সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
২০০১ সাল থেকে শুরু করে এক এগারোর মত কঠিন সময়েও রাজপথে যিনি ভুমিকা রেখেছেন সেই মহিলা লীগ নেত্রীকে অবমুল্যায়নের অভিযোগ ওঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের বিরুদ্ধে। যে কারনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই নেত্রী অভিশাপ দিয়ে লিখেছেন ‘আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। আল্লাহ করবো আপনাদের বিচার।’ এ ছাড়াও অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে উদ্দেশ্য করে আরেকটি পোস্টে লিখেছেন, ’আমার বাবা মা নাই, আমার দুঃখ শোনারও কেউ নাই। আল্লাহ আপনি আমার সহায় হোন। ১৯৯৮ সাল থেকে কোর্টে একসাথে আছি। আমি সেই থেকে সম্মানিত সভাপতি সাহেবকে যত হাজার বার বাবা-বাবা করেছি, যদি এত হাজার বার তবজি জবতাম তাহলে শয়ন আল্লাহ আমার ডাকে সাড়া দিতো। আল্লাহ আপনি হেদায়েত কইরেন।’
এদিকে জানাগেছে, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া প্রকাশ করেছে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ। খসড়ায় অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে সভাপতি, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে কমিটির খসড়া প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অবমুল্যায়নের শিকার হয়েছেন সোনারগাঁও উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি ও জেলা মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূর জাহান। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার থেকে এক এগারোর মত কঠিন সময়েও আওয়ামীলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক নির্যাতন ও ত্যাগ শিকার করলেও নূর জাহানের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ।
একইভাবে এর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে তার নিজ সোনারগাঁয়ের ভোটগুলোও নূর জাহানকে দেয়া হয়নি। শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন নুর জাহান। কিন্তু ওই সময় আওয়ামীলীগের কিছু লোকজনের ষড়যন্ত্রের ফলেই জয়ী হতে পারেননি। সর্বপরী এবার উপজেলা আওয়ামীলীগে যখন উড়ে এসে জুড়ে বসাদের কদর বেশি তখন নূর জাহান ত্যাগের বিনিময়ে হলেন বঞ্চিত ও অবমুল্যায়িত। যাদের হাতে নেতৃত্ব তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ না জানালেও নূর জাহান তার ফেসবুকে লিখেছেন ‘আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। আল্লাহ করবো আপনাদের বিচার।’ তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদনের ক্ষেত্রে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের সুবিচার ও বিবেচনায় আসলে হয়তো নুর জাহান তার প্রাপ্য পেতে পারেন।
ওই প্রস্তাবিত কমিটিতে প্রথমে ঢাকায় রাজনীতি করা নাসরিন সুলতানা ঝরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাখা হয়। কঠোর সমালোচনার পর তাকে সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়। আওয়ামীলীগ আমলে উত্থান মাহামুদা আক্তার ফেন্সির। সার্বক্ষনিক ফেন্সির ওঠাবসা জাতীয় পার্টির সঙ্গে। বেশ সখ্যতা জাতীয় পার্টির সাথে। অথচ তাকেও সদস্য পদে রাখা হলো আবার নূর জাহানের কয়েক যুগের রাজনীতির বিনিময়ে তাকেও সদস্য পদে রাখা হলো। কোহিনুর ইসলাম রুমা তো আরো এগিয়ে। রাজনীতিতে সরব না থেকেও ভাগিয়ে নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের পদটি। নূর জাহান চেয়েছিলেন সহ-সভাপতি পদটি। উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি হিসেবে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদটি তার এমনিতেই প্রাপ্য, সেটাও পাননি তিনি।
এসব কারনে অ্যাডভোকেট নূর জাহান ফেসবুকে আরো লিখেছেন, আমি একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। সংসারের বড় মেয়ে। প্রাইমারি শেষ করে হাই স্কুলে পা দিতেই পরিবারের সিদ্ধান্তে এক সরকারী চাকুরীজীবির সাথে বিয়ে হয়ে যায়। অতিকষ্টে পড়াশোনা চালিয়ে যাই। তৎকালীন সময়ে গ্রামীণ ব্যাংঙ্কের ষোল সিদ্ধান্ত শিখাইতাম নারীদেরকে। সেই থেকে লিডারশিপ মনোভাব বুঝি। যখন কলেজে পা রাখি রাজনীতিতে ঝুকে পড়ি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালবাসি, লালন করি, বিশ্বাস করি। ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসাবে কাজ করি। সন্তানাদি লালন পালন, পড়াশোনা, রাজনীতি সমান তালে চালিয়ে যাই। পড়াশোনা শেষ করে আইনজীবী হিসাবে কোর্টে জয়েন করি। ২০০১সালের জামায়াত, বিএনপি বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে ছোট ছোট বাচ্চা দুটি কত বেলা যে না খাইয়া রইছে তার হিসাব নাই। তখন সোনারগাঁয়ে আমি কোন মহিলা পাইনাই, আজকে কমিটিতে নাম দেবার বেলায় সবার সম্পাদকীয় পদ আমার বেলায় নাই। আমি আমার সম্মানিত সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের নিকট অনুরোধ করেছিলাম যে, আমার বয়স হয়ে গেছে, আমাকে সহ-সভাপতি দিয়েন, আমাকে অসম্মান কইরেন না, আমার পড়ে যে মহিলারা আসছে তাদের নিচে আমাকে রাইখেন না। উনাদের উত্তর আমি মহিলালীগে আছি। তাহলে আমার প্রশ্ন যুবলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক কিভাবে যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পায়? আমার অপরাধ কি? আমি নৌকা ছাড়া কোথায়ও যেতে পারি নাই, তাল মিলাতে পারি নাই, যে নারী অন্য দলের কাছে গিয়া আপনাদের বদনাম করে সুবিধা নিয়ে ধনী হয়েছে। তাকে আপনারা বড় পদে দেন। আমার মামা চাচা নাই, আমার খুটার জোর নাই। আমি হায়নার মত চলতে পারি না, এটাই আমার বড় অপরাধ? আমার বাবা মা নাই, আমার দুঃখ শোনারও কেউ নাই। আল্লাহ আপনি আমার সহায় হোন। ১৯৯৮ সাল থেকে কোর্টে এক সাথে আছি। আমি সেই থেকে সম্মানিত সভাপতি সাহেবকে যত হাজার বার বাবা, বাবা করেছি, যদি এত হাজার বার তবজি জবতাম তাহলে শয়ন আল্লাহ আমার ডাকে সাড়া দিত। আল্লাহ আপনি হেদায়েত কইরেন।