সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। রমজান মাসের আগেই কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে ঠিক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেভাবেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি ঘুছিয়ে নিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। নিজেদের এখনি বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ঘোষণা না করলেও তারা আন্দোলনের পাশাপাশি নিজ নিজ নির্বাচনী আসন ঘুছিয়ে নিয়েছেন। যার মধ্যে আগামী নির্বাচনে জেলার দুটি আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীতায় নিজ নিজ আসনে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিশ্চয়তার মধ্যেই রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আইনজীবী নেতা, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। তবে বাকি তিনটি আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে হতে পারে মনোনয়নযুদ্ধ।
নেতাকর্মীরা বলছেন- নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসন। এই আসনে গত নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির জোট নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরামকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এই আসনের চারবারের সাবেক এমপি ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বয়স ও নানা অসুস্থ্যতার কারনে রাজনীতিতে নেই। এসএম আকরামেরও একই দশা। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে মহানগরীর মাঠ ঘুছিয়ে নিয়েছেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। ২০১৬ সালে ধানের শীষ প্রতীকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার, সাবেক এমপি জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও সাবেক এমপি আবুল কালামের বিরোধীতার পরেও আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করে ৯৬ হাজার ভোট পান সাখাওয়াত হোসেন খান। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সাখাওয়াতের বিকল্প আর কেউ নেই। ফলে আগামী নির্বাচনে তার হাতেই ওঠতে যাচ্ছে ধানের শীষ প্রতীক- সেটা বলা যায়।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনে একক প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। গত নির্বাচনে তিনি এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। ২০১৪ সালে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন মান্নান। সান নারায়ণগঞ্জকে নেতাকর্মীরা জানান সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফর বরাবরের মতই রাজনীতি থেকে দূরে। এ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। ২০০৮ সালের পর থেকে সোনারগাঁয়ের বিএনপির নির্যাতিত নিপীড়িত নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠেছেন মান্নান। ফলে সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীরা মান্নানের নেতৃত্বেই রাজনীতি করছেন। এখানেও তার বিকল্প কোনো প্রার্থী দেখছেন না নেতাকর্মীরা। ফলে আগামীতেও এখানে মান্নানের হাতেই ওঠতে যাচ্ছে ধানের শীষ।
অন্যদিকে উপরোক্ত দুটি আসনে বিএনপির দুজন প্রার্থীতার বিষয়টি অনেকাংশে নিশ্চয়তা থাকলেও বাকি তিনটি আসনে প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শিল্পপতি শাহআলম ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনের মধ্যে তুমুল লড়াই হতে পারে। এই আসনে ২০০১ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন গিয়াস। ফতুল্লা থানা নিয়ে গঠিত এ আসনে ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন শাহআলম। গত নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রার্থী মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলেও সামনের নির্বাচনে গিয়াস কিংবা শাহআলমের মধ্যে একজনের হাতেই ওঠবে ধাণের শীষ।
নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনে গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। তবে এবারের নির্বাচনেও মনোনয়ন লড়াইযে থাকছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মাহামুদুর রহমান সুমন। একই সঙ্গে মাঠে নেমেছেন সাবেক এমপি এম আতাউর রহমান আঙ্গুর। এখানে ধানের শীষ প্রতীকের লড়াই হতে পারে ত্রিপক্ষীয়। তবে সুমন ও আঙ্গুরের দেখা রাজপথে যায় না। রাজপথের আন্দোলনে আজাদ বেশ সক্রিয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রয়াত ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বদরুজ্জামান খান খসরুর ছেলে সুমন ও খসরুর ভাই আঙ্গুর। এক সময় আঙ্গুর ও খসরুর বিরোধের সুযোগে এই আমলে আজাদের সৃষ্টি হয়। উপজেলা বিএনপির পুরেো কমিটি আজাদের নিয়ন্ত্রণে।
নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনে গত নির্বাচনে মনোনয়ন পান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির। এবারো গত নির্বাচনের মতই মনোনয়ন লড়াইয়ে থাকবেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তািফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া। বর্তমানে রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কমিটির পুরো নিয়ন্ত্রক দিপু ভুঁইয়া। জেলা বিএনপির কমিটিতেও তার প্রভাব রয়েছে। তবে রূপগঞ্জ ও জেলা বিএনপিতে কাজী মনিরের শক্ত অবস্থান না থাকলেও তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদে রয়েছেন। মাঝেসাঝে জেলার রাজনীতিতেও দেখা যায়।