সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
আগামী নির্বাচনে জনগণ কোন ভুল করবে না। এদেশের মানুষ আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগকেই নির্বাচিত করবে। নৌকা মার্কাকেই জয়ী করবে। কেননা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নাই। শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন আয়োজনে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। উক্ত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমান।
এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, যারা হত্যা, সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াওয়ের রাজনীতি করেন তাদের কেউ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা বারা বার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করতে চেয়েছে। এসময় মঞ্চে শামীম ওসমানকে দেখিয়ে বলেন, তারা তাকেও মারতে বোমা হামলা করেছিলেন। অনেকগুলো মানুষ সেদিন মারা গিয়েছিলো। এদেশের মানুষ সেই বীভৎসতা গুলো ভুলে যায় নাই। আমি নারায়ণগঞ্জের বোমা হামলার বিষয়টি নিজে খোঁজ নিয়ে তার বিচারের বিষয়টি তদারকি করবো। শামীম ওসমানের বাবা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের সুতিকাগার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিরা ভেবেছিলো তারা পাড় পেয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আমরা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ফিরে পেয়েছি। তার স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করে দেশকে কলঙ্ক মুক্ত করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে নতুন করে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। তিনি মানবতার অনন্য এক উদাহরণ। মায়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গা সরনার্থীদের তিনি এই দেশে আশ্রয় দিয়েছেন।
প্রাধান অতিথির বক্তব্যের পরে সমাবেশের সভাপতি হিসেবে সমাপনি বক্তব্য দেন শামীম ওসমান। শামীম ওসমান বলেন, পূর্বের মতো এখনো শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশিরা এই ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশকে সিরিয়া-আফগানস্থান বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার কারণে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আমরা যারা ৭৫ এর পরে রাজনীতিতে এসেছি তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের দাবীতে রাজনীতি শুরু করি। ২০০১ এর ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ অফিসে বোমা হামলা হয়। সেখানে আমাদের দলের অনেক লোক মারা যায়। মূল লক্ষ্য ছিলাম আমি। কিন্তু তখন আমি একটি কথাই বলেছিলাম, আমার নেত্রীকে বাঁচান। গত তিন ধরে শুনছি আবারো আমাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে। আমি এখনও বলবো, এই দেশকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে দরকার। কারণ তিনি আমাদের আগামী প্রজন্মকে এক সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য কাজ করছেন। শেখ হাসিনা নামটা হলো আগামীর উন্নত বাংলাদেশ।
শামীম ওসমান আরো বলেন, এই নারায়ণগঞ্জে অনেকেই আওয়ামীলীগ করেন। কিন্তু তারা আওয়ামীলীগের জনসভায় আসেন না। তারা মোশতাকের অনুসারী। তারা পেছন থেকে ছুড়ি মারতে চায়। আমি যারা আওয়ামীলীগ করি তারা বিএনপি-জামায়াতকে ভয় পাই না। তারা যদি দশ হাজারও আসে সেখানে আওয়ামীলীগের কয়েকজনই যথেষ্ট তাদের প্রতিহত করার জন্য। ভয় শুধু মোশতাকদের অনুসারীদের নিয়ে।
তিনি আরো বলেন, ২১ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাদের স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখুন, তিনিই আমাদের স্বপ্ন। অক্টোবর নাগাদ ওরা মানচিত্রে থাবা দেবে; ক্ষমতায় আসার জন্য নয়, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য ওরা এটা করবে।
নারায়ণগঞ্জে অনেকে আওয়ামী লীগ সাজতে চান। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে নামে না মন্তব্য করে শামীম ওসমান বলেন, মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমাদের বাসায় ফোন করেছিল। আমার মা সেদিন খুনি মোশতাককে বলেছিলেন, সে (শামীম ওসমানের বাবা) যদি আপনার মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়, প্রথমে চেষ্টা করব তাকে হত্যা করতে। নয়ত নিজে আত্মহত্যা করব। আমি সেটার সাক্ষী। মনসুর আলী যে রুমে ছিলেন, আমার বাবাও সেখানে ছিলেন। তাকে অজু পর্যন্ত করতে দেয়নি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দুই হাত উপরে তুলে কাঁদছিলেন। বলেছিলেন—আমার বাবা-মাকে যেখানে মেরেছে, সেখানে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে চাই। তারা সেখানে নফল নামাজ পড়তে দেয়নি। যারা আমাদের জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে, তাদের সাথে গণতন্ত্র চর্চা করতে পারব না। আমরা আমাদের বাংলাদেশকে বাঁচাতে চাই।
সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সোনারগাঁ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কায়সার হাসনাত, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি প্রকৌশলী মামুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।