সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির দায়িত্ব (সভাপতি কিংবা আহ্বায়ক) চেয়েছিলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএইচ মামুন। কিন্তু সেই দায়িত্ব তাকে না দেয়ার ফলে বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে যোগ দিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। একই সঙ্গে অভিযোগ- মহানগরীর বেশক’টি ওয়ার্ডে বিএনপির কমিটি গঠনের বিষয়ে সম্মেলনের আয়োজনের দায়িত্ব তার থাকলেও তিনি তা করতে পারেননি।
এমনকি মহানগর বিএনপির অনেক কর্মসূচিতে তিনি অনুপুস্থিত ছিলেন। বেশকটি কর্মসূচিতে তিনি উপস্থিত হলেও তিনি অনেক কর্মসূচিতে একা অংশগ্রহণ করেছেন, সকল কর্মসূচিতে বৃহত্তর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের নিয়ে যোগদান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দলের কঠিন কর্মসূচিগুলোতে তিনি দেশের বাহিরে চলে যান। দেশে ফিরেই সদর থানা বিএনপির দায়িত্ব চান এমএইচ মামুন। কিন্তু সেই পদে তাকে আসীন না করায় তিনি বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এবং গণমাধ্যমে তিনি মহানগর বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ধরণের মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছেন বলেও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা। নিজের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার জন্য মহানগর বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এসব অভিযোগ করেছেন শীর্ষ নেতারা।
নেতারা আরো জানান, এক সময় মহানগর ছাত্রদলের দায়িত্ব ছিলেন মামুন। পরে তিনি দেশের বাহিরে চলে যান। এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতি করায় তাকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। ছাত্রদলের রাজনীতি করায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব চেয়েছিলেন তাকে নিয়ে মহানগর বিএনপির রাজনীতি করার। কিন্তু তার উচ্চাকাঙ্খা পুর্ণ না হওয়ার ফলে তিনি বিদ্রোহী গ্রুপে চলে গিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন।
অন্যদিকে জানাগেছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অভিযোগ তুলেছিলেন বিএনপির পরিচয়দানকারী নেতা আতাউর রহমান মুকুল ভোটের দিন কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেন। ওই নির্বাচনে প্রকাশ্যে মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষে তার নির্বাচনী জনসভায় অবস্থান নেন আতাউর রহমান মুকুল। লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবত। আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মঞ্চে তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দেখা গেছে মুকুলকে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের পূর্বে বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা করেন মুকুল। সামনের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাবনা উকি দিচ্ছে- এমন আশায় এবার বিএনপির নেতাকর্মীদের নিজ বলয়ে ভীড়াচ্ছেন তিনি। তবে সামনের নির্বাচনেও যে গতি বুঝে লাঙ্গলের প্রার্থীর জনসভায় যেতেও পারেন মুকুল। এমন পরিস্থিতিতে সেই আতাউর রহমান মুকুলের বলয়ে যোগদান করেছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএইচ মামুন।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি প্রকাশ করেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোস্তাকুর রহমান। সেখানে তিনি ক্যাপশনে ইঙ্গিত দেন মুকুলের সঙ্গে রাজনীতিতে এসছেন এমএইচ মামুন। সেখানে বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজী নুরুউদ্দীন, বন্দর থানা বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টুর হাতে ফুল দিয়ে বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপ ও আওয়ামীলীগ-জাতীয়পার্টিঘেষা মুকুল বলয়ে যোগদান করেছেন মামুন। এদিন নগরীতে আব্দুস সবুর খান সেন্টুর বাসায় মুকুলের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপির বিদ্রোহী বলয়ে যোগদান করেন মামুন।
তবে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে এমএইচ মামুন বলেন, আমি মুলত সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে রাজনীতি করতে চাই। মহানগর বিএনপির ৪১ জন একসাথে রাজনীতি করুক এটা চাই।
যোগদানের বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে দাবি করেন, এটা যোগদানের বিষয় না। তারাতো আওয়ামীলীগ করেন না। তারা বিএনপির রাজনীতি করেন।
যোগদান না হলে তাদের হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকতার কারন কি- এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফুল দিয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করেছি মাত্র। যোগদান না।
ভিন্নসুত্রে জানাগেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটি থেকে যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুল সহ ১৪জন নেতা পদত্যাগ করেন।
তবে এতে করে মহানগর বিএনপির কোনো কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হয়নি। সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটা কর্মসূচি বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের নিয়ে পালন করে আসছেন। একই সঙ্গে রাজপথের ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বন্দর থানা বিএনপি সহ বেশকটি ইউনিয়নে বিএনপির কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন। গোগনগর ইউনিয়নে বৃহত্তর আয়োজনে প্রকাশ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে নজির স্থান করেন সাখাওয়াত ও টিপু। এতদিন সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে মামুনকে বেশকটি কর্মসূচিতে সক্রিয় দেখা গেলেও আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টিঘেষা মুকুলের হাতে ফুল দিয়ে যোগদানের বিষয়টি সমালোচনার সৃষ্টি করেছেন তিনি।