সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ২১ মে। নির্বাচনকে সামনে রেখে রীতিমত সরকারি দল আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মাঝে মহাযুদ্ধ শুরু হয়েছে। পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনৈতিক শিষ্টাচারও হারিয়ে ফেলছেন আওয়ামীলীগ নেতারা। অকথ্য অশ্রাভ্য ভাষায় গালিগালাজ, কুলাঙ্গার, মীরজাফর, বেঈমান, রাজাকার, রাজাকারের ছেলে- এরকম নানা অশ্রাব্য অকথ্য ভাষায় একে অপরকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা চলছে। সিনিয়র জুনিয়র কেউ কাউকে সমীহ করছেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পেছনে নিজেদের ক্ষোভ কিংবা ভিন্ন উদ্দেশ্য হাসিলে একজন আরেকজনকে ছোট করে বক্তৃতা দেয়া হচ্ছে এখানে।
একই সঙ্গে থানায় জিডি অভিযোগ ও এলাকায় পাল্টাপাল্টি মানববন্ধনও করা হয়েছে। চরম এক উত্তেজনার মাঝে চলছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। এ যেনো নির্বাচন নয়, মহাযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এরি মাঝে বিএনপি ভোট বর্জনের দাবিতে লিফলেট বিতরণে মাঠে নেমেছেন। কয়েকদিন পূর্বে জাতীয় পার্টিও একজন প্রার্থীকে সমর্থন ঘোষণা করেছে। স্থানীয় এমপি সরাসরি কারো পক্ষে ঘোষণা না দিলেও তার অবস্থান একজন প্রার্থীর পক্ষে পরিষ্কার। এমন পরিস্থিতিতে দূর্বল দুই প্রার্থী নির্বাচন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে না দাঁড়ালেও তারা যেনো হারিয়ে গেছেন ভোটের মাঠ থেকে। ফলে এখানকার নির্বাচন হচ্ছে আনারস প্রতীক বনাম ঘোড়া।
স্থানীয়রা জানান, সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকে বাবুল ওমর বাবু, ঘোড়া প্রতীকে মাহফুজুর রহমান কালাম, মটর সাইকেল প্রতীকে রফিকুল ইসলাম নান্নু ও দোয়াত কলম প্রতীকে আলী হায়দার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন। তবে স্থানীয় এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত সরাসরি কাউকে সমর্থণ ঘোষণা না করলেও তার অনুগত বেশকজন নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানরা বাবুল ওমর বাবুর পক্ষে সমর্থনের বিষয়টি দাবি করেন। সেমতে তারা আনারসের পক্ষে কাজ করছেন বলেও দাবি করেন। এরি মাঝে এই আসনের দুইবারের সাবেক এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাও তার নেতাকর্মীদের নিয়ে রয়েল রিসোর্টে বৈঠক করে বাবুল ওমর বাবুকে সমর্থন ঘোষণা করেন।
এই সমর্থন ঘোষণার পর রফিকুল ইসলাম নান্নু ও আলী হায়দার ভোটের আগেই ভোটের মাঠ থেকে ছিটকে পড়েছেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা এখনো নির্বাচনে রয়েছেন। কিন্তু পুরো সোনারগাঁ জুড়ে কালাম ও বাবুর নির্বাচনী আলোচনাই বেশি। স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। নির্বাচনী কাজ করতে গিয়ে দুই গ্রুপের মাঝে রীতমত যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যেখানে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমানের এক বক্তব্যের জের করে উপজেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি সাগর থানায় জিডি করেছেন। দাবি করা হয় গাজী মজিবুর রহমান এমপিকে কটুক্তি করেছেন। একইভাবে উপজেলা প্রেস ক্লাবের সামনে গাজীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে নানা ধরণের কটাক্ষ করে গাজীকে নিয়ে বক্তব্য দেয়া হয়। গাজী মজিবুর রহমানও পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন্
অন্যদিকে বাবুল ওমর বাবুর একটি বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। যেখানে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরুকে নিয়ে অশ্রাব্য অকথ্য ভাষায় নোংরা গালিগালাজ করতে দেখা যায় বাবুকে। বাবুর নির্বাচনী উঠান বৈঠকে এমন নোংরা গালিগালাজ মেনে নিতে পারছেনা স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা আবার বাবুর বিরুদ্ধে সাদিপুর রোডে তালতলা এলাকায় মানববন্ধন করেছেন। এর আগে থেকেই কালাম ও বাবুর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলে আসছিল। এর আগে নির্বাচনের শুরু থেকেই কালাম অপর প্রার্থী বাবুকে সন্ত্রাস চাঁদাবাজ ধান্ধাবাজ আখ্যায়িত করে আসছিলেন। এসব বিষয়ের মাঝে সিনিয়র নেতাদের অসম্মান করে শিষ্টাচার না মেনে নানা ধরণের বক্তব্য দিচ্ছেন জুনিয়র নেতারা।
গাজীর মত যারা বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে নির্যাতনের শিকার, সেই সময় যারা শিশু তারাও আজকে গাজীর মত নেতাদের নিয়ে অকথ্য অশ্রাব্য ভাষায় বক্তৃতা দিচ্ছেন। ভোট যুদ্ধের চেয়ে এখানে ব্যক্তিগত রেশারেষি ও আক্রোশ অনেকের বক্তব্যে ফুটে ওঠেছে। অনেকে দাবি করছেন সামনে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীকে দমাতে একজন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী কৌশল নিয়েছেন গাজীর বিরোধীতার জন্য। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে উপজেলা নির্বাচনকে ব্যবহার করছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মাঝে যেনো মহাযুদ্ধ!