সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। এবার যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারির বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন মহানগর যুবদলের অপর অংশের নেতারা। মুলত সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তুর বিতর্কিত কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে এই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন যুবদলের নেতারা।
গত ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ২০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। এই কমিটি মহানগর যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি এককভাবে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অনুমোদন করান বলেও অভিযোগ করা হয়। গত ৬ এপ্রিল মহানগর যুবদলের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে দুই তৃতীয়াংশ যুবদল নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। এবার ১৯ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জে যুবদলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে যুবদলের ৫ স্টার কমিটিতে আসা নেতাদের দাওয়াত করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন যুবদল নেতারা।
জানাগেছে, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জ সানারপাড় করিম মার্কেটে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে প্রয়াত যুবদল নেতা নাজিমউদ্দীনের ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেখানে দোয়া মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়। একইদিন বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জে নাজিমউদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রয়াত নেতার বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। যেখানে মহানগর যুবদল ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে শুধুমাত্র সাগর প্রধান উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা ছিলেন না। এ অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ছিলেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এখানেও যুবদলের একাংশের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে সানারপাড়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কর্মী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এখানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মন্তুর সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি জুয়েল প্রধান, জুয়েল রানা, আমির হোসেন, রিটন দে, গোলাম কিবরিয়া, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আলী নওশাদ তুষার, ইকবাল হোসেন, আল-আমিন খান, মঞ্জুরুল আলম মুসা, মোকতার ভূইয়া, সোহেল খান বাবু, মিজানুর রহমান, শেখ মোঃ অপু, সহ-সাধারন সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ফয়সাল মাহমুদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসেন, সহ-কোষাধ্যক্ষ রুবেল হোসেন, সহ-দপ্তর সম্পাদক সোহেল মাহমুদ প্রমূখ।
এ বিষয়ে মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান ‘সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম’ এর কাছে অভিযোগ করেন তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কর্মী সভার বিষয়ে জানানো হয়নি। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এমনকি মহানগর যুবদলের ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটিতে তিনি ছিলেন একজন। তিনি বসবাসও করেন সিদ্ধিরগঞ্জে। অথচ তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কর্মী সভার বিষয়ে জানানো হয়নি। আরও অনেক নেতাদের জানানো হয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।
সাগর প্রধান বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কর্মী সভা করেছে। এই কর্মী সভার বিষয়ে আমাদের কাউকে জানানো হয়নি। যে কারনে গুটিকয়েকজন নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত ছিল। সভাপতি ও সেক্রেটারি ছাড়া ওই কর্মীসভার বিষয়ে আমাদের ৫ স্টার কমিটির কাউকেই জানানো হয়নি। যেহেতু তারা একাংশ নিয়ে কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন সেহেতু আমরাও প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মী সভা করব। এর জন্য দায়ী থাকবেন সভাপতি ও সেক্রেটারি। তাদের স্বেচ্ছাচারিতা চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে। সিদ্ধিরগঞ্জে যুবদলের কর্মী সভা হয়ে গেল অথচ আমরা জানি না!
সাগর প্রধান আরও বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে সেক্রেটারি মমতাজউদ্দীন মন্তু অভিযোগ করেছিলেন সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছে কমিটি দেয়ার নামে। পরবর্তীতে মন্তুকেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সভাপতি করা হলে মন্তু চুপ হয়ে যান। তাদের মাঝে অর্থের লেনদেনের বিষয়টি আসলেই আবার তারা গোপনে সমঝোতা করে এক হয়ে যান। এবারও তার ব্যতিক্রম দেখছি না। এখন তারা দুজন এক হয়ে গেছেন। এটাও আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়।’
এখানে উল্লেখ্যযে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে মহানগর যুবদলের ঘোষণা করা বন্দর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ১২ ঘন্টার মধ্যে তা স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল। ৬ এপ্রিল শনিবার বন্দরে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু। কমিটি গঠনের ১২ ঘন্টার মধ্যেই এই কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি।
জানাগেছে, ২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন তৎকালীন জেলা যুবদল দাবি করে আসছিল। ওই সময় কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতারা ৫টি ইউনিয়ন জেলার আওতাধীন থাকবে বলে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু জেলা যুবদলের তৎকালীন সভাপতি ও সেক্রেটারি বিরোধ থেকে সরে দাড়িয়ে ৫টি ইউনিয়ন পরিচালনার জন্য মহানগর কমিটিকে সুযোগ করে দেয়। যার ফলে সেখানে বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠন করেছিল মহানগর যুবদল। সেই সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের ভিতরের এলাকা নিয়ে বন্দর থানা যুবদলের কমিটিও গঠন করে মহানগর যুবদল।
এর আগে জেলা যুবদলের আওতাধীন দাবি করে বন্দর উপজেলা যুবদলের ব্যানার নিয়ে ঢাকায় এক কর্মসূচিতে যোগদান করতে গেলে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের দ্বারা মারধরের শিকার হন বন্দর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দীন শিশির।
ওই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বন্দরে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি বর্তমান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে জুড়া ঝাড়– মিছিল করেছিলেন কেন্দ্রীয় ওলামাদলের সহ-সভাপতি মুন্সী সামসুর রহমান খান বেনু ও বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম হিরন। পরবর্তীতে তৎকালীন জেলা যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি বিরোধ এড়াতে মহানগর যুবদলের উপর ছেড়ে দেয় ওই ৫টি ইউনিয়ন। কিন্তু বর্তমান জেলা যুবদল সেই ৫টি ইউনিয়ন নিজেদের দাবি করায় আবারো মহানগর ও জেলা যুবদলের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকা থেকে জেলা ও মহানগর যুবদলের দুটি কমিটিতেই নেতাদের পদে রাখা হয়েছে।
কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল ‘সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন, বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারির নির্দেশ এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের যুবদলের নেতাদের জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, এখন কাগজের মাধ্যমে এভাবে কমিটি হবেনা। সকল কমিটি এখন সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হবে।’
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেছিলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের জানানো হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে। আমরা আলোচনার মাধ্যমেই গঠন করব। আর সীমানা নিয়ে কোন জটিলতা নাই। ৫টি ইউনিয়ন মহানগর যুবদলের আওতাধীন থাকবে।’
৬ এপ্রিল শনিবার নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও শাহাদুল্লাহ মুকুলকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। বন্দর উপজেলা যুবদলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ৯০ দিনের জন্য এই ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল।