সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগ মুলত দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এখানে রাজনীতি করেন। একটি পক্ষকে উত্তর মেরু ও অপর পক্ষকে দক্ষিণ মেরু হিসেবেই পরিচিতি পেয়ে আসছে। উত্তর মেরুর নেতৃত্বে এমপি শামীম ওসমান ও দক্ষিণ মেরুর নেতৃত্বে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ যোগদানের পর একের পর এক শামীম ওসমানের লোকজন ও আত্মীয়স্বজন যখন বিভিন্ন অভিযোগে কিংবা মামলায় অভিযুক্ত হচ্ছেন, কেউ কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ সুপারকে নিয়ে গত ৬এপ্রিল আওয়ামীলীগের একটি জরুরী সভায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও তুলেছিলেন আওয়ামীলীগের একটি পক্ষে। ওই দিন মেয়র আইভীকে ইঙ্গিত করে ও এসপিকে উদ্দেশ্যে করে শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘কারো ফাঁদে পাড়া দিয়ে খেইলেন না।’ তবে ৯ এপ্রিল পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ তার কার্যালয়ে এমপি সেলিম ওসমানের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেছিলেন, আমরা কাজ করতে চাই, কাজের সুযোগে চাই। আমাদেরকে যেনো কোন দিকে ফেলা না হয়।’ তবে এবার দক্ষিণেও ছাড় দেননি পুলিশ সুপার।
এদিকে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জে জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন ওরফে আল জয়নালকে একটি চাঁদাবাজি মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন আহমদ এর আদালতে আল জয়নালকে উপস্থিত করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের এসএ মালেহ রোডের জয়নালের বাড়ির সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই চাঁদাবাজি মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। আদালত রিমান্ড ও জামিন শুনানি আগামী ২৮ এপ্রিল ধার্য্য করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এখানে উল্লেখ্যযে, জয়নাল আবেদীন হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদিরের আপন বিয়াই। আব্দুল কাদির হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ভগ্নিপতি। সেই সুবাদে মেয়র আইভীর বিয়াই হন গ্রেপ্তারকৃত জয়নাল আবেদীন। এর আগেও জয়নালের বিরুদ্ধে একাধিকবার নানা অভিযোগ ওঠলেও তাকে আইনের আওতায় আনা যায়নি। এমনকি আবদুল কাদিরও একাধিকবার তদবির করেছিলেন বলেও মিডিয়াতেও প্রকাশিত হয়েছিল। জামাতের পৃষ্টপোষকতার অভিযোগ ওঠলেও ওই পক্ষের তদবির ছিল জয়নালের পক্ষে। যে কারনে বারবার পার পেয়েছিল জয়নাল।
গত ৩ এপ্রিল এসপি হারুন অর রশীদ তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘কোন অপরাধীকে ছাড় দিব না, সে যত বড় ক্ষমতাশালী লোক হোক।’ ৯ এপ্রিল তার কার্যালয়ে বলেছিলেন, কোন তেল চোর, জুয়ারী, মাদক বিক্রেতা, ভূমিদস্যূকে গ্রেপ্তারের পর যদি দেখা যায় সে কারো হয়ে যায় তাহলে কোন সমস্যা নাই, অ্যাস পার ল, আপনারা আদালত থেকে জামিন করিয়ে নিবেন। আইন সবার জন্য সমান। আমরা আদালতে পাঠাবো, আপনারা জামিন করাবেন।’
আরও জানা যায়, এর আগে কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করেন জয়নাল আবেদীন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে অধিষ্ট হন। এর আগে তার বিরুদ্ধে জামাতের অর্থযোগানদাতা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাও হয়। থানায় প্রবেশ করে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে পুলিশের এক কনেস্টবলকে গুলি করে আহত করেছিলেন এই জয়নাল। নারায়ণগঞ্জে শীর্ষ ভুমিদস্যূদের মধ্যে অন্যতম জয়নাল। নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের জমি দখল করার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। সরকাাির মহিলা কলেজের অধ্যক্ষকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করা হয়। বিষয়টি নিন্দার ঝড় ওঠে।
এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টাও করে এই জয়নাল। তার বড় শক্তিশালী নারায়ণগঞ্জের একজন তার পীর। ওই পীরের মুরিদ সে এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এসব বিষয় নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা।
এদিকে ২৪ এপ্রিল বুধবার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত ২০লাখ টাকা চাঁদাবাজি মামলায় নারায়ণগঞ্জের আলোচিত জাতীয় পার্টির (এরশাদ) নেতা আল জয়নালকে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্বর্ণ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক বাদী হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সদর মডেল থানায় জমি সংক্রান্ত ঘটনায় ২০ লাখ টাকা চাঁদাদাবী মামলাটি করেন।