সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
প্রায় ৬/৭ বছর পেরিয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হোসেনকে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার কাছাকাছি এলাকায় পৃথক দুুুটি দিনে হামলার ঘটনা এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবুর দায়েরকৃত জিডির বিষয়টির কোন কুলকিনারা হলো না।
এই ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা হামলা চালালো এবং কেনইবা জিডি করা হলো তার কোনো সূত্র বের করতে পারেনি বিএনপি। প্রশাসনের দ্বারস্থও হয়নি বিএনপি। ফলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির বেশকজন নেতাদের নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির দোষীদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। রহস্যাবৃত রয়ে গেলো ওই পৃথক ৪টি ঘটনা। এরি মধ্যে সম্প্রতি হাবিবুর রহমান হাবু আবারো যোগ দিয়ে আজাদ বলয়ে, যে ছবি ২৪ অক্টোবর ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে।
জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১২ জুলাই নগরীর মিশনপাড়া হোসিয়ারী মিলনায়তনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও সদস্যপদ নবায়ন অভিযান কর্মসূচিতে নজরুল ইসলাম আজাদ অনুগামী ও সাবেক এমপি আবুল কালাম অনুগামীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় আবুল কালাম ছিলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। কর্মসূচিতে তৎকালীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া ছিলেন প্রধান অতিথি। সেদিন আজাদ অনুগামীরা আজাদের নামে শ্লোগান দিতে দিনে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে গেলে টিপু শ্লোগান দিতে নিষেধ করেন এবং তারপরেও আজাদের নামে শ্লোগান দিতে থাকলে কালামের পুত্র আবুল কাউসার আশার নেতৃত্বে দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং এতে দশজন আহত হোন। যদিও এই ঘটনার কদিন পর ২০১৮ সালের ৯ জুন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল করতে গেলে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় আশা এবং অভিযোগ করা হয় আশাকে থানায় নিয়ে পুলিশ বেদম নির্যাতন চালিয়েছে। এর পেছনে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আজাদের হাত ছিলো বলেও অনেকেই ধারণা করেছিলেন নেতাকর্মীরা।
হোসিয়ারী মিলনায়তেন আজাদ অনুগামীদের মারধরের বিষয়ে আবুল কাউসার আশা তৎকালীন সময় গণমাধ্যম কর্মদের কাছে বলেছিলেন, ‘আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কারও বিরোধ হয়নি। তবে কয়েকদিন ধরে এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের হুমকিধামকি দিয়ে আসছিলেন বিএনপির কয়েক নেতা। তাই ছাত্রদলের ছেলেপেলেরা আজকে যারা বিশৃঙ্খলা করেছে, তাদের শক্ত হাতে প্রতিরোধ করেছে।’ তবে আজাদ অনুগামী রফিকুল বলেছিলেন, ‘আমি জেলা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে মিলনায়তনে প্রবেশের সময় আশা আমাকে পেছনে থেকে টেনে ধরেন। আমি এর প্রতিবাদ করলে আশাসহ তার লোকজন আমরা ওপর হামলা চালায়।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মিলনায়তনে প্রবেশ, ছবি তোলা এবং নেতাদের পক্ষে স্লোগান দেওয়ার প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে মিলনায়তনের বাইরে বহিরাগত নেতা-কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি ও সংষর্ঘ হয়েছে। তবে অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণ পরিবেশ শেষ হয়েছে। মিলনায়তনের ভেতরে কোনও কিছু হয়নি।’
একই ঘটনার রেশ ধরে একই বছর ১৯ জুলাই আবু আল ইউসুফ খান টিপুর উপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। সেদিন দুপুরে লি্ংক রোড এলাকায় বুড়ি দোকান সংলগ্ন স্থানে কয়েকজন দৃর্বত্তরা এই হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন টিপু।
টিপু সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বুড়াবুড়ির হোটেলে খাবার খেয়ে আদালত প্রাঙ্গনে ফিরার সময় অজ্ঞাত ৭/৮জন যুবক আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় আমার আত্ম চিৎকারে আমার সাথে থাকা আইনজীবী রফিক ও আশেপাশে থাকা লোক এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যান।
সেদিন তিনি আরো জানান, হামলাকারীদের কাউকে আমি চিনতে পারি নাই। তবে রাজনৈতিক কারনেই আমার উপর এই হামলা করা হয়েছে। আমি এই বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিবো।
এই ঘটনার পর ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার উল্টো দিকের বাস কাউন্টারের সামনে নজরুল ইসলাম আজাদের অনুসারী আড়াইহাজার উপজেলা যুবদলের তৎকালীন আহ্বায়ক, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহম্মেদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারী দূবৃত্তরা জুয়েলকে হাতুরী ও লোহার রড গিয়ে এলোপাথারিভাবে আঘাত করে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার কদিন পর আড়াইহাজার থানায় আজাদ ও তার কর্মী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে জিডি দায়ের করেন হাবিবুর রহমান হাবু। অভিযোগ করেন- জুয়েলের উপর হামলার ঘটনায় আজাদ ও রফিক তাকে প্রাণনামের হুমকি দিয়েছেন।