দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের বর্তমান মহাজোটের এমপি সেলিম ওসমানকে আবারো এমপি হিসেবে দেখতে চান নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত হাসেম শকু।
সোমবার ৩ নভেম্বর বিকেলে চাষাঢ়া হীরা মহলে এক সভায় তিনি উপস্থিত হয়ে সেলিম ওসমানকে আবারো এমপি নির্বাচিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। একই অনুষ্ঠানে বিএনপির শহর কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি জমসের আলী ঝন্টুও সেলিম ওসমানকে নির্বাচিত করার ঘোষণা দেন। তারা দুজনই সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর।
এর আগের দিন বন্দরের কাউন্সিলরদের নিয়ে সেলিম ওসমানের অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সভায় উপস্থিত হয়ে সেলিম ওসমানকে আবারো এমপি নির্বাচিত করার ঘোষণা দের মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক হান্নান সরকার, বিএনপির কাউন্সিলর সুলতান আহমেদ, কাউন্সিলর গোলাম নবী মুরাদ, কাউন্সিরর এনায়েত হোসেন, কাউন্সিলর সামসুজ্জামান। তারা বিএনপির সমর্থনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। গত ২৬ জুন সেলিম ওসমাকে সংবর্ধধনা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির জনকের ছবি সম্বলিত ব্যানারে মিছিল করে জনসভায় যোগদান করেছিলেন।
এদিকে সোমবার সেলিম ওসমানের সভায় মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু বলেছেন, দল যার যার সেলিম ওসমান সবার। আমি বিএনপি একটি দলের রাজনীতি করি। ওই দলের মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক। তারপরেও আমি উনার জন্য এসেছি। সর্ব প্রথম ২০০৩ সালে উনার কাছে গিয়েছিলাম। উনি আমাকে প্রশ্ন করে ছিলেন তুই ভাল হবি কিনা? আমি বলেছিলাম ভাল হয়ে যাবো। এরপর আমাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। টানা ৩বার এই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। আমার ওয়ার্ডে তিনি নিজ তহবিল থেকে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার উন্নয়ন করেছেন। যেখানে সুপেয় বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, রাস্তায় এলইডি লাইট, ওয়াইফাই জোনে, এলাকার নিরাপত্তায় সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন, ৪টি মসজিদের উন্নয়নে অর্থায়ন করেছেন। যাকে দিয়ে এলাকার উন্নয়ন হবে তাকেই আগামী নির্বাচনে বিজয়ী করতে না পারলে ক্ষতি আমাদেরই হবে।
এর আগে সেলিম ওসমান বলেন, যেদিন থেকে ফজর নামাজের সময় জুম্মা নামাজের মত মসজিদ পরিপূর্ণ হবে সেদিন থেকে নারায়ণগঞ্জে কোন অশান্তি থাকবে না। নারায়ণগঞ্জ হবে শান্তিময় শহর। আর এ শহরের উন্নয়ন হবে সব থেকে বেশি।
তিনি আরো বলেন, বন্দর থানায় সিটি কপোরেশনের সকল কাউন্সিলদের সাথে মত বিনিময় করেছি। আজকে শহরে কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কবির হোসেন এসেছে। মাত্র ২জন কাউন্সিলর আসেননি। যার মধ্যে একজন মনোনয়ন জমা দিয়ে ছিলেন কিন্তু বাতিল হয়েছে। আরেকজন হচ্ছেন কাউন্সিলর অসিত বরুন বিশ্বাস। আশা করি ভবিষ্যতে উনারা দুজনেও আসবেন। প্রত্যেক জন কাউন্সিলের মাথায় নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা আছে। সবার সাথে পৃথক ভাবে আলোচনা করে সবার পরিকল্পনা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের স্বার্থে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে যাবো দেখবো উনি কিভাবে কাজ না করে পারে।
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর তাদের পরিবারের দু:সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে সেলিম ওসমান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমাদের পরিবারকে নি:স্ব করে দেওয়া হয়। বাবা জেলে, বড় ভাই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে ঘর ছাড়া। আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হয়। মাত্র ৩৭ হাজার টাকার জন্য আমাদের পৈত্রিক বাড়ি হীরা মহল নিলামে তোলা হয়। বাড়িটি মুক্ত করতে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসেন শফি হোসেন খাঁন, এরপর আসেন আমার আলী আহম্মদ চুনকা চাচা। উনি ইচ্ছে করলে একাই ওই টাকাটা দিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু উনি বলেছেন নারায়ণগঞ্জের সবাই মিলে আমরা এটা শোধ করবো। দেওভোগ এলাকার আমিনুল চাচা রাতের অন্ধকারে আমাদের বাসার সামনে চালের বস্তা ফেল যেত। যেটি তখন আমাদের খুবই উপকারে এসেছে। এমন কষ্টের সময় আমাদের পরিবারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু অতীতে কষ্ট নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। অতীতের কষ্ট দূরে ঠেলে নতুন দিনে সম্ভাবনায় সকলে মিলে কাজ করে যেতে হবে।
সভায় জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবির হোসেন, ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু, ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জমশের আলী ঝন্টু উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে একই স্থানে সন্ধ্যা ৭টায় নারায়ণগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন এমপি সেলিম ওসমান। সভায় হিন্দু নেতৃবৃন্দরা আগামী নির্বাচনে সেলিম ওসমানকে বিজয়ী করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে বলেন। নৌকা লাঙ্গল বুঝিনা আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে প্রার্থী দিবেন আমরা সবাই তাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবো।