ডেস্ক রিপোর্ট, সান নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতপাড়া থেকে দুই আইনজীবীকে তাদের নিজ চেম্বার থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। ২৩ অক্টোবর সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ও আইনজীবী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমানকে আটক করে নিয়ে যায় জেলা পুলিশ। যদিও তুমুল সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার তাদেরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের চেম্বার এখন অনিরাপদ হয়ে পড়ায় আইনজীবীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। মুলত যারা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত কিংবা যারা সরকারবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন তাদের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে। যে আতংকের রেশ দেখা গেলো ২৫ অক্টোবর বুধবার। বুধবার আদালতপাড়ায় বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর সমর্থিত আইনজীবীদের উপস্থিতি দেখা গেছে অনেকাংশে কম।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ আইনজীবীরা গ্রেপ্তার আতংকে আদালতপাড়ায় আইন পেশা পরিচালনা করতেই আসেনি। সোমবার আদালতপাড়ার সম্মুখের দুটি গেটের সামনেই জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের স্টীকার লাগানো মাইক্রোবাস দাঁড়ানো দেখা গেলো সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। মুলত আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান চালায় পুলিশ। ওইসব নেতাকর্মীদের পক্ষে কোর্টে আইনী সেবা প্রদানের পাশাপাশি বিএনপির আইনজীবীরাও ২৮ অক্টোবর ঢাকার সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতির কারনে অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লা ও অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র আইনজীবীবৃন্দ’-এর ব্যানারে ২৫ অক্টোবর বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের ১নং হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বার কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বার কাউন্সিলের সদস্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বার কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত দুই আইনজীবী খোরশেদ আলম মোল্লা ও সিদ্দিকুর রহমানকে গত ২৩ তারিখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যায়। সারা রাত তাদের ডিবি হেফাজতে রেখে পরদিন অর্থাৎ ২৪ তারিখ দুপুরে আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা চলমান নেই। তাদের এভাবে নিজ পেশাগত চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এই ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। আইনজীবীরা পেশা পরিচালনায় আতঙ্ক বোধ করছেন। আমরা প্রথমেই এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে স্বাধীনভাবে পেশা পরিচালনার স্বার্থে আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আইনজীবীরা স্বাধীন পেশা পরিচালনার মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সাহায্য করেন। চেম্বার শুধু একজন আইনজীবীরই নয়, বিচারপ্রার্থীর জন্যও নিরাপদ স্থান। সেই নিরাপদ স্থান থেকে কোনোরূপ অভিযোগ ছাড়া দু’জন আইনজীবীকে আটক করার ঘটনা আমাদের দেশে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের যেভাবে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় হয়রানি করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়, তারই পুনারাবৃত্তি বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।
‘বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান হিসাবে আমরা প্রত্যাশা করব, প্রধান বিচারপতি এই ঘটনা সম্পর্কে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যাতে আইন পেশার সুমহান মর্যাদা সমুন্নত থাকে।