খোরশেদকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের একাংশের ৭ দিনের আল্টিমেটাম

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের একাংশের নেতারা। ২২ এপ্রিল সোমবার সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বন্দরে ২৭নং ওয়ার্ডের কুড়িপাড়া এলাকায় বন্দর যুবদলের আয়োজিত এক কর্মীসভায় এই আল্টিমেটাম দিয়েছেন যুবদলের নেতারা। কর্মী সভায় মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান তার বক্তব্যে এমন ঘোষণা দিলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা হাত তালি দিয়ে তা সমর্থন করেন।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি সানোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, প্রধান বক্তা হিসেবে মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান, বিশেষ অতিথি হিসেবে মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি আহাম্মদ আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ বক্তব্য রাখেন।

ছবি- যুবদলের কর্মীসভায় বক্তব্য রাখছেন মনোয়ার হোসেন শোখন।

কর্মী সভায় প্রধান বক্তা সাগর প্রধান তার বক্তব্যে বলেন, সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে গেলাম। এই সাত দিনের মধ্যে এই মহানগর যুবদলের সভাপতি, সেক্রেটারি সকলকে নিয়ে বসে কমিটি কিভাবে সাজাতে হবে, কমিটি কিভাবে কাজ করবে, নেতাকর্মীদের কিভাবে মুল্যায়ন করা যায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে যদি অপারগতা প্রকাশ করে, তাহলে আমরা কেন্দ্রকে জানাবো এবং সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর নারায়ণগঞ্জ আমাদের সঙ্গে যত নেতাকর্মী আছে, তাদের সাথে পরামর্শ করে, আমরাও বিকল্প কি করা যায় সেটা চিন্তা করব। এবং সেটা এমনভাবে করব, আপনারা যত সহজ মনে করেন এতটা সহজে বুঝবেন না। এত সহজে হাল ছাড়বো না। একটা হাতি হাজার হাজার পিপড়াকে পাড়া দিয়ে পিসিয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু একটা পিপড়া যদি বাইয়া হাতির কানের ভিতরে ঢুকে তাহলে সেই পিপড়া কিন্তু বিশাল হাতিকে নাচাইয়া ফালায়। আমরা কিন্তু সেই পিপড়া। কাজেই আপনারা চালাকি করবেন না। যত দূর পারি এগিয়ে যাবো কিন্তু পরাজিত হবো না ইনশাহআল্লাহ।

সাগর প্রধান বলেন, মহানগর যুবদলে ২৫ জন কখনও সহ-সভাপতি হতে পারেনা। ১৮ জন কখনও যুগ্ম সম্পাদক হতে পারেনা। যোগ্য আছে, ধরলাম সবাই যোগ্য। কিন্তু কমিটির ক্ষেত্রে ২৫ জন সহ-সভাপতি হতে পারে না। এটা স্বেচ্ছাচারিতা, এটা সংগঠন বিরোধী কাজ। এটা হচ্ছে পামওয়েল তেল আর এক নম্বর ঘি এক সাথে এক ধরে বেচা কিনি করা। যারা এভাবে গুণীজনের সম্মান নষ্ট করে আল্লাহর তরফ থেকে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের সম্মান নিজে নষ্ট করে।

সাগর প্রধান দূঃখ প্রকাশ করে বলেন, তৈমূর আলম খন্দকারের একটা ভুলের কারনে আমাকে জেল খাটতে হয়েছিল। তার ভুলের কারনেই দ্বিতীয়বার জেলে যেতে হয়েছিল।

ছবি- যুবদলের কর্মী সভায় বক্তব্য রাখছেন সানোয়ার হোসেন।

সাগর প্রধান এর আগে বলেন, আমরা মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক হিসেবে সম্মান করে তার সঙ্গে কাজ করেছি। দলের দুঃসময়ে যেনো বিভেদ সৃষ্টি না হয় আন্দোলন সংগ্রামে কাজ করেছি। ২০১৪ সালের আন্দোলন সংগ্রামে খোরশেদ নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে পারেনি। ওই সময় সবচেয়ে বেশি ভুমিকা ছিল সানোয়ার ভাইয়ের। আমরা পালিয়ে থেকে এসেও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি পালন করেই আবার আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলাম। খোরশেদ যখন আত্মগোপনে ছিল তখন আমরাই মহানগর যুবদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম এবং আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলাম।

তিনি খোরশেদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, যদি সুপার ফাইভ কমিটি দিয়ে থাকে, যদি সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কোন কাজেই না লাগে তাহলে আপনারা এই দুটা পদকে কেন বাতিল করলেন না? আজকে আমাদের পদ নিয়ে কোন বিরোধীতা নাই। আমি সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও আছি, শোখন ভাই সিনিয়র সহ-সভাপতি পদেও আছেন। আমরা তো আমাদের জন্য কথা বলছি না। কিন্তু সানোয়ার ভাইকে অবমুুল্যায়ণ করা হয়েছে। সানোয়ার ভাইয়ের ঋণ খোরশেদ কখনও শোধ করতে পারবেন না।

তিনি বলেন, আমরা কোন গ্রুপিং করতে চাইনা। আমরা শুধু একটা কথা বলতে চাই, এখনও আমরা মিলে মিশে কাজ করতে চাই। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা আছে, আমরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চাইনা। তারা সিদ্ধিরগঞ্জে সেদিন কর্মী সভা করেছেন। কিন্তু আমি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটিতেও আমি সিনিয়র সহ-সভাপতি, মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। মহানগর যুবদলের সুুপার ফাইভ কমিটিতে আমি ছিলাম। কিন্তু আমার এলাকায় কর্মী সভা করলেন অথচ আমাকে জানানো হলো না! আপনার তো লজ্জা হওয়া উচিত। মতবিরোধ থাকতে পারে, যখন কমিটির কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, আমি আসি বা না আসি, আমাকে দাওয়াত দেয়া উচিত ছিল। এটা সংগঠনের নিয়ম। নিয়ম ভঙ্গ করেছে মহানগর যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তথাকথিত সভাপতি।

সাগর প্রধান কঠোর ভাষায় বলেন, এই মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি ২০১৪ সালে আত্মগোপন করার কারনে, সেইদিন এই খোরশেদ আর কাউকে খুজে পায় নাই। আমাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে কাজ করিয়েছিল। বিপদের দিন সাগর প্রধানকে ডাকবেন, বিপদের দিন ভাই ডাকবেন, মিছিল করাবেন, মিটিং করাবেন, পোস্টার ফ্যাস্টুন ব্যানার করাবেন, আর আপনারা ঢাকায় আত্মগোপনে থাকবেন, আর আমরা কাজ করব। তবুও এব্যাপারে কোন অভিযোগ ছিল না, কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। কেন্দ্র থেকে সুপার ফাইভ কমিটি দিয়েছে, আমাদের কোন দাম নাই। সভাপতি ও সেক্রেটারি বইসা বইসা নিজেরা কমিটি বানাইয়া কেন্দ্র থেকে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসলো।

ছবি- যুবদলের কর্মী সভায় বক্তব্য রাখছেন আহাম্মদ আলী।

কর্মী সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক বোরজাহান, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সোহেল মিয়া, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সুমন প্রধান, সহ-ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক জাকির হোসেন, সহ-যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান, সদস্য রুবেল হোসেন, মাসুম সহ মহানগর যুবদলের প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী। এই কর্মী সভায় বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে ভুমিকা রাখতে মহানগর যুবদলকে সহযোগীতার আশ^াস দিয়ে কর্মী সভায় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা মাসুদুর রহমান, মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জুয়েল রানা ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক আলী নেওয়াজ।