সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা একের পর এক দল ত্যাগ করে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করছেন। ফলে ছোট হয়ে আসছে সোনারগাঁও বিএনপি। যার প্রধান কারন সোনারগাঁয়ে যখন আজহারুল ইসলাম মান্নানের কব্জায় চলে গেছে বিএনপির রাজনীতি তখন মান্নানের প্রতি তীক্ত বিরক্ত হয়ে দল ছাড়ছেন নেতাকর্মীরা। এখানে মান্নানের নেতৃত্ব মানতে নারাজ বিএনপির নেতাকর্মীরা। নতুন নেতৃত্বেও দেখা মিলছেনা সোনারগাঁয়ে। অনেক নেতারা উকি ঝুঁকি দিলেও বিপদের আভাস দেখলেই নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। ফলে ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা অনেক ভাল’ বাগধারার মত অবস্থা সোনারগাঁও বিএনপির। যে কারনে যারা একেবারেই মান্নানের নেতৃত্ব মানছেন না তারা দল ছাড়ছেন। আবার যারা দল ছাড়তে পারছেন না তারা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। যে কারনে নেতাকর্মীরা বলছেন মান্নানের কব্জায় ছোট হয়ে আসছে সোনারগাঁও বিএনপি।
গত ৩ মে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার হাত ধরে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করেছেন পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ জামান, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ও তার ভাই যুবদল নেতা খোরশেদ আলম, কাঁচপুর ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সেক্রেটারি মোহাম্মদ হানিফ, তাঁতীদল নেতা মজিবুর রহমান, ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক টিটু সহ শতাধিক নেতাকর্মীরা। এর আগে এমএ জামান শারীরিক অসুস্থ্যতার কারন দেখিয়ে পৌর বিএনপির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
যোগদানকারী নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিমের সঙ্গে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তবে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে টিটু ও হানিফের যোগদানের বিষয়টি। কারন দুটি পরিবারই বিএনপির রাজনৈতিক পরিবার হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে হানিফের বড় ভাই সেলিম হক রুমি জেলা বিএনপির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, যুবদলের রাজনীতিতে শামীম ও আপেল, ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত ইকবাল হক। তাদের পিতা কাচপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজল হকও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। কিন্তু এই পরিবারের সদস্য হানিফ গেল জাতীয়পার্টিতে। আবার টিটুর বড় ভাই হারুন অর রশীদ মিঠু জেলা যুবদলের সহ-সভাপতির পদে রয়েছেন। এর আগে তিনি জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তার ছোট ভাই রিতুকেও বিএনপির বিভিন্ন মিটিং মিছিলে দেখা গিয়েছিল। তাদের পিতা সালাউদ্দীনও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। গত নির্বাচনের আগে দুটি পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা নাশকতার মামলায় আসামি হয়। সেলিম হক রাজনীতি করেন মান্নানের বলয়ে। ফলে আরও বেশি সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে সোনারগাঁও বিএনপির রাজনীতিতে।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন রেজাউল করিম। সোনারগাঁও আসন থেকে একাধিকবার এমপি নির্বাচিতও হয়েছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এক সময়কার প্রতাপশালী এই রাজনৈতিক গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। বয়সও হয়েছে তার বেশ। সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতেও আগের মত নেই তার প্রভাব প্রতাপ। ফলে তার বলয়ের নেতাকর্মীরা বেশ হতাশ। মান্নানের নেতৃত্বও তারা মানতে পারছেন না। ফলে রেজাউল করিমের লোকজন দল ত্যাগ করে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পান উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর ও সেক্রেটারি আজহারুল ইসলাম মান্নান। চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়ার আগে দুজনকেই মনোনয়ন দাখিলের নির্দেশনা থাকলেও খন্দকার আবু জাফর মনোনয়ন পত্র জমা দেননি। ওই সময় জাফর মিডিয়াতে মান্নানকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, যে নমিনেশন উচ্চারণ করতেই জানেনা, তার ড্যামী প্রার্থী হওয়ার চেয়ে মনোনয়ন পত্র জমা না দেয়াই ভাল। তাই জমা দেইনি।’
নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী হয়ে মান্নান রেজাউল করিমের বাসায় গিয়ে দোয়া চেয়ে আসলেও রেজাউল করিমের লোকজন ধানের শীষের পক্ষে কাজ করেননি। বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা মান্নানের পক্ষে মাঠে নামেননি। নির্বাচনে মাত্র একদিন খন্দকার আবু জাফরকে মান্নানের সঙ্গে সনমান্দি ইউনিয়নের গণসংযোগে দেখা যায়। নির্বাচনের পর খন্দকার আবু জাফরকে আর রাজনীতিতে দেখা যায়নি। এমনকি সোনারগাঁয়ের বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে তার কোন বৈঠক সভাও দেখা যায়নি। একইভাবে মান্নান কিছুদিন আড়ালে থাকলেও সোনারগাঁয়ের রাজনীতির মাঠে ফিরে এসেছেন। সোনারগাঁয়ের বিএনপি সহ জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অনেক কমিটিতে তার লোকজনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এছাড়াও ২০০৮ সাল থেকেই সোনারগাঁয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের বাসনা প্রকাশ করে আসছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল। তিনি সোনারগাঁয়ের সন্তান হলেও রাজনীতি মুলত তার মহানগর কেন্দ্রীক। ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সোনারগাঁয়ে পদচারণায় এটিএম কামালকে দেখা গেলেও নির্বাচনের পর সোনারগাঁয়ে তার পদচারণাও নাই। তিনি বর্তমানে দেশেই নাই। তিনি চলে গেছেন আমেরিকায়। এর আগেও তিনি অসুস্থ্যতার ভান ধরে আমেরিকায় চলে যান। নির্বাচনের আগে ফিরে আসলেও আবারো তিনি দলকে পানিতে ভাসিয়ে সূদূর আমেরিকা প্রবাসী। গত নির্বাচনে সোনারগাঁ থেকে মনোনয়ন পত্রও সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
একইভাবে ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচনের আগেই মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে নিজেদের দাবি করে মাঠে নেমেছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ওয়ালিউর রহমান আপেল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আজিজুল হক আজিজ। এরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ব্যানার পোস্টার ফ্যাস্টুনে বেশ আলোচিত ছিলেন এই তিন নেতা। তার চেয়ে কিছুটা কম ছিল গত নির্বাচনে। দলের মনোনয়নও কিনেছিলেন। তবে মনোনয়ন নেননি আজিজুল হক আজিজ। এসব নেতাদের এখন সোনারগাঁয়ে ছায়াও দেখা যাচ্ছেনা। তবে ওয়ালিউর রহমান আপেল নির্বাচনের আগেই মাঠে নামেন এবং জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন বলেও এলাকায় গণসংযোগ করতে গিয়ে দাবি করেন। কখনও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বন্ধু আবার কখনও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ভাবি সম্বোধন করে এলাকার নেতাকর্মীদের কাছে টানার চেষ্টা করেন। কিন্তু দলের হাল ধরার মত কার্যক্রমে তিনিও কখনও ছিলেন না।
এসব কারনে নেতাকর্মীরা বলছেন, সোনারগাঁয়ে রেজাউল করিম তার বয়সের কারনে রাজনীতি থেকে পিছু হটলে এখানে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। কারন মান্নানের নেতৃত্ব মানতে নারাজ বিএনপির মাঠ পর্যায়ের যোগ্য নেতাকর্মীরা। নতুনরা নেতৃত্বে আসার চেষ্টা করলেও পকেট ভারি না থাকায় আবার পিছিয়ে যাচ্ছেন। সোনারগাঁয়ে নেতাকর্মীদের টু পাইস দিয়ে নিজের বগল বন্ধি করতে পারদর্শী আজহারুল ইসলাম মান্নান। ফলে সোনারগাঁয়ের বিএনপির রাজনীতি মান্নানের কব্জায় থাকলেও ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে সোনারগাঁয়ের বিএনপি। মান্নানের নেতৃত্বের কারনে এখানে বিএনপি জনপ্রিয়তাও হারাচ্ছে বলেও দাবি করছেন নেতাকর্মীরা। আর তার কারনেই দল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।