুতি দেখা যায়। ৩ এপ্রিল ওইদিন বুধবার পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেছেন, অপরাধী কাউকে ছাড় দিব না, সে যত বড় ক্ষমতাশালী লোক হোক।’

এদিকে গত ৬ এপ্রিল শনিবার ফতুল্লার বাংলা ভবনে জরুরী কর্মী সভা করেছেন শামীম ওসমান। যেখানে তিনি নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আইভী, এসপি হারুন অর রশীদ ও কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশকে ইঙ্গিত করে বেশ কিছু বক্তব্য রাখেন। ওই কর্মী সভায় পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে শ্লোগানও দিয়েছিল নেতাকর্মীরা। পুুলিশের কঠোর অবস্থান নিয়ে বক্তারা সেদিন কঠোর সমালোচনাও করেন। এর আগে ৩ এপ্রিল ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করেন। গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার সিদ্ধান্ত জানালো পরবর্তীতে আর ব্যবসায়ীরা স্মারকলিপি দেননি।

গত ৬ এপ্রিল ফতুল্লায় জরুরী কর্মী সভায় নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান তার নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে আল্টিমেটাম দিয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, প্লিজ ডোন্ট প্লে এই নারায়ণগঞ্জে। এখানে খেইলেন না। তবে নারায়ণগঞ্জে খেলা হবেনা। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে টের পাইবেন।’ তবে ১২ দিন শেষে নেতাকর্মীরা টের পাইলেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবু চাঁদাবাজি মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার!

জানাগেছে, ১৮ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবুকে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিস বাবু নারায়ণগঞ্জে স্যাটেলাইট কেবল ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করেন। তিনি এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট কর্মী হিসেবেই পরিচিত।

এর আগে আব্দুল করিম বাবুর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের ফরাজীকান্দা এলাকার অপর ডিস ব্যবসায়ী হাসান একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন।

নারায়ণগঞ্জ ডিবির পরিদর্শক এনামুল হক জানান, বন্দর থানায় হাসান নামের একজন ডিস ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজীর মামলা করেছে কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবুর বিরুদ্ধে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাবুকে নিয়ে আরো আসামি ধরতে অভিযান চলছে।

গত ২৩ মার্চ ভুক্তভোগী মো. হাসান ব্যবসায়ী বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। হাসান জানান, বন্দর সোনাকান্দা হতে আলীনগর হয়ে প্রায় কয়েক লাখ টাকার ডিস লাইনের ক্যাবল সহ সরাঞ্জমাদি কেটে নিয়ে গেছে ফরাজীকান্দা এলাকার সন্ত্রাসী সজিব গং। ডিসের ক্যাবল কাটার কারণে প্রায় ২ হাজার গ্রাহক ডিস লাইনের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ঘটনায় বাবু ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে।

তবে শামীম ওসমানের এমন ১২ দিনের ঘোষণার পর ৯এপ্রিল জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে এক বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমান বলেছিলেন, আমাদের মাঝে আজকের পর হয়তো বরফ গলে যাবে।’ ওইদিন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ সেলিম ওসমানকে বলেছিলেন, আমাদের কোন বরফই নাই। বরফ গলার প্রশ্নই ওঠেনা।’ এসপি বলেছিলেন, ‘যদি কোন জুয়ারী, মাদক বিক্রেতা, ভূমিদস্যূ, সন্ত্রাসী, তেল চোরকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর দেখেন আপনাদের লোক হয় তাহলে সমস্যা নাই, অ্যাস পার ‘ল’ আদালত থেকে জামিন করিয়ে নিবেন। আমরা আদালতে পাঠাবো, আপনারা জামিন করিয়ে নিবেন।’

এর পর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে পুলিশ সুপারের আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যান শামীম ওসমান। অনেকেই মনে করেছিলেন তাদের মধ্যে বৈরিতার অবসান হয়েছে। কিন্তু ১৮ এপ্রিল এবার গ্রেপ্তার হলেন কাউন্সিলর বাবু।

তবে কাউন্সিলর বাবুকে গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে দেখা যায় এমপি শামীম ওসমানকে। তবে তিনি কি কারনে সেখানে গিয়েছেন তা জানা যায়নি। তিনি সেখানে বেশিক্ষণ অবস্থানও করেননি বলে জানা গেল।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে ইঙ্গিত করে গত ৬ এপ্রিল আওয়ামীলীগের কর্মী সভায় শামীম ওসমান বলেছিলেন, প্লিজ, ডোন্ট প্লে এই নারায়ণগঞ্জে। কারো ফাঁদে পাড়া দিয়ে খেইলেন না।’ এসপিকে ইঙ্গিত করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, খেলা হবে না। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে টের পাইবেন।’ এমন পরিস্থিতিতে এমপি সেলিম ওসমান ৯ এপ্রিল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, হয়তো আজকের পর বরফ গলবে।’ ওই অনুষ্ঠানে এসপি হারুন বলেছিলেন, আমাদের মাঝে কোন বরফই নাই, বরফ গলার প্রশ্নই আসেনা।’ এসপি তার বক্তব্যে সেলিম ওসমানকে বলেছিলেন, ‘যদি কোন জুয়ারী, মাদক বিক্রেতা, ভূমিদস্যূ, সন্ত্রাসী, তেল চোরকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর দেখেন আপনাদের লোক হয় তাহলে সমস্যা নাই, অ্যাস পার ‘ল’ আদালত থেকে জামিন করিয়ে নিবেন।’ এসপি এও বলেছেন, যদি কোন পুুলিশ সদস্য ভুল করে তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন নিরীহ লোকজন যেনো হয়রানির শিকার না হন।’

নারায়ণগঞ্জে এসপি হারুন অর রশীদ যোগদানের পর দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের লোকজন ও তার আত্মীয়স্বজন বিভিন্ন অভিযোগে যখন আইনের ফাঁদে জড়িয়ে যাচ্ছেন এবং তা নিয়ে যখন পুুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দিয়েছে তখন এমপি সেলিম ওসমান পুলিশ সুপারের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেছেন, এখন থেকে বরফ গলবে।’ তবে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেছেন বরফ গলার প্রশ্নই আসেনা।’

৯ এপ্রিল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে বন্দরের লাঙ্গলবন্দে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব পূণ্য¯œান উদযাপন উপলক্ষ্যে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমান। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ।

ওইদিন প্রধান অতিথি এমপি সেলিম ওসমান বলেছিলেন, আমাদের চলে যেতে হবে। আমরা প্রশাসনে অনেক দেখেছি প্রয়োজনে তিন দিনেও চলে যেতে হয়েছে। প্রয়োজনে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার এমনও দেখেছি তিন বছর পার হয়ে গেছে আমরা যেতে দেইনি। আমরা জনপ্রতিনিধিরা আছি, ডিসি আছেন, এসপি আছেন, আমাদের আইনের মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে হবে। আইনের মাঝে কোন রকম ঝগড়া বিবাদ হতে পারেনা। আমি যতক্ষণ চেয়ারে থাকবো সেই চেয়ারকে সম্মান করতেই হবে। আজকে সাংবাদিকদের মাধ্যমেই হয়তো সাংবাদিকদের কলমেই বরফ হয়তো গলে যাবে। নয় হয়তো দেখবেন আগামীতে কোন মিটিং এ হয়তো আমি নাই, হয়তো ডিসি নাই, হয়তো এসপি নাই। যে কোন ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কালকে ক্রু হয়ে যেতে পারে।

এমপি সেলিম ওসমানের বক্তব্যের পর এমন বরফ গলার বিষয়ে এসপি হারুন অর রশীদ বলেন, আমাদের মাঝে কোন বরফই নেই। বরফ গলার কোন প্রশ্নই আসেনা। আমরা উনারকে সম্মান করি উনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সেই হিসেবে উনার প্রতি আমাদের অনেক ভক্তি শ্রদ্ধা থাকবে। উনার এলাকায় আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে কাউকে গ্রেপ্তারের পর উনি যদি বলেন তাহলে অবশ্যই সেটা ভেরিফাই করব এবং ব্যবস্থা নিব।

এসপি আরও হারুন আরও বলেন, আপনার সংসদীয় এলাকা সদর থানার কালিরবাজারে আমরা এক দিনে ৪১ জন জুয়ারীকে গ্রেপ্তার করেছি। অনেকেই এঁটার সাথে জড়িত। আমরা চাই নারায়ণগঞ্জে একটা সুস্থ্য পরিবেশ বিরাজ করুক। আপনারা যারা আইন প্রেণতা রয়েছেন আমাদের কোন ভুল হলে বলবেন। আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই, কোন দ্বন্ধ নেই, কোন কথা কাটাকাটি হয় নাই।

