ডিস বাবুর পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অস্বীকৃতি জানালেন আনিসুর রহমান দিপু

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবুর পক্ষে আইনি লড়াইয়ে স্বীকৃতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেব ৪ বারের নির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু। ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ডিস বাবুর স্বজনেরা আনিসুর রহমান দিপুর কাছে আইনি সহায়তা চান। কিন্তু তিনি ডিস বাবুর মামলাটি পরিচালনার জন্য অস্বীকৃতি জানিয়ে ডিস বাবুর স্বজনদের নাকচ করে দেন।

এ বিষয়ে আনিসুর রহমান দিপুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর বাবুর লোকজন আমার কাছে আইনি সহায়তা চেয়েছিলেন। আমি গ্রহণ করিনি। আমি একজন আইনজীবী। কার পক্ষে আইনি লড়াই চালাবো কিংবা চালাবো না সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই আমি কাউন্সিলর বাবুর পক্ষে আইনি লড়াই চালাবো না বলে তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি।’

তবে জানাগেছে, গত ১৮ এপ্রিল কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবুকে গ্রেপ্তারের পর বাবুর লোকজন আনিসুর রহমান দিপুর কাছে আইনি সহায়তা চান। ডিস বাবুর মামলাগুলো পরিচালনার জন্য তার দ্বারস্থ হলেও তিনি মামলাটি গ্রহণ করেননি। অথচ ডিস বাবু নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ কর্মী। ডিস বাবু গ্রেপ্তারের পর পুলিশ সুপারের কাছেও গিয়েছিলেন শামীম ওসমান। আর শামীম ওসমানের বন্ধু এই আনিসুর রহমান দিপু।

অন্যদিকে জানাগেছে, গত ৬ এপ্রিল ফতুল্লায় জরুরী কর্মী সভায় নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান তার নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে আল্টিমেটাম দিয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, প্লিজ ডোন্ট প্লে এই নারায়ণগঞ্জে। এখানে খেইলেন না। তবে নারায়ণগঞ্জে খেলা হবেনা। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে টের পাইবেন।’ তবে ১২ দিন শেষে নেতাকর্মীরা টের পাইলেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবু চাঁদাবাজি মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার!

১৮ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবুকে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিস বাবু নারায়ণগঞ্জে স্যাটেলাইট কেবল ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করেন। তিনি এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট কর্মী হিসেবেই পরিচিত। এর আগে আব্দুল করিম বাবুর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের ফরাজীকান্দা এলাকার অপর ডিস ব্যবসায়ী হাসান একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন।

গত ২৩ মার্চ ভুক্তভোগী মো. হাসান ব্যবসায়ী বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। হাসান জানান, বন্দর সোনাকান্দা হতে আলীনগর হয়ে প্রায় কয়েক লাখ টাকার ডিস লাইনের ক্যাবল সহ সরাঞ্জমাদি কেটে নিয়ে গেছে ফরাজীকান্দা এলাকার সন্ত্রাসী সজিব গং। ডিসের ক্যাবল কাটার কারণে প্রায় ২ হাজার গ্রাহক ডিস লাইনের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ঘটনায় বাবু ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। ২৩ এপ্রিল ডিসু বাবুর বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ডের শুনানি শেষে আদালত জেল গেটের সামনে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত।

এদিকে শামীম ওসমানের এমন ১২ দিনের ঘোষণার পর ৯এপ্রিল জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে এক বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমান বলেছিলেন, আমাদের মাঝে আজকের পর হয়তো বরফ গলে যাবে।’ ওইদিন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ সেলিম ওসমানকে বলেছিলেন, আমাদের কোন বরফই নাই। বরফ গলার প্রশ্নই ওঠেনা।’ এসপি বলেছিলেন, ‘যদি কোন জুয়ারী, মাদক বিক্রেতা, ভূমিদস্যূ, সন্ত্রাসী, তেল চোরকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর দেখেন আপনাদের লোক হয় তাহলে সমস্যা নাই, অ্যাস পার ‘ল’ আদালত থেকে জামিন করিয়ে নিবেন। আমরা আদালতে পাঠাবো, আপনারা জামিন করিয়ে নিবেন।’

এর পর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে পুলিশ সুপারের আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যান শামীম ওসমান। অনেকেই মনে করেছিলেন তাদের মধ্যে বৈরিতার অবসান হয়েছে। কিন্তু ১৮ এপ্রিল এবার গ্রেপ্তার হলেন কাউন্সিলর বাবু।