সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার তার মাসদাইরের বাসভবন মজলুম মিলনায়তনে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষকদলের সম্মেলনে বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেও বিএনপির রাজনীতি করা যায়, আবার বিএনপির রাজনীতি করেও জাতীয় পার্টির রাজনীতি করা যায়। বিএনপি নেতারা সদর, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান, তারাই বিএনপির জেলা কমিটির পদেও আছে, মহানগর কমিটির পদেও আছে, তারাই যায় আওয়ামীলীগের মিটিংয়ে, বসেপড়ে জাতীয় পার্টির মিটিংয়ে। আবার তাদের সাহায্যেই আওয়ামীলীগ নির্বাচন করছে, জাতীয় পার্টি নির্বাচন করছে।
মুলত ওই সময় বন্দর উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, তার অনুগত হান্নান সরকার, সুলতান মাহামুদ সহ মুকুল অনুগামীরা বরাবরই জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতেন। যার ২০১৮ সালে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন মুকুল, হান্নান ও সুলতান গংরা। এসব ব্যক্তিরা নিজেদেরকে বিএনপি নেতা দাবি করলেও সরাসরি আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন ওই নির্বাচনে। হান্নান সরকারের বাড়িতেই লাঙ্গলের নির্বাচনী ওঠান বৈঠক করা হয়। সুলতান আহমেদ সিরাজদৌলা মাঠে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সমাবেশের আয়োজনে বাধা দেয়। পরে অন্যত্র সমাবেশ করতে হয়।
ওই নির্বাচনে লাঙ্গলের প্রার্থী সেলিম ওসমানের জনসভায় আতাউর রহমান মুকুল লোকজন নিয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। একইভাবে হান্নান সরকার ও সুলতান আহমেদরাও মিছিল নিয়ে লাঙ্গলের নির্বাচনী জনসভায় যোগদান করেন। এসব অংশগ্রহণের ছবি গণমাধ্যমে সংরক্ষিত। এছাড়াও ২০১৪ সালের উপ-নির্বাচনে সেলিম ওসমানের বিজয়ের এক বছরের মাথায় খানপুর এলাকায় সেলিম ওসমানকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও মিছিল নিয়ে এই তিন নেতা অংশগ্রহণ করেছিলেন। যোগদানের ব্যানারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ছিলো। সেই তারাই এখন বিএনপির নিয়ন্ত্রন নেয়ার চেষ্টায় মরিয়া। না পেরে বিএনপির বিরুদ্ধে লিপ্ত ষড়যন্ত্রে।
গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে মহানগর বিএনপির কমিটির ঘোষণা দেয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটি গঠনের পর বন্দরে মুকুলের অনুগত বেশকজন পদত্যাগও করেন। ইতিমধ্যে আতাউর রহমান মুকুল ও নূরউদ্দীন আহমেদের পদত্যাগপত্র চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করে তাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছে বিএনপি।
কমিটি গঠনের পর থেকে মুকুল বলয়ের নেতাকর্মীরা সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বে মুলধারায় ফিরতে শুরু করেন। যদিও নেতাকর্মীদের সরকারি দলের ভয়ভীতি দেখিয়ে মুকুল বলয়ে রাখার চেষ্টা চলছিলো। সান নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন আতাউর রহমান মুকুলের বলয়ে ছিলেন হাজী জাবেদ হোসেন। সেই জাবেদ হোসেন এখন সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বে রাজনীতিতে ফিরেছেন মুলধারায়। বন্দর থানা বিএনপির কর্মীসভায় জাবেদ হোসেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে মুকুল যেভাবে লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করেছিলো সেই বর্ণনাও দিয়েছিলো। সম্প্রতি আরো বেশকজন নেতাকর্মীরা মুকুল বলয় থেকে সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বে মুলধারায় ফিরেছেন। অনেকেই মুলধায় ফেরার অপেক্ষায়। তিনদিন পূর্বে মুকুল ও নূরউদ্দীনকে চূড়ান্তভাবে কেন্দ্রীয় বিএনপি পদত্যাগ গৃহিত হওয়ায় তাদের বলয় থেকে নেতাকর্মীরা মুলধারায় ফিরতে শুরু করেছেন। নেতাকর্মীরা আর ভুল পথে থাকতে নারাজ।
এদিকে বন্দর থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান দুলাল ও তার আরেক ভাই বন্দর থানা ছাত্রদলের সাবেক শীর্ষ নেতা নাজমুল হক রানা এখন রাজনীতি করছেন সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির মুলধারায়। হাবিবুর রহমান দুলাল মহানগর বিএনপির সদস্য এবং নাজমুল হক রানা বন্দর থানা বিএনপির সদস্য সচিব। তারা দুজনই আতাউর রহমান মুকুলের চাচাতো ভাই। এক সময় তারা ছিলেন মুকুলের সবচেয়ে বড় শক্তি। এখন বন্দরে সাখাওয়াত-টিপুর অন্যতম শক্তি হলো দুলাল ও রানা।
বন্দর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল হক হিরন ও বন্দর থানা বিএনপির আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ পনেছ ছিলেন এক সময়কার তৈমূর আলমের লোক। তারা এখন সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্ব মেনে রাজনীতি করছেন। মুকুলের একনিষ্ট শক্তি ছিলো থানা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন শিশির। সেই শিশিরও এখন সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বে রাজনীতি করছেন। তৈমূর বলয়ের হারুন অর রশিদ লিটনও ভীড়েছেন সাখাওয়াত-টিপুর বলয়ে।
এদিকে মুকুলের ওয়ার্ডে বেশকটি বিশাল বিশাল কর্মসূচিও পালন করেছেন সাখাওয়াত ও টিপু। নিয়মিত সেই ওয়ার্ডে কর্মসূচি পালন করছে মুলধারা। ওই এলাকায় মুকুলের লোকজন ও মুকুলের আত্মীয়-স্বজন ধীরে ধীরে ফিরছেন সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে বিএনপির মুলধারায়। যে কারনে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন-বন্দরে মুকুলের রাজনীতির ঘরবাড়ি এখন সাখাওয়াত-টিপুর নিয়ন্ত্রণে।