সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার একটি ডাকাতি মামলায় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আব্দুল কবির বাবুর বিরুদ্ধে সি.ডব্লিউ ইস্যূ (কাস্টডি ওয়ারেন্ট) করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দাযরা জজ দ্বিতীয় আদালত। ৮ মে বুধবার সকালে আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে ডাকাতি মামলায় সদর থানা পুুলিশ কাউন্সিলর বাবুকে আসামি করে একটি সম্পূরক চার্জশিট আদালতে দাখিল করলে আদালত তা গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। কাউন্সিলর বাবু বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান।
মামলা সূত্রে জানাগেছে, ২০১৩ সালের ১১ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের শাহসুজা রোডের জল্লারপাড় সালাউদ্দীনের বাড়ির ভাড়াটিয়া মৃত হোসেন আলীর ছেলে রাজ্জাক ওরফে আব্দুস সালামের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাত সোয়া ৮টায় তারাবী নামাজ পড়ার জন্য পাশর্^বতী মসজিদে যান রাজ্জাক। তার ভাড়া বাসায় তার ম্যানেজার রাসেলের পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বললে তার স্ত্রী দরজা খুলে দেন। ওই সময় ৪ জন বাদীর স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ১০ লাখ টাকা কোথায় আছে জানতে চায়। রাজ্জাকের ছেলের বৌয়ের শিশু কন্যার গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে চাবি নিয়ে আলমারী থেকে ২টি স্বর্ণের চেইন, ২টি স্বর্ণের বালা, ২টি স্বর্ণের কানের দুল, ৫টি স্বর্ণের আংটি যার ওৎন ৬ ভরি, যার মুল্য ৩ লাখ টাকা, ৫০ হাজার টাকার সমপরিমান ইউরো বাংলাদেশী ৮’শ টাকার সমপরিমান ভারতীয় রুপি মানিব্যাগে নগদ টাকা, একটি নকিয়া সেট, একটি স্যামসাং সেট, একটি সেমফনি সেট নিয়ে যাওয়ার সময় রাজ্জাকের ছেলে সাদ্দাম হোসেন রাজু আটকানোর চেষ্টা করলে তাকে ছুড়িকাঘাত করে আসামিরা। ওই সময় আশপাশের লোকজন চিৎকার শুনে এগিয়ে এসে রাসেল নামে একজনকে আটক করে গুপিটুনি দেয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ রাসেলকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাজ্জাক বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সম্পূরক চার্জশিটে উল্ল্যেখ করা হয়, তৎকালীন সদর থানার ওসি মামলাটি তদন্তের জন্য এসআই আতাউর রহমানকে দায়িত্ব দেন। বদলিজনিত কারনে পরবর্তীতে মামলাটি এসআই আবুল বাশার, এসআই আনোয়ার হোসেন, এসআই আব্দুল রাজ্জাক এবং সর্বশেষ এসআই উত্তম কুমার মামলাটি তদন্ত করে ১২ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে এবং ৪ জন আসামিকে অব্যাহতির আবেদন করে আদালতে গত ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল একটি চার্জশিট দাখিল করেন। ওই অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা ভবিষৎে অব্যাহতিপ্রাপ্ত আসামিদের নাম ঠিকানা পাওয়া গেলে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হবে মর্মে উল্ল্যেখ করেন।
সম্পূরক চার্জশিট দাখিলে সদর মডেল থানা পুলিশের এসআই ছাইফুল ইসলাম উল্ল্যেখ করেন, আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামি ঝন্টু, দেলোয়ার হোসেন দেলু ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। ডাকাতিকৃত মালামাল তারা ডিস বাবুর কার্যালয়ে নিয়ে যায় বলে আদালতে জবানবন্দিতে প্রকাশ করে। তারা আদালতে ডিস বাবুর নাম উল্ল্যেখ করে।
অব্যাহতিপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানতে পারেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল কবির বাবুই হলো ডিস বাবু ওরফে মাওরা বাবু। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জে আর কোন ডিস বাবুর অস্তিত্ব নেই বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্ল্যেখ করেন।
এ ঘটনায় এসআই ছাইফুল ইসলাম গত ২০ এপ্রিল আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। পরে আদালতের অনুমতি পেয়ে গত ৩০ এপ্রিল আব্দুল করিম বাবুকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। আদালতে তা গ্রহণ করে আসামি আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবু ওরফে মাওরা বাবুর বিরুদ্ধে কাস্টডি ওয়ারেন্ট জারি করেন।
এদিকেজানাগেছে, ১৮ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবুকে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিস বাবু নারায়ণগঞ্জে স্যাটেলাইট কেবল ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করেন।
গত ২৩ মার্চ ভুক্তভোগী মো. হাসান ব্যবসায়ী বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। হাসান জানান, বন্দর সোনাকান্দা হতে আলীনগর হয়ে প্রায় কয়েক লাখ টাকার ডিস লাইনের ক্যাবল সহ সরাঞ্জমাদি কেটে নিয়ে গেছে ফরাজীকান্দা এলাকার সন্ত্রাসী সজিব গং। ডিসের ক্যাবল কাটার কারণে প্রায় ২ হাজার গ্রাহক ডিস লাইনের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ঘটনায় বাবু ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। এর পর ফতুল্লা মডেল থানায় ডিস বাবুর বিরুদ্ধে আরও দুটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করা হয়।