নারায়ণগঞ্জের রাজপথে বিএনপির তৃণমুলের ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র সাড়ে ৮ মাস। সামনের ঈদের পর বিএনপি সারাদেশে কঠোর আন্দোলনে যাবে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এইসব আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির তৃণমুল পর্যায় থেকে যেসব নেতাকর্মীরা পুলিশের বন্দুকের নলের সামনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে শ্লোগান দিবেন, সেইসব নেতাকর্মীরা রয়ে যাচ্ছে আলোচনার বাহিরেই। অতীতেও রাজপথে যেসব নেতাকর্মীরা ঘাম জড়িয়েছেন, দলের ঘানি টেনেছেন, অনেক শীর্ষ নেতারা এসব কর্মীদের ব্যক্তিগত কর্মচারীর মত ব্যবহার করেছেন, কেউ কেউ বাড়ির বাজার করিয়েছেন। রাজপথে কর্মীদের রক্তে কেউ কেউ নেতাও হয়েছেন। তৃণমুল নেতাকর্মীরা দলের কামলা সাজতে গিয়ে অনেক নেতাদের কামলায় পরিনত হয়েছেন। তবুও রাজপথের আন্দোলন ছেড়ে যাননি, টার্গেট একটাই দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।

যুবদল নেতা শাওনের মত অজস্র কর্মী রয়েছেন, যারা অতীতে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে পুলিশের বন্দুকের সামনে বিএনপির নামে, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার নামে নেচে গেয়ে শ্লোগান দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের শেষ প্রান্ত দূর্গম চরাঞ্চল কালাপাহাড়িয়া এলাকা থেকেও নিরেট সাধারণ কর্মীরাও কয়েক ঘন্টা গাড়ির যানজট ঠেলে নারায়ণগঞ্জ নগরীতে এসে পুলিশের বন্দুকের সামনে বিএনপির শ্লোগন দিচ্ছেন। কখনো মামলা খাচ্ছেন, কখনো গ্রেপ্তার হচ্ছেন, কখনো পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হচ্ছেন। তবুও তাদের লড়াই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।

কিন্তু এসব নিরেট সাধারণ কর্মীরাই থেকে যাচ্ছে অবহেলায়, কখনোবা দলের অবমুল্যায়নে। তৃণমুলের কারো কারো পদটুকুও মিলছেনা। কেউ কেউ নেতাদের দ্বারে ঘুরে ঘুরে পদ জুটালেও আরেক নেতা দায়িত্বে এসে পদ ভাগিয়ে দিচ্ছেন নিজ বলয়ের কর্মীদের হাতে। কারো কারো পদ মিললেও মিলছেনা যোগ্য স্থান কিংবা সম্মানটুকু। তবুও রাজপথ ছাড়ছেনা তারা। বিএনপি নেতারা বলছেন- এরাই নারায়ণগঞ্জের বিএনপির রাজপথের তৃণমুলের আক্রমনাত্মক শক্তি অর্থাৎ স্ট্রাইকিং ফোর্স। যারা সামনের আন্দোলনেও জীবনাবাজি রেখে গণতন্ত্রের মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এরা নারায়ণগঞ্জের রাজপথে বিএনপির প্রাণ, যারা সামনের আন্দোলনে বিএনপির জন্য টনিক হিসেবে কাজ করবে।

নেতাকর্মীরা বলছেন- এদের মধ্যে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন। তিনি সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে রাজনীতি করে এসেছেন। বেশ কর্মীবান্ধব নেতাও। ছিলেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়কও। সামনের আন্দোলনে রাজপথে তারও বিরাট ভুমিকা থাকবে বলে মনে করছে বিএনপি। একইভাবে সারা বছর রাজপথে ঘানি টানছেন সাগর প্রধান, যিনি মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। রাজপথের আন্দোলনে একাধিকবার তার শক্তি প্রদর্শণও করেছেন। সামনের আন্দোলনেও বিরাট ভুমিকা থাকছে তার। জেলা যুবদলের নেতৃত্ব প্রত্যাশার আশায় রাজপথে ঘাম ঝড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় ‍যুবদলের সদস্য সাদেকুর রহমান সাদেক। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে নিহত যুবদল নেতা শাওন প্রধান সাদেকের কর্মী ছিলেন। মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জরুল আলম মুছা ও শেখ মোহাম্মদ অপুও রাজপথে রয়েছেন। প্রতিটা কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ শোডাউন করে। সামনের আন্দোলনে তাদের ভুমিকাও থাকছে বিরাট সেটাও বলা যায়।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সাখাওয়াত ইসলাম রানা, মাকিদ মোস্তাকিম শিপলু ও শাহিন আহমেদও রাজপথে একাধিকবার ঘাম ও রক্ত ঝড়িয়েছেন। একই সঙ্গে রানা নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলেরও। নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আল-আমিন প্রধান ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি রাফিউদ্দীন রিয়াদেও আছেন আন্দোলনের মাঝেই। রিয়াদের মামলা ও জেল খাটার রেকর্ড বিরাট। এসব নেতারাও সামনের আন্দোলনে থাকবে সামনে সেটাও বলা যায়।

সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির জন্য এক বড় কামলা হলো সেলিম হোসেন দিপু। উপজেলা বিএনপির পুরো অংশ জুড়ে সেলিম হোসেন দিপুর অঙ্গাঅঙ্গী সম্পর্ক। হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের আশপাশে যার দেখা মিলে সার্বক্ষনিক। কোর্ট থেকে রাজপথে সবত্র সেলিম হোসেন দিপুর আভির্ভাব। সোনারগাঁও উপজেলা কৃষকদলের সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব নিয়ে সাংগঠনিক শক্তিশালী রূপ দেয় সেলিম। এবার উপজেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক হয়েছেন। মৃত সংগঠনগুলো প্রাণ দিচ্ছেন সেলিম। সঙ্গে জাসাসের উপজেলা কমিটি আমির হোসেনের নেতৃত্বে নিয়ে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করানোর পেছনেও সেলিমের হাত। দৈনিক ১৮ ঘন্টা দলের জন্য কাজ করলেও আত্মপ্রচারে নেই তিনি। গণমাধ্যমেও আলোচনায় আসেনা তেমন একটা। দিনরাত পরিশ্রম করলেও অনেকের চক্ষুশূল। সঙ্গে আছে উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ ভুঁইয়া। সামনের আন্দোলনে সেলিম ও আশরাফের অংশগ্রহণ থাকবে পুর্বের চেয়ে দিগুণ।

নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্ব প্রত্যাশি ফতুল্লার রাসেল মাহামুদ ও রূপগঞ্জের রফিকুল ইসলাম। দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ রয়েছে চোখে পড়ার মতই। সামনে নির্বাচন কেন্দ্রীক আন্দোলনেও তাদের রাজপথে ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকবে সেটা বলা যায়। পদ হারালেও রাজপথ ছাড়েনি রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মাসুদুর রহমান। রাজনীতির কারনে নিজ পিতা ও মাতাও হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো। এ ছাড়াও সোনারগাঁয়ের যুবদল নেতা খন্দকার রেজাউল হক, আরিফুল ইসলাম, মাশফিকুর রহমান মোহন, ছাত্রদল নেতা জাকারিয়া ভুঁইয়া ও আরিফুর রহমান রাজের ভুমিকাও সারা বছর রাজপথে সক্রিয় ছিলো। কদিন আগেও জেল খেটে বের হলেন জাকারিয়া। এর আগে জেলে ছিলেন আরিফুর ও মোহনও। মাঠ ছাড়ছেনা মহানগর ছাত্রদল নেতা নাদিম মাহামুদও। এসব নেতাকর্মীদের অতীত রেকর্ড রাজপথে ব্যাপক অংশগ্রহণের। সামনের আন্দোলনেও যে এরা থাকবে কঠোর ভুমিকায় সেটাও অনুমেয়।

বন্দর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সম্রাট হাসান সুজন। এর আগে ছিলেন মহানগর যুবদলের সদস্য। বন্দর উপজেলা যুবদলের নেতৃত্ব প্রত্যাশি সুজন সার্বক্ষনিক আছেন রাজপথে। অতীতেও কঠোর আন্দোলনে ছিলেন রাজপথে। একইভাবে হামলা মামলার শিকার জাহিদ খন্দকারও রাজপথে সক্রিয় ভুমিকায় আছেন সর্বত্র। বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার বড় ভাই পুলিশের হাতে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হোন। দীর্ঘদিন কারাভোগ করায় অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। জামিনে মুক্তির কয়েকদিনের মধ্যেই জাহিদের ভাই মারা যান। এত্ত বড় ত্যাগের পরেও রাজপথ ছাড়েনি জাহিদ খন্দকার। ফলে সামনের আন্দোলনে সুজন ও জাহিদের ভুমিকাও থাকবে রাজপথে সেটাও বলা যায়।