সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত ৭ জানুয়ারী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপির সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল নেতা সম্রাট হাসান সুজনের কঠোর ভুমিকা ছিলো চোখে পড়ার মতই। নেতাকর্মীরা যখন আত্মগোপনে তখন রাজপথে হরতাল অবরোধ করে বেশ আলোচনায় ছিলেন সুজন। রাজপথে তার হাতে গুলাইল নিয়ে পুলিশের সঙ্গে পাল্টা হামলার ছবিটিও বেশ আলোচিত হয়। কিন্তু পুলিশের কঠোর ভুমিকায় সরকারি দলের লোকজনের সহায়তায় গ্রেপ্তার হয়ে যান তিনি। গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ তিন মাস কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি পান বন্দর উপজেলা যুবদলের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা যুবদলের সভাপতি প্রার্থী সম্রাট হাসান সুজন। সেই বিভৎস ও কঠোর আন্দোলনে তার ত্যাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে।
তিনি তার ফেসবুকে পোস্টে সকলের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, মীর জাফরের মতো যারা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো, নবাবের পরাজয়ের দৃশ্য দেখতে সহযোগিতা করেছিলো, তারা সময়ের আবর্তে হয়তো আবারও মীর জাফরের নতুন বেশে আবির্ভূত হবে। কিন্তু আমি ভুলে যাইনা।মীর মদনের মতো শেষ পর্যন্ত যারা লড়াইটা জারি রেখেছে, ইতিহাস হয়তো তাদের খুব মনে রাখবেনা, ভালোবাসা, সম্মান, স্নেহ যেমন তীব্রভাবে অনুভব করতে পারেন, তেমনি ঘৃনা উপেক্ষাও ভীষন তীব্র আমার। আমরা লড়াই করেছিলাম, আমরা সুযোগ পেলে অনুগত বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে আবার লড়াইয়েই শামিল হবো। মনে রাখার অধিকার নিশ্চয়ই সবার আছে, সব ভুলে গেলে হয় বলেন।
‘২৮ অক্টোবর ২০২৩ থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাকে আপনার পাশে রাজপথে, অন্যান্য লড়াইয়ে পেয়েছিলেন? আপনার উত্তর যদি হয় ‘হ্যাঁ’, তাহলে আপনি আমার সহযোদ্ধা, আমার ভাই, আপনার উত্তর যদি হয় ‘না’, তাহলে আপনি অবশ্যই অনেক বড় মাপের নেতা।’
তিনি আরো লিখেন, ‘আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত বাড়িতে আসতে পারিনি, পরিবারের কারো সাথে দেখা সাক্ষাত করতে পারিনি, প্রোগ্রাম শেষ করে পরিবারকে একবার দেখার জন্য নিজের জন্মস্থানে পা দিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ গুন্ডাবাহিনী আমার উপর কি বর্বর হামলা করে শারীরিক নির্যাতন করে র্যাবের হাতে তুলে দেয়, সেটা নিজ চোখে না দেখলে ধারণা করা যাবে না আমি কতটা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। অঝোরে রক্ত ঝরেছিলো, এ অবস্থায় র্যাব আমাকে খানপুর ৩’শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসা চলা অবস্থায় র্যাবের কাছ থেকে সদর থানা পুলিশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে গিয়ে থানার গারদের জানালার গ্রিলের সাথে ঝুলিয়ে বেদম নির্যাতন করে।
তিনি লিখেন, আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী নেতা এবং সহযোদ্ধাদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজে পুলিশের নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতো। কিন্তু সেটা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি, কারণ দলকে আমি এতটাই ভালবাসি সেটা আমার কার্যক্রম এবং দলের প্রতি আনুগত্যের প্রকাশে দেখেছেন।
‘উপজেলা থেকে শহরে যখন হুট করে এসে চারপাশ নিস্তব্ধ করে দিয়ে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছি, আপনার কেন্দ্রের জবাব দেওয়ার মতো এমন অনেক সাফল্য দেখিয়েছি। আমিও আপনার কয়েকটি প্রোগ্রামে আপনার পাশেই ছিলাম এটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার ছিল। আমরা এমন একজন ঈমানদার সেনাপতির নেতৃত্বে লড়াইয়ে মাঠে ছিলাম, আমার কাছে শুধু লড়াইটাই মূখ্য ছিল। কিন্তু দিন শেষে যখন কমিটি দেন, যখন নিজের ভাই নিজের বন্ধু অথবা অন্য কোন স্বার্থের কারণে আমাদের মত দল প্রিয় সক্রিয় কর্মীদের আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে যারা জীবনবাজি রেখে বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিতে বিন্দুমাত্র ভয় করেনা, তাদেরকে যখন হতাশার গ্লানিতে নিমজ্জিত হতে হয়? একটি মাত্র সম্মানের জন্য একটি মাত্র পদের জন্য বারবার আপনাদের দ্বারস্থ হতে হয়, তখন মনে হয় এই জীবন পুরোটাই ব্যর্থ! মনে হয়, যে যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেছি, সেটা দলের জন্য না? গণতন্ত্রের জন্য না? দেশের জন্য না? জাতির জন্য না? স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য না? কারো নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে জন্য?