দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন। তবে আওয়ামীলীগ নেতারা আশা দেখছেন এ আসনে ৯ ডিসেম্বরের আগে নৌকার প্রার্থী কায়সার হাসনাতকে ঘোষণা করা হোক। তবে নির্বাচন কমিশন বলছেন মনোনয়ন দাখিলের পর প্রতীক জমা দেয়ার সুযোগ নেই কোন প্রার্থীদের। এক্ষেত্রে কায়সার হাসনাতকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তাকে ভিন্ন প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে।
কিন্তু নেতাকর্মীরা প্রাণের দাবি নিয়ে বলছেন, এ আসনে এখনো নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করেনি আওয়ামীলীগ। চূড়ান্ত হয়নি মহাজোটের প্রার্থীও। নৌকার প্রার্থী না দেয়ার কারনে নেতাকর্মীরা ধরে নিয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে থাকছেন জাতীয়পার্টি থেকে মনোনিত বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাই। কিন্তু হাল ছাড়ছেন না আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। এখনো তিনি দাবি করছেন সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের প্রাণের দাবি এখানে নৌকার প্রার্থী দেয়া হোক। সেটা কায়সার হাসনাত গত বুধবার মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার সময় হাজার হাজার নেতাকর্মীদের নৌকার দাবির শ্লোগানে আর্তনাতই প্রমান করেছেন।
নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, এখানে নৌকার দাবিতে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশি থাকলেও অনেক আগেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন ওইসব মনোনয়ন শিকারি নেতারা। অনেকেই মনোনয়ন দাবি করেছিলেন যাদের মধ্যে গণভবনের সামনে যাওয়ার মত পজিশন নেই অনেকের। এখন সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগ বাঁচাতে নৌকার জন্য একাই লড়াই করছেন কায়সার হাসনাত। বাকিরা উধাও।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ ওইসব আনাড়ি মনোনয়ন প্রত্যাশিদের নৌকার দাবিতে মনোনয়ন জমা দেয়ার কারনেই এখানে নৌকার প্রার্থী নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও জামানত হারাবেন তারাও মনোনয়ন কিনেছেন। যে কারনে নেত্রীর কাছে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ আরও হালকা হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে কায়সার হাসনাত কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। গণহারে নৌকার দাবিতে মনোনয়ন কেনার হরিলুটের কারনেই এখানে নৌকার প্রার্থী দেয়নি আওয়ামীলীগ। মনোনয়ন প্রত্যাশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, যেখানে অস্বাভাবিক মনোনয়ন প্রত্যাশি মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছে সেখানে বুঝতে হবে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে পারেননি।
মনোনয়ন জমার দিন কায়সার হাসনাত বলেছিলেন, সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের এই যে হাজার হাজার নেতাকর্মী দেখছেন নৌকার দাবিতে জড়ো হয়েছেন। তাদেরকে গেল পাঁচটি বছর একটি আশা একটি স্বপ্ন দেখিয়ে রেখেছিলাম। এখন তাদের অস্তিত্ব, ভালোবাসা ও তাদের স্বপ্নের ঠিকানা আওয়ামীলীগকে সোনারগাঁয়ে বাঁচিয়ে রাখতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে আমাকে বাধ্য করেছে নেতাকর্মীরা।
তবে এর আগে কায়সার হাসনাত বলেছেন, আমি এমপি হতে আসিনি। আমি সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে আসছি। কেন্দ্র থেকে আমাকে বলা হয়েছে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে। এখনও এখানে মহাজোটের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
নেতাকর্মীরা মনে করছেন, আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়াটা দলের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের বিশাল জনগোষ্ঠির সমর্থন ও কর্মীদের দলের ভিতর ধরে রাখতেই বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। রবিবার তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং অফিসার রাব্বী মিয়া।
এ আসনে লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুুহাম্মদ এরশাদের পালিত মেয়ে ও কেন্দ্রীয় মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হুসেইন মৌসুমী। তিনিও স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তার মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টিকে এ আসনটি ছেড়ে দিলে মোশারফ হোসেন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। নৌকা প্রতীকে এখান থেকে ১০ জন নেতা মনোনয়ন চাইলেও এখনও নৌকার জন্য লড়ছেন কায়সার হাসনাত।
এদিকে রবিবার নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসন থেকে জাতীয়পার্টির বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা, বিএনপি মনোনিত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান, আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার, তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী মজিবুর রহমান মানিক, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আব্দুস সালাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সানাউল্লাহ নূরী, জেএসডির প্রার্থী ফখরুদ্দীন ইব্রাহীম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ হোসেন জামাল, জাকের পার্টির প্রার্থী মোস্তফা আমির ফয়সাল ও কল্যান পার্টির প্রার্থী রাশেদ ফেরদৌসের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।
এখানে ১৫ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। যার মধ্যে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা মোশারফ হোসেন, জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের পালিত মেয়ে অনন্যা হুসেইন মৌসুমী, আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম, বিএনএফ প্রার্থী শাহাব উদ্দীন হোসেন ভুইয়া ও গণফোরামের প্রার্থী সিরাজুল হকের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়। তবে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন সোনারগাও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। তিনি মনোনয়ন পত্র দাখিল করেননি। ফলে এখানে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান।