নারায়ণগঞ্জে ১২জন শীর্ষ আইনজীবী নেতার আইনি লড়াই: জয়নালের রিমাণ্ড না মঞ্জুর

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

২৯ এপ্রিল সোমবার নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার জয়নাল আবেদীন ওরফে আল জয়নালের পক্ষে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ১২ জন শীর্ষ আইনজীবী নেতার লড়াইয়ের বিষয়টি। তবে জয়নালের পক্ষে তাদের আইনি লড়াইয়ে তারা সফলও হয়েছেন। তাদের আবেদনে আদালত এসব আইনজীবীদের জোড়ালো দাবিতে পুলিশের চাওয়া রিমাণ্ড না মঞ্জুর করেছেন। আগের দিন ২৮এপ্রিল রবিবারও এসব আইনজীবীরা জয়নালের পক্ষে শুনানিতে অংশগ্রহণ করে শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য্যের আবেদন করেন। আদালত ওই দিন সোমবার পূণরায় রিমাণ্ড শুনানির দিন ধার্য্য করেন।

জানাগেছে, সোমবার নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্তের আদালতে চাঁদাবাজি মামলায় পুুলিশের চাওয়া রিমাণ্ডের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত আসামির রিমাণ্ড না মঞ্জুর করে জয়নালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিষয়টি জানিয়েছেন জয়নালের আইনজীবীরা।

আরও জানাগেছে, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন ওরফে আল জয়নাল একটি চাঁদাবাজি মামলায় কারাগারে রয়েছেন। ২৮ এপ্রিল রবিবার ওই মামলায় পুলিশের চাওয়া রিমান্ড শুনানিতে জয়নালের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন অর্ধশত আইনজীবী, যাদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ১২ জন শীর্ষ আইনজীবী নেতাও জয়নালের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন। এসব আইনজীবীদের অনেকেই আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি, ন্যাপের রাজনীতিতে জড়িত। এদের মধ্যে আবার আইনজীবী সমিতির সাবেক ৪ জন সভাপতিও লড়েছেন এই রিমাণ্ড শুনানিতে। তবে ওইদিন আদালত রিমাণ্ড শুনানি ২৯ এপ্রিল সোমবার ধার্য্য করেছেন।

আদালত সূত্রে জানাগেছে, রবিবার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবির এর আদালতে চাঁদাবাজি মামলায় জয়নালের উপস্থিতিতে রিমাণ্ড শুনানি হয়। আসামী পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড আবেদন বাতিললের আবেদন করেন এবং রিমাণ্ড শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য্য দাবি করেন। আদালত পুণরায় সোমবার শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করেন।

জয়নালের পক্ষে মামলায় ফাইলিং আইনজীবী হিসেবে লড়ছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক ৪ বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু।

অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু ছাড়াও আইনি লড়াইয়ে জয়নালে পক্ষে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূইয়া, অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, অ্যাডভোকেট হাবিব আল মুজাহিদ পলু, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লা, অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খন্দকার, অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান ও অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন সহ অর্ধশত আইনজীবী।

এদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি। আব্দুল বারী ভুইয়া বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত এবং তিনিও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি। আব্দুর রশিদ ভূঁইয়াও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আড়াইহাজার আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি। জাকির হোসেন মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিরিত সাবেক সেক্রেটারি। আসাদুজ্জামান আসাদ আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এবং জেলা আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)।

এছাড়াও সরকার হুমায়ুন কবির মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি। তিনিও আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি। হাবিব আল মুজাহিদ পলু আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারি ও বন্দর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। খোরশেদ আলম মোল্লা জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও আড়াইহাজার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। সেই সঙ্গে তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সেক্রেটারিও। আবদুল মজিদ খন্দকার জেলা জাতীয়পার্টির সদস্য সচিব। তিনিও আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কামরুল আহসান সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক এবং আওলাদ হোসেন জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক।

তবে আইনজীবীরা বলছেন, আইনজীবীরা যে যার যার মতাদর্শে রাজনীতি করতেই পারেন। তবে আইনজীবী হিসেবে তিনি একজন বিচারপ্রার্থীর কেবলমাত্র একজন আইনজীবী আর কিছু নয়। সেই হিসেবে যে কোন বিচারপ্রার্থীর পক্ষে যে কোন আইনজীবী আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন।

জানাগেছে, গত ২৪ এপ্রিল বুধবার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি মামলায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আল জয়নালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্বর্ণ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক বাদী হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সদর মডেল থানায় জমি সংক্রান্ত ঘটনায় ২০ লাখ টাকা চাঁদাদাবী মামলা করেন।

সদর মডেল থানা পুলিশ ওই মামলার সূত্র ধরে বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১২ টার দিকে নগরীর এসএম মালেহ রোডে জয়নালের নিজ বাড়ির সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

এরপর ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন আহমেদের আদালতে আল জয়নালের জামিন ও রিমান্ড শুনানির আবেদন করা হয়। পরে আদালত ২৮ এপ্রিল রবিবার জামিন ও রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য্য করে আল জয়নালকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।