এর আগে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, শামীম ওসমান আমার ছোট ভাই। কিন্তু আমি যখন কোন অনুষ্ঠানে যাই তখন আমি মাননীয় সংসদ সদস্য, নারায়ণগঞ্জ-৪ বলেই অবহিত করি। টেবিলে এক, আর আমার বাসার ড্রয়িং রুমে আরেক। তাকে আমার সম্মানটা দিতেই হবে। সে করে আওয়ামীলীগ, আমি করি জাতীয়পার্টি। বাহিরে গেলে হয়তো দুজনে বিতর্কে অবস্থান নিতে পারি। আমি বলতে চাই যত বড় সমস্যাই হোক না কেন এক টেবিলে বসে সমাধান করা সম্ভব।

এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আমাদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক অনেক কিছুই হতে পারে। এমনও হতে পারে এখন পাশাপাশি বসে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলছি, উনি আমার রাজনৈতিক দলের নেতাকে ধরে নিয়ে গেল। উনার সাথে অবশ্যই আমার কথাবার্তা হতে পারে। হতেই পারে। মিথ্যা ভুল তথ্যে ধরে ফেললেন তাতে উনার সাথে আমার ঝগড়াঝাটি হতেই পারে। এটা আমাদের কাজ। এসপি সাহেবের ভুল হলে আমার সঙ্গে ঝগড়া হতেই পারে। ঘরের ভাই বোনের যেমন ঝগড়া হয় সেভাবে হবে। এটাকে যেনো পুুজি করে নারায়ণগঞ্জকে যেনো ক্ষতিগ্রস্থ না করা হয়। আমরা কেউ চিরজীবনের জন্য আসি না। উনি (এসপি) হয়তো নারায়ণগঞ্জে ভাল করেছেন উনাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। জাতীয় নির্বাচনে জরুরীভাবে উনাকে এখানে আনা হয়েছিল। আরেকজন এ রকম স্ট্রং এসপির প্রয়োজন আছে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। উনার ট্রান্সফার হতেই পারে। আমরা হয়তো ব্যবসায়ী রাজনীতিক সবাই মিলে উনাকে হয়তো সেদিন বিদায় সংবর্ধনা দিব। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ঝগড়াও হতে পারে আবার আমরা বিদায় সংবর্ধনাও দিতে পারি।

ওই সভায় পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ এমপি সেলিম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আজকে যে প্রবলেমটা হয়ে যায় আমি যখন কাউকে ধরে আনি, তখন কিছু লোক থাকে যাদের কোন কাজকর্ম নেই। তারাই বলবে, দেখছেন আপনার লোকজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। তাকে পেয়েছে একটা জায়গায় হয়তো জুয়া খেলা ছিল, অথচা তেল চুরির সঙ্গে ছিল, অথবা মাদক ব্যবসায়ে জড়িত ছিল তাকে ধরে নিয়ে আসছে। এখন সেই লোকটা যদি কারো হয়ে যায়, তাহলে সমস্যা নেই। আপনি তাকে জামিন করাইয়া নিয়া আইসা পড়েন। তাহলে সমস্যা হতোনা কেউ জানলো না। আমি মনে করি উনি (সেলিম ওসমান) যে বক্তব্যটা রেখেছেন আইন সবার জন্য সমান। আমরা আদালতে পাঠাবো আপনারা নিয়া আসবেন।

এর আগে এসপি বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমার আড়াই হাজার পুলিশ এখানে কাজ করছে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে একটা দুইটা তিনটা পুলিশ ভুল করে ফেলতে পারে। সেই ভুলটা যদি আমি জানি তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিব। ব্যবস্থা নিয়েছিও। অনেক পুলিশ সদস্যকে চাকুরীচুত্য করেছি। অনেক পুলিশ সদস্যকে আমি ক্লোজড করে রেখেছি কারন তাদের বিরুদ্ধে যখন কমপ্লেন আসছে। এটা নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির কোন অবকাস নেই।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, উনি (সেলিম ওসমান) ব্যবসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে বলেছেন। আমি আরেকটা উনার সঙ্গে করতে চাই সেটা হলো মাদকটা নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্মূল করতে হবে। এটার সঙ্গে যদি আপনি থাকেন তাহলে এখন যেভাবে মাদকের বিরুদ্ধে পুুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে আগামীতে আরও দিগুণভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। এখন মাদক ব্যবসায়ীদের পাওয়া যায়না,ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পাওয়া যায়না, আমরা খুজছি। তেল চোরদের এখন আর পাওয়া যায়না। কারন ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধি দিয়ে পালিয়েছে।

এসপি বলেন, আমি কাজ করতে চাই। আমরা কাজের সুযোগ চাই। আশা করি নারায়ণগঞ্জ যে একটা প্রাচ্যের ডান্ডি, যে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছে, যে নারায়ণগঞ্জে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এসেছেন। সারা পৃথিবীর মানুষ নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা বানিজ্য করেছেন, সেই নারায়ণগঞ্জকে যদি সুন্দর শহর গড়তে চাই তাহলে অবশ্যই মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। সেই কাজটিই আমরা করছি। এখানে অনেক চাঁদাবাজ আছে, অনেক মাদক ব্যবসায়ী আছে, অনেক ভূমিদস্যূ আছে, সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। আমরা শুধু সেগুলো দেখতে চাই। আপনি শুধু আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন কারা ভুমিদস্যূতায় জড়িত, কারা তেল চুরির সাথে জড়িত, আপনি যেহেতু বলেছেন এগুলোর বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা নিতে, আমরা পুলিশ বাহিনী আরও দিগুণ উৎসাহিত হয়ে এগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করব। তবে অবশ্যই কোন নিরীহ মানুষ যেনো হয়রানি না হয়। কোন পুলিশ কর্মকর্তার দ্বারা সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসপি আরও বলেন, এখন আমাদের পুলিশকে কোন দিকে ফেলানোর কেউ যেনো চেষ্টা না করে। আমরা আমাদের ওয়ে থেকে আমরা সঠিক পথে থেকে কাজ করতে চাই।’

এর আগে গত ৬ এপ্রিল বাংলা ভবনে ফতুল্লা আওয়ামীলীগের জরুরী কর্মী সভায় জেলা পুলিশ সুপারকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেছিলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের যদি কেউ খেলাতে চান, প্লিজ ডোন্ট প্লে, নারায়ণগঞ্জে খেইলেন না। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করবে। আর প্রশ্ন করার আগে তাকে জুয়ার মামলার আসামী করে দিবেন। কইরেন না। আমার আত্মীয়স্বজনকে মদের সাপ্লাইয়ার বানাবেন। মনে করবেন আমি ভয় পেয়ে যাবো। এগুলো করে আমাকে কাবু করা মছিমত। আমাকে কাবু করা যাবে না।

তিনি বলেন, আমাদের মাঝে যদি খারাপ হয তাকে আমরা ছাড় দিব না। কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে যদি কাউকে ইচ্ছা করে জামেলায় ফেলার চেষ্টা করা তাহলে কথা দিচ্ছি নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চাড়া নাচাই দিব। এক সেকেন্ড ছাড় দিবনা, এক সেকেন্ডও না। একটা সেকেন্ড কোন নেতাকর্মীকে বিনা কারনে জামেলায় ফেলতে কেউ চেষ্টা করলে ছাড় দিব না। কোন ব্যবসায়ী মাথা নত করে ব্যবসা করবেনা। কারন এই দেশ শেখ হাসিনার। এই নারায়ণগঞ্জও শেখ হাসিনার।

তখন তিনি নেতাকর্মীদের বলেন, সমস্যা শুধু একটাই আমাদের হাত পা বাধা। কারন আমরা দল করি। আমরা নারায়ণগঞ্জে ৫ লাখ লোকের সমাবেশ কইরা দেখাইতে চাই নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের নেতারা নেতাকর্মীদের পাশে আছে।

নেতাকর্মীদের আশ^স্থ করে বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কি খালেদা জিয়া? না। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। উনি নারায়ণগঞ্জের খোজ রাখেন কখন কি হচ্ছে। জাস্ট আগামী ১০/১২ দিনেই টের পাবেন। আপনারা শান্ত থাকুন। তবে বাহিরের মানুষকে দোষ দিতে নাই। ভুল পদক্ষেপ নেয়াইয়া বাহিরের মানুষকে ব্যবহার করতে চায়। সরকার আমাদের, প্রশাসন আমাদের, সিভিল প্রশাসন আমাদের, পুলিশ বাহিনী আমাদের, দায়িত্বও আমাদের। তাই নেত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে তা আমরা করব না। আমাদের মৃত্যু হয়ে যাবে তাও নেত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে দিব না।

তিনি বলেন, তবে এই নারায়ণগঞ্জকে কেউ যদি এসে মনে করে ওই কাউন্সিলরকে ফাঁসাবো, ওই চেয়ারম্যানকে ঢুকাবো, কারো সাথে কন্ট্রাকে যাবো, ওইদিক থেকে চাঁদাবাজি করব, এখান থেকে চাঁদাবাজি করব, ব্যবসায়ীদেরকে ফোন করব, শ্রমিক নামধারী শ্রমিকরা আইসা নীট গার্মেন্টস মালিকদের ভয় দেখাবেন, বাস মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলবেন, অটো রিক্সা থেকে পয়সা খাবেন, নাহ ওইটা হবে না। এই নারায়ণগঞ্জে হবে না।