সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
ভোটাভুটি হলে যখন পরাজয় নিশ্চিত তখন বিনা ভোটে গোলাম ফারুক খোকনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে বসানোর চেষ্টা অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। এ পদে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী মাসুকুল ইসলাম রাজীবকে ভোটাভুটি ছাড়াই পরাজিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে জেলা বিএনপির একটি অংশ। সোনারগাঁয়ের ভোটগুলো খোকনের বাক্সে নেয়ার জন্য আজহারুল ইসলাম মান্নানকে কখনো ম্যানেজ আবার কখনো চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চলছে। এবার মান্নানকে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে বসানোর টোপ দিয়েছে একটি পক্ষ। ভোট হলে কর্মীরা যখন রাজীবকেই ভোট দিবে, তখন কর্মীদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে যেনো সম্মেলনের দিন সাদা কাগজে স্বাক্ষর দেখিয়ে খোকনের পক্ষে সমর্থনের ঘোষণা দিয়ে খোকনকে বিনা ভোটে নির্বাচিত ঘোষণা করা যায়।
আগামী ১৭ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট হওয়ার কথা ছিলো। তবে সভাপতি পদে একক প্রার্থী হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন।
সম্মেলন ঘোষণার শুরু থেকেই রাজীব ভোটাভুটি দাবি করে আসছেন। কিন্তু খোকনের পক্ষে জেলা বিএনপির একটি পক্ষ ভোটাভুটি ছাড়াই খোকনকে জয়ী করার চেষ্টা করছেন, যেখানে জেলা বিএনপির ১ হাজার ১০জন ভোটারদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজীব। ভোটাভুটি হলে মাসুকুল ইসলাম রাজীবই হবেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু রাজীবকে অপকৌশলে পরাজিত করে খোকনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করতে একটি পক্ষ নীল নকশা তৈরি করেছেন।
সম্মেলন ঘোষণার শুরু থেকেই খোকনকে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত করতে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র ও অপরাজনীতি চলে আসছে। সম্মেলন থেকে রাজীবকে সরাতে খোকন অনুগামীদের পৃষ্ঠপোষকতায় চলা মিডিয়াগুলোতে রাজীবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়। রাজীবকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের জোরালো প্রতিবাদে সেই চেষ্টা বৃথা যায়।
তারপর থেকে বিভিন্ন থানা/উপজেলার ভোটগুলো খোকনের বাক্সে ফেলতে ওইসব থানা/উপজেলার শীর্ষ নেতাদের চাপে ফেলার ষড়যন্ত্র শুরু হয় এবং নানা ধরণের চাপ প্রয়োগ করা হয় যা অব্যাহত রয়েছে। কোনো কোনো শীর্ষ নেতাকে টোপের মুখে ফেলার চেষ্টা করা হয়। যার মধ্যে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানকে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি বানানোর টোপ দেয়া হয়েছে, যাতে করে সোনারগাঁয়ের মান্নান অনুগামীদের ভোটগুলো খোকনের বাক্সে পড়ে। এর আগে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফরকে দিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা করিয়ে মান্নানকে চাপে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়।
সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনকে চাপে ফেলে খোকনের মনোনয়নে প্রস্তাবক বানানো হয়েছে। ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পূর্বে সোনারগাঁও পিরোজপুর ইউনিয়নের একটি অনুষ্ঠানে যান গিয়াসউদ্দীন। তার কয়েকদিন পর একই এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে মোশারফ হোসেন ঘোষণা দেন, সোনারগাঁয়ে গিয়াসউদ্দীনের কোনো খবরধারী চলবে না।’ কিন্তু শেষতক গিয়াস কমিটির সভাপতি হয়ে যাওয়ায় গিয়াসকে খুশি করতেই খোকনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন মোশারফ।
এদিকে ১৪ জুন বুধবার আবু জাফর, মান্নান ও মোশারফ হোসেনের উপস্থিতিতে সোনারগাঁও উপজেলা ও পৌর বিএনপির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অধিকাংশ নেতাকর্মীরা দাবি তুলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে তারা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে চান। কিন্তু উপস্থিত নেতাকর্মীদের সকলের সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়। একইদিন বিকেলে ঢাকায় রূপগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া ও গোলাম ফারুক খোকন।
একইভাবে খোকনের পক্ষে সমর্থন ও ভোট আদায়ের চাপ প্রয়োগ করেন দিপু ভুঁইয়া। প্রকাশ্যে এই প্রক্রিয়া ফতুল্লা থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি করেনি। তবে ফতুল্লা থানা বিএনপির তরিগড়ি সম্মেলন ও ভোটার বানানোর কাজটি বেশ রহস্যজনক। গোপন সূত্রে জানাগেছে, প্রতিটি ইউনিটের ভোটারদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। সেইসব কাগজ সম্মেলনের দিন দেখিয়ে দাবি তোলা হবে সকল নেতাকর্মীরা খোকনের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। অথচ চাপ প্রয়োগ করে জোর করে স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। যদিও সোনারগাঁয়ে স্বাক্ষর নেয়ার বিষয়টি খোকনের পক্ষে সমর্থনের কোনো বিষয় নয় বলে দাবি করেছেন সোনারগাঁয়ের নেতারা। তারা ভোটাভুটির পক্ষে মত দিয়েছেন।
এদিকে নেতাকর্মীদের দাবি- তারা ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করতে চান। ভোট প্রয়োগ ছাড়া কোনো ধরণের মেকানিজমের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক পদে কাউকে দেখতে চান না। সরাসরি ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচিত করতে চান। সম্মেলনের দিন ভোট ছাড়া চাপিয়ে দেয়া কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিবে না নেতাকর্মীরা। একই দাবি করেছেন প্রার্থী মাসুকুল ইসলাম রাজীব। তিনি সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমি ভোটাভুটি চাই। আমি আশাবাদী নেতাকর্মীরা আমাকে ভালোবাসে এবং আমাকেই ভোট দিবে। ভোটের বাহিরে আমার কোনো চাওয়া নাই